ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১১ আগস্ট ২০১৯

 ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে বন্যার্ততের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়ার কাজটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ। কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্নের জন্য মাঠপর্যায়ে চাই সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া। বর্তমান সরকার জনগণের কল্যাণে নিবেদিত বলেই মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তাই দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। এমন একটি সময়ে বন্যাত্রাণ ও পুনর্বাসনে সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে, যখন ঢাকাসহ অনেক জেলায় ডেঙ্গুরোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ফলে কাজটি একটু কঠিন হয়ে উঠেছে। বন্যার কারণে ১১শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেশের ৩১ জেলায় আউশ, আমন ও আমনের বীজতলা এবং গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ২৮৯ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল। আমনের বীজতলা ভেসে গেছে বন্যার তোড়ে। এ ছাড়াও পাট মরিচ আখ জাতীয় ফসল ডুবেছে পানিতে। এতে বন্যাদুর্গত কৃষকরা অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হলো মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা আর উৎসাহের কারণে অনেক জায়গায় পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে চাষাবাদ। দেশের অনেক এলাকায় এখন আমনের প্র্স্তুতিও চলছে। বন্যার ক্ষতি সীমাহীন। দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। তবে আশীর্বাদও আছে। তাতে পলিমাটি পড়ে উর্বরতা বেড়ে যায় কৃষি জমির। বন্যার কারণে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ধুয়ে মুছে যায়। এক নির্মল রূপ ধারণ করে গ্রামীণ প্রকৃতি। সে কারণে যে বছর বন্যা হয় তার পরের বছর ফসল ভাল হয়। কৃষক তার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অধিক আগ্রহে মাঠে কাজ করে। কৃষিতে সে বিনিয়োগ বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৮-৯৯ সালের বন্যার পর ১৯৯৯-২০০০ সালে বাম্পার ফলন হয়েছিল সকল কৃষিপণ্যের। বিশেষ করে খাদ্যশস্যের। দেশ হয়েছিল চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তেমনি ২০০৭-০৮ সালের বন্যার পর ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ সালে বাম্পার ফলন হয়েছিল খাদ্যশস্যের। জাতিসংঘের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু গবাদি পশু ও পোলট্রি খাতে এবার ক্ষতি হয়েছে ৭০৪ কোটি টাকার বেশি। আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ লাখ মানুষ। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন সঠিকভাবে না হলে নিশ্চিত করে বলা যায়, এতে আমাদের উন্নয়ন ধারা ব্যাহত হবে। সরকার ইতোমধ্যেই পুনর্বাসনে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বন্যায় ফসলের ক্ষতির পুনর্বাসনের সঙ্গে সঙ্গে গবাদি পশু ও মৎস্যচাষীদের ক্ষেত্রেও যথাযথ পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাদের জন্যও প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। আমাদের পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর কোন বিকল্প নেই। অনেক এলাকায় গবাদি পশুর খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ দেবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘যেটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তা হলো বীজতলা। এ জন্য নতুন কিছু কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। যেখানে বন্যায় বীজতলা ক্ষতি হয়েছে সেখানে আমরা নতুন বীজতলা তৈরি করব। এ ছাড়া চাষীদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হবে।’ সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন শতভাগ সততা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করবে- এমনটাই প্রত্যাশা।
×