ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১০ আগস্ট ২০১৯

‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত

অনলাইন ডেস্ক ॥ সারা বিশ্ব থেকে সৌদি আরবে সমবেত হওয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মিনা থেকে আরাফাত ময়দানে পৌঁছেছেন হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিতে তাদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিদায় হজের স্মৃতি বিজড়িত এই ময়দান। সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিশ্বের ১৭২টি দেশের প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার। হজের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে সৌদি আরবে হাজির হওয়া মুসলমানরা বৃহস্পতিবার থেকে জড়ো হতে শুরু করেন কাবা শরিফ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তাবুনগরী মিনায়। শুক্রবার সারা দিন ও রাত তারা সেখানে কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করবেন, নামাজ পড়েন জামাতের সঙ্গে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য শনিবার ভোরের আগেই তারা সমবেত হতে থাকেন প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবেন। চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের কাছে পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন; হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন। সৌদি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মসজিদে নামিরাহ থেকে এবার হজের খুতবা পড়বেন শেখ মুহাম্মদ বিন হাসান আল-শাইখ। এ খুতবা রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বময়। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪ শ’ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ। এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হচ্ছে স্বল্প সময়ের জন্য। ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ। প্রতিবছরের মতো এবারও হজের দিন ভোরে কাবা আচ্ছাদিত করা হয় নতুন গিলাফে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সভাপতি শেখ আবদুল রহমান বিন আবদুল আজিজ আল-সুদাইসের তত্ত্বাবধানে শনিবার ফজরের নামাজের পর নতুন গিলাফ পরানো হয়। সৌদি আরবের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আরাফাতের ময়দান ও আশপাশের এলাকায় শনিবার তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মত। বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ১৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার। আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে শনিবার সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হবে। রবিবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর ঈদের সকালে কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। আরব নিউজ লিখেছে, যারা হজে এসেছেন, বিশ্বের নানা প্রান্তের বাসিন্দা তারা। তবে সবার কাছেই এ অভিজ্ঞতা জীবনের অনন্য সাধারণ এক ঘটনা। আরব নিউজ জানিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনসহ হজযাত্রীদের সেবায় পবিত্র দুই মসজিদের রক্ষক বাদশাহ সালমান এবার ১৩০টির বেশি উদ্যোগ নিয়েছেন। নিরাপদ হজ নিশ্চিত করতে এবছর ১০ হাজারের বেশি নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বে রয়েছেন ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। তারা হজযাত্রীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রবেশ পথের চৌকি বসিয়ে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেবেন। হজযাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য ১৮০টি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার প্রস্তুত করে রেখেছে সৌদি সরকার।
×