ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদকেন্দ্রিক বিনোদন

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৭ আগস্ট ২০১৯

ঈদকেন্দ্রিক বিনোদন

ঈদ মৌসুমে বিনোদনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ঈদের অনেক আগে থেকেই মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক এমনকি ভুটান-নেপালের বিমান টিকেট পাওয়া আকাশের চাঁদ হয়ে ওঠে যেন। আর কলকাতার কথা উহ্যই থাক। বহু লোক ঈদের ব্যক্তিগত শপিং করতেও যান কলকাতায়। ঈদের সময় বেশ লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়ে যায় দেশ। এই সময়টা তাই অনেকেই বেছে নেয় ঘরের বাইরে বিনোদন লাভের জন্য। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা আগেভাগেই পরিকল্পনা করে পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে ঈদের আগেই উড়াল দেন। তারপরও বিনোদনলোভী লাখো মানুষ আছেন যারা দেশের ভেতরেই বিনোদন স্পট খোঁজেন। সমুদ্র সৈকত কিংবা পাহাড়ী জেলাগুলোই সেক্ষেত্রে হয়ে ওঠে প্রধান আকর্ষণ। অথচ দেশে দেখার মতো, ঘুরে বেড়াবার আরও বহু স্থান রয়েছে। একটু পরিকল্পনা করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুললে সেসব জায়গায় ভিড় হতে সময় লাগবে না। যারা দেশের বাইরে বিনোদন খোঁজেন, তাদের একটা বড় অংশকেও যে এমন পর্যটনে আকৃষ্ট করা যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়টি যাচাই করে দেখা দরকার। বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য ম-িত জায়গায় পর্যটন স্পট গড়ে তোলার চল থাকলেও এখন সময় এসেছে অনাবিষ্কৃত নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক শোভাময় নান্দনিক অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার। সরকার সোনাদিয়া দ্বীপে ইকোপার্ক গড়ে তুলছে। এ ধরনের পর্যটনকেন্দ্র যে বিদেশীদেরও আকৃষ্ট করবে সেকথা বলাই বাহুল্য। তবে দেশের পর্যটনপ্রেমীদের জন্য ঈদ অবকাশে ঈদকেন্দ্রিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা খুব একটা কঠিন কিছু নয়। এমনকি রাজধানীর আশপাশেও এমন জায়গার খুব অভাব নেই। পর্যটনের জন্য কয়েকটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। প্রথমত যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম থাকা চাই। পথের ধকলেই যদি মানুষের আনন্দের শক্তি চলে যায় তাহলে অভিপ্রায় সফল হবে না। এর পরেই রয়েছে পর্যটনকেন্দ্রের আশপাশে রাত্রিবাস ও নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা থাকা। সর্বোপরি সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চাই। ভুলে গেলে চলবে না, মানুষই একমাত্র প্রাণী যার বেঁচে থাকা তথা সুস্থ থাকার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই চলে না, মনের আহারও চাই। সে জন্য মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করে, তা না হলে অন্যের সৃষ্টি উপভোগ করে। তার চাই নির্মল বিনোদন। এই আনন্দ উপভোগ আবার ঠিক ঘরে বসে পুরোপুরি লাভ করা যায় না। যদিও আধুনিক যুগ তার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে নানা বিনোদনের অজস্র উপকরণ ও সম্ভার। তবু তার চাই ঘরের বাইরে যাওয়া, দল বেঁধে বিনোদন লাভ করা। বলা প্রয়োজন, ঢাকা মহানগরীতে মানুষের তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। তিন নম্বর বিপদ সংকেতকে উপেক্ষা করে এবার লাখ লাখ মানুষ কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে দিনভর আনন্দ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মানুষের ভেতর অবসর-অবকাশে কী বিপুল আনন্দ পিপাসা কাজ করে থাকে। এই পিপাসায় সুস্থ জল ঢালার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলায়, এমনকি বহু উপজেলায়ও রয়েছে বিনোদনের চমৎকার স্পট। শুধু খুঁজে বের করে সেটিকে উপযুক্ত করে তোলার অপেক্ষা। এ ব্যাপারে প্রথমত সরকারকেই সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারী উদ্যোগেও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এসব বিনোনদকেন্দ্র যে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক দিক দিয়েও যথেষ্ট ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×