ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের দ্বিগুণ ঋ্রণ

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১০ আগস্ট ২০১৯

গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের দ্বিগুণ ঋ্রণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে দ্বিগুণ ঋণ নিয়েছে। এই ঋণের পরিমান প্রায় ৫৯ হাজার কেটি টাকা। সরকার গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। বছর শেষে এ খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমান দাড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা; যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমন গ্রাহকরাও ঝুঁকছেন সঞ্চয়পত্রের দিকেই। ব্যাংকের আমানত তুলে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। যদিও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্প্রতি টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করাসহ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সুদ ও আসল পরিশোধের পর শুধু গত জুনে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণ গিয়ে ঠেকেছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকায়। এসব ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে বছরে বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে। সেখান থেকে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাংক আমানতের সুদহার নিম্নমুখী। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থাও কিছুটা কমেছে। ফলে সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাস হওয়া বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। বিশাল এই ঘাটতি মেটাতে এবার জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক খাত থেকেও সরকার ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। এদিকে, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকার ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করেছে। ১ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে শৃঙ্খলা আনতে একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদফতর, পোস্ট অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ সবাই এখন অভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ফলে কেউ নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে তা ধরা পড়ছে। তবে তাতেও কমছে না সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। যদিও বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের চালু করা ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো হলো ৫ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৫ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র, ৫ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং ৩ বছর মেয়াদি ও ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এগুলোর গড় সুদের হার ১১ শতাংশের বেশি।
×