ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

রক্ষণশীল ভাবধারা বিশ্বব্যাপী সঙ্কটে

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২৪ জুলাই ২০১৯

রক্ষণশীল ভাবধারা বিশ্বব্যাপী সঙ্কটে

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন উদারপন্থী ভাবধারাকে সেকেলে এবং অচল আখ্যায়িত করেছেন। ‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস্’ পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন উদারতাবাদ মানেই হলো অভিবাসন, বহু সংস্কৃতি ও লিঙ্গ রাজনীতি যা কিনা তার ভাষায় হাস্যকর। পুতিনের এই বক্তব্য থেকে একটা জিনিস বেরিয়ে আসে। তা হলো রক্ষণশীল ভাবধারার বিরোধিতা বস্তুতপক্ষে পাশ্চাত্যে যে ভাবধারাটি এখন সবচেয়ে হুমকির মুখে তা হলো এই রক্ষণশীলতা। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থার দেশগুলোতে দক্ষিণপন্থীরা ক্ষমতায় আছে বটে তবে যেসব মূল্যবোধের কারণে তারা দক্ষিণপন্থী হিসেবে পরিচিত সেগুলোকে বিসর্জন দিয়েছে। বহুদলীয় দেশগুলোতে মধ্য দক্ষিণপন্থীদের শক্তি ও অবস্থান দুর্বল হয়েছে যেমন জার্মানি ও ইতালিতে। হাঙ্গেরীর মতো অন্য যেসব দেশে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য বেশি দিনের নয় সেখানে দক্ষিণপন্থীরা রক্ষণশীলতাকে আশ্রয় না করে সরাসরি জনতুষ্টিবাদে গিয়ে ভিড়েছে। বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র হিসেবে রক্ষণশীলতা তেমন কোন দর্শন নয়। চিরায়ত উদারতাবাদের মতো রক্ষণলীশতা হলো আলোকায়নের ফসল। উদারপন্থীরা বলে যে স্বাধীনভাবে ক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের তরফ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। কিন্তু রক্ষণশীলরা বিশ্বাস করে যে সমাজ ব্যবস্থা আগে সৃষ্টি হয় এবং সেটাই স্বাধীনতার অবস্থাবলী তৈরি হয়। রক্ষণশীলতা পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ এবং মন্থর করে দেয়ার জন্য পরিবার, গির্জা, ঐতিহ্য ও স্থানীয় সংঘের কর্তৃত্বের মুখাপেক্ষী হয়। প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা মানে রক্ষণশীলতা ধ্বংস করা, আর খোদ রক্ষণশীলতার ওপর এ ধরনের আঘাত আসছে এবং সেটা আসছে দক্ষিণপন্থীদের দিক থেকে। নব্য দক্ষিণপন্থীরা রক্ষণশীলতারা বিবর্তন নয় বরং রক্ষণশীলতাকে তারা বর্জন ও অস্বীকার করে। তারা কিভাবে একের পর এক রক্ষণশীল ঐতিহ্য ধ্বংস করছে তা লক্ষণীয়। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাই দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। রক্ষণশীলতা বাস্তবতামুখী। কিন্তু নব্য দক্ষিণপন্থীরা দাম্ভিক ও সত্যের প্রতি রূঢ়। অস্ট্রেলিয়ায় নব্য দক্ষিণপন্থীরা ক’দিন আগে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছে। খরা যে সে দেশের এক কঠিন সমস্যা সেটাকে তারা গ্রাহ্য করে না। ইতালিতেও নব্য দক্ষিণপন্থীদের দাপট। রক্ষণশীলতা পরিবর্তনের ব্যাপারে সতর্ক। কিন্তু দক্ষিণপন্থীরা বিপ্লবের কথা ভাবলেও তাদের সেই ভাবনাটা ভাসা ভাসা। তারা রক্ষণশীলতার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়ে সেটিকে রেডিক্যাল রূপ দান করেছে। তবে সবকিছুই যে নব্য দক্ষিণপন্থী দলগুলোর পথে চলছে তা নয়। অন্তত পক্ষে ব্রিটেন ও আমেরিকায় ডেমোগ্রাফি বা জনমিতি তাদের অনুকূলে নয়। এই দেশ দুটোর ভোটাররা শ্বেতাঙ্গ এবং অপেক্ষাকৃত বয়স্ক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দক্ষিণপন্থীমুক্ত এলাকা। গত বছর পিউর জরিপ অনুযায়ী আমেরিকার ৫৯ শতাংশ মিলেনিয়াম ভোটার ডেমোক্র্যাট এবং ৩২ শতাংশ ভোটার রিপাবলিকান। তরুণ জনগোষ্ঠী আরও বড় হলে দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে নব্য দক্ষিণপন্থীরা আলোকিত রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্পষ্টতই জয়লাভ করছে। চিরায়ত উদারপন্থীদের জন্য এটা একটা দুঃখের কারণ, ড্রাগ, যৌন স্বাধীনতার মতো অনেক বিষয়ে রক্ষণশীল ও উদারপন্থীদের মধ্যে মতানৈক্য আছে তবে অনেক বিষয়ে তারা পরস্পরের মিত্র। রক্ষণশীল ও উদার পন্থীরা অনেক সময় একে অপরের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যটি বের করে আনে। রক্ষণশীলতা উদারপন্থী উদ্দীপনাকে সংযত রাখে। আবার উদারপন্থীরা রক্ষণশীলদের আত্মতুষ্টিকে ম্লান করে দেয়। অন্যদিকে নব্য দক্ষিণপন্থীরা চিরায়ত উদারতাবাদ রক্ষণশীলতা উভয়ের প্রতি বৈরী দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থীরা রাজনীতিকে যেভাবে উত্তপ্ত করে তুলছে তাতে মধ্যপন্থীদের কোণঠাসা হয়ে পড়ার এবং দুই চরম পন্থার দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভোটারদের সামনে তখন আর বেছে নেয়ার মতো কোন পথ থাকে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×