ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে পৌনে দুই কোটি পরিবার

প্রকাশিত: ১২:১৯, ২৪ জুলাই ২০১৯

উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে পৌনে দুই কোটি পরিবার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুই বছর আগেও সন্তানের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য কয়েক মাইল দূরে গিয়ে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে সারাদিন বসে থাকতে হতো মায়েদের। যে টাকা পেত তার একটা বড় অংশই খরচ হয়ে যেত যাতায়াতে। এখন দিন বদলেছে। এখন মাস শেষেই উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের ১ কোটি ৭৮ লাখ মায়ের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে। নিজের সময়, সুযোগ, প্রয়োজনমতো তুলে নিতে পারছেন উপবৃত্তির অর্থ। আর এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা এবং এই ইচ্ছা বাস্তবায়নে রূপালী ব্যাংকের উদ্যোগের কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মায়েদের দুর্ভোগ লাঘব করতে চেয়েছিলেন। জনবল ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর এই ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসে রূপালী ব্যাংক। শিওরক্যাশ নামক মোবাইল ব্যাংকিং প্লাটফরমের মাধ্যমে শুরুতেই ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর প্রায় ১ কোটি মায়ের হিসাব খুলে দেয় রূপালী ব্যাংক। এখন এই হিসাব ১ কোটি ৭৮ লাখে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুর্ভোগ লাঘবের কারণে প্রায় দুই কোটি পরিবারে শেখ হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে নিঃসন্দেহে। আর সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন বলেন, রূপালী ব্যাংকের এ উদ্যোগের মাধ্যমে ১ কোটি মা, ১ কোটি বাবা এবং ১ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীর একটি ডাটাবেজ পাওয়া গেছে। এই তথ্য বই ছাপানো, শিক্ষার মান পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে ব্যবহার করা যাচ্ছে। প্রকৃত তথ্য হাতে না থাকার কারণে আগে আমাদের প্রচুর টাকা অপচয় হতো। নানা জটিলতাও দেখা দিত। এখন বিশাল ডেটাবেজ হাতে আসায় সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাসিক একটি নির্দিষ্ট হারে উপবৃত্তি দিচ্ছে। বছরে এই বাবদ বিতরণ হচ্ছে ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। এই উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয় শিক্ষার্থীর মাকে। এ জন্য আগে মায়েদের নামে কার্ড ইস্যু করা হতো। প্রতিবার টাকা দেয়ার জন্য কোন এলাকার পাঁচ-ছয়টি স্কুলকে নিয়ে একটি বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করা হতো। নির্ধারিত দিনে ব্যাগে করে টাকা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে বিতরণ করতেন। মায়েরা দূর-দূরান্ত থেকে নানা ভোগান্তি সহ্য করে এসে টাকা নিয়ে যেতেন। ঠিকভাবে এসব উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ারও অভিযোগ ছিল বিস্তর। আয়োজনের বিড়ম্বনার জন্য টাকা দেয়া হতো কয়েকমাস পর পর। উপবৃত্তির টাকা নিতে এ ভোগান্তি দূর করতে উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনা সরকার। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে অর্থ পৌঁছে দেয়ার। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করে রূপালী ব্যাংক। একবারে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মাকে উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর মাধ্যমে ২০১৭ সালের ১ মার্চ এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চিনিকলের কাছে আখচাষীদের পাওনা পৌঁছে দিয়ে আসছে রূপালী ব্যাংক। পাশাপাশি চিনিকল থেকে দেয়া ঋণের অর্থও পৌঁছে যাচ্ছে কৃষকের রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ হিসাবে। এতে কৃষকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে যেমন রক্ষা পেয়েছেন, তেমনি সময় মতো পেয়ে যাচ্ছেন টাকা। রূপালী ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নয়, সোশ্যাল সেফটিনেটের আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ যত প্রকার ভাতা আছে সবই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হবে সুবিধাভোগীদের কাছে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সোশ্যাল সেফটি নেটের সকল ভাতা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই। এ জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া রয়েছে। আশা করছি, সামনের দিনে আমরা সকল ভাতা সুবিধাভোগীদের মোবাইল হিসাবে পৌঁছে দিতে পারব।
×