ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাগরে জেলেদের জালে ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২৭ জুলাই ২০১৯

সাগরে জেলেদের জালে ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে আসতে শুরু করেছে সাগরে জেলেদের জালে ধরা পরা ইলিশ। শনিবার সকালে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডস্থ একমাত্র বেসরকারী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে সামুদ্রিক ইলিশ নিয়ে দশটি ফিশিং বোট নোঙর করেছে। ফিশিং বোটের জেলে আব্দুর রহিম জনকণ্ঠকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আমরা সাগরে মাছ ধরেতে নেমেছি। সাগরে ভালোই ইলিশ ধরা পরছে। বোটের মাঝি আব্দুল করিম জানান, সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ভালো মাছ ধরা পরবে। বোট মালিক ও জেলেদের অভিযোগ, বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় প্রচুর ইলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এতে দেশের মৎস্য খাত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সাগরে জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ার কথা জানিয়ে পোর্ট রোডের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, যতদূর খোঁজ পেয়েছি সাগরে ইলিশ ধরা পরছে। শনিবার সকালে বরিশাল ঘাটে সাগর থেকে দশটি ফিশিং বোট ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে। তবে আরও বেশি ফিশিং বোট মাছ নিয়ে বাজারগুলোতে পৌঁছালে বাজারে ইলিশের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে দরও কমে আসবে। তবে এজন্য আরও ৪/৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার সকালে গোটলা সাইজের ইলিশের দর ছিল প্রতিমন ১৮ থেকে ২০ হাজার, ভেলকা সাইজের ২৫ থেকে ২৬ হাজার, এলসি সাইজের (ছয় থেকে নয়’শ গ্রাম ওজন) ৩৫ হাজার, এক কেজি সাইজের ৪৫ হাজার, এক কেজির ওপরে ৫৫ হাজার এবং দেড় কেজি ওজনের হলে প্রতিমন এক লাখ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ পূর্বে বাজারে গোটলা সাইজের ইলিশের দর ছিল প্রতিমন ২৫ হাজার, ভেলকা সাইজের ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার, এলসি সাইজের ৫২ হাজার, এক কেজি সাইজের ৬০ হাজার এবং দেড় কেজি ওজনের প্রতিমন ইলিশ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জনকণ্ঠকে জানান, নিষেধাজ্ঞার সুফল জেলেরা পেতে শুরু করেছে। সাগরে আশানুরূপ মাছ ধরা পরছে। সময়ের সাথে সাথে বাজারেও ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরছে ইলিশ। গত দু’দিন ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো আলীপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দরের আড়তগুলোতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। কাঙ্খিত রূপালি ইলিশ ধরা পরায় হাসি ফুটেছে জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মাঝে। স্থানীয় মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ীরা ইলিশ সংগ্রহ করে পিকআপ ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় উপকূলীয় জেলে পল্লী ও আড়তগুলোতে আনন্দের জোয়ার বইছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে স্থানীয় আড়তগুলোতে গ্রেড অনুযায়ী প্রতিমণ ইলিশ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গভীর সমুদ্রে জেলেদের সাইনজালসহ অগভীর জলে খুটা জালেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পরছে। শনিবার সকালে চট্টগ্রামের এফ বি টিপু-২ নামের একটি ট্রলার ১০৫ মণ ইলিশ মাছ বিক্রি করেছে। এছাড়া একই মালিকের এফ বি টিপু-৩ ১৫৮ মণ ইলিশ মাছ নিয়ে তীরে এসেছে। তারা মহিপুর মৎস্য আড়তে প্রতিমণ ইলিশ ২২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছে। মৎস্য অধিদফতরের কার্যকরী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। কুয়াকাটার ঝুমা ফিসের মালিক সোবাহান মৃধা বলেন, কিছুদিন ধরে খুটা জালেও ইলিশ মাছ ধরা পরছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জেলেদের জালে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পরায় প্রচুর মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। এভাবে মাছ ধরা পরলে জেলেরা লাভের মুখ দেখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দাস জানান, সন্তোষজনক মাছ ধরা পরছে। এভাবে মাছ ধরা পরলে দায়দেনা মুক্ত হবে মৎস্যজীবীরা। তবে ইলিশের দাম কিছুটা কমে গেলেও জেলেরা বেজায় খুশি। গভীর সাগর থেকে প্রতিটি ট্রলার ভর্তি করে মাছ নিয়ে ঘাটে আসছে। এ কারণে মৎস্যবন্দর প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সূত্রমতে, মৎস্য অধিদফতরের কার্যকরী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনায় (প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের ভিজিএফ/পুনর্বাসন) বিশেষ করে নৌবাহিনী, কোস্টকার্ড, পুলিশ, প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতায় দেশে ব্যাপকহারে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরছে।
×