ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবারও পোশাকখাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৭:২১, ৮ আগস্ট ২০১৯

 শনিবারও পোশাকখাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদুল আযহা সামনে রেখে আগামীকাল শনিবারও পোশাকখাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া হবে। এলক্ষ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর, পোশাকখাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ থেকে সব ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের সুবিধার্থে আজ শুক্রবার এবং ১০ আগস্ট শনিবার শিল্প এলাকার ব্যাংক খোলা থাকবে। এছাড়া মিরপুর, সাভার ও গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের যেসব কারখানায় এখনো জুলাই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেয়া হয়নি তাদের আজ ও শনিবারের মধ্যে পরিশোধে তাগিদ দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। এদিকে, শ্রম মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করে বলেছে, ঈদুল আযহা সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস হয়ে গেছে। বাকি ৫ শতাংশ পোশাকখাতের মালিকরা শনিবারের মধ্যে বেতন ও বোনাস দিয়ে দেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ফলে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে কোন প্রকার অসন্তোষের আশঙ্কা নেই । শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়েছে, শ্রমিক-মালিক সু-সম্পর্ক বিদ্যামান থাকায় এবং মালিক-শ্রমিক সকলের সহযোগীতায় শ্রমিকরা আগামী ঈদুল আযহা সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারবে বলে আশা করছে সরকার এছাড়া বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, সারাদেশে সদস্যভুক্ত চলমান কারখানা সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০টি। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ কারখানার শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে বাকি পাঁচ শতাংশও পরিশোধ হবে। এছাড়া বিজিএমইএ’র তালিকাভূক্ত কারখানাগুলো ১০ আগস্ট শনিবারের মধ্যে জুলাই মাসের বেতন প্রদান করবে। ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে বেশির ভাগ পোশাক কারখানা বেতন প্রদান শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ঈদের ছুটির আগেই সব কারখানার মালিক শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ করবেন। জানা গেছে, বিকেএমইএ সদস্যভূক্ত চলমান কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৮৩টি। বুধবার পর্যন্ত ৯২ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের বোনাস প্রদান করেছে। বাদবাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আজ কালের মধ্যে পরিশোধ করবে। এছাড়া বিকেএমইএ এর সদস্যভূক্ত কারখানাগুলোর শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতনও প্রায় ৫০ শতাংশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবারের মধ্যে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন-বোনাস পরিশোধ হবে বলে আশা করছে বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ। এদিকে, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শকগণ জানিয়েছেন বেতন-বোনাস নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরিবেশ পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে। তবে বেতন বোনাস নিয়ে মিরপুর, সাভার ও গাজীপুরের বেশকিছু কারখানায় অসন্তোষ রয়েছে বলে দাবি করেছে পোশাকখাতের শ্রমিক নেতারা। তাদের মতে, ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে মিরপুর ও সাভারে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ না হলে যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঈদ উদযাপনে মানবিক কারণে হলেও জুলাই মাসের বেতন ও বোনাস ছুটির আগেই দিয়ে দেয়া হোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক নেতা বলেন, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কোন সমস্যা তৈরি হয় না। ঈদ সামনে রেখে এই কমিটির দুটো বৈঠকেই মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা ঈদের আগে বেতন ও বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাহলে এখন কেন টালবাহানা করা হচ্ছে? তিনি বলেন, বেশির ভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস ঠিকমতো হয়। কিন্তু মালিকদের একটি অংশ ঈদ আসলে বেতন- বোনাস নিয়ে ঝামেলা তৈরি করে। এরা প্রতিবছর এটা করছে। এরফলে পুরো শিল্পখাতের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, বেতন-বোনাস যারা নিয়মিত দেয় না তাদের এই ব্যবসায়ে না থাকাই ভাল। কাজ করাতে হলে শ্রমিকদের বেতন আগে নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে, ঢাকার উপ-মহাপরিদর্শক আহমেদ বেলাল এবং গাজীপুরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বোনাস প্রদানের যে হারের কথা বলেছেন সে হার কিছুটা কম। বোনাস পরিশোধের হার গত বুধবার পর্যন্ত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ হবে আর জুলাই মাসের বেতন শতকরা প্রায় ৪০ শতাংশ দেয়া হয়েছে। বাকি শ্রমিকদের বেতন আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবারের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে জানানো হয়েছে। উপ-মহাপরিদর্শকগণ জানিয়েছেন, কলকারখানা পরিদর্শকগণ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মনিটর করছে। এবারের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভাল। সকলের সহযোগীতায় শ্রমিকরা সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন। উল্লেখ্য বিজিএমইএ তাদের তালিকাভূক্ত পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের ছুটি আগামী ১০ এবং ১১ আগস্ট দুই ধাপে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের সুবিধার্থে আজ এবং ১০ আগস্ট (শুক্র ও শনিবার) শিল্প এলাকার ব্যাংক খোলা থাকবে।
×