স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত নিয়েই বিরোধীদলের নেতা নির্বাচন ও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। পাশাপাশি ভবিষ্যত রাজনীতিতে টিকে থাকতে দলকে আরো শক্তিশালী করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শনিবার দলের বনানী কার্যালয়ের প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে যোগ দেয়া জাপার শীর্ষ নেতারাদের বেশিরভাগই বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা বানানোর পক্ষে মতামত দিয়েছেন। কারো কারো বক্তব্য, আলোচনার মাধ্যমে বিরোধীদলের নেতা চূড়ান্ত করা উচিত। যেন নেতৃত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে কোন বিরোধ বা ভাঙনের সৃষ্টি না হয়। তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ সহ তার অনুসারী বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
বেলা ১১টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। সভায় ৫৫ জনের মধ্যে পার্টির ৩৫জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় মূল আলোচনা হয়েছে এরশাদের চল্লিশা পালন ও বিরোধীদলের নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গ। এরশাদের শুণ্য আসন রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিরোধী দল হিসেবে জাপার সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি, দলীয় বিরোধ নিরসন সহ চলমান রাজনৈতিক অবস্থার কথাও তুলে ধরেন কেউ কেউ।
সুত্র জানায়, সভায় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, এরশাদের চেহলাম কেন্দ্রীয়ভাবে রংপুরে করা উচিত। যেহেতু তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র মোতাবেক চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকেই বিরোধীদলের নেতা বানানো প্রয়োজন। তা না হলে গঠনতন্ত্রের ব্যাত্যয় ঘটবে।
অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুসরণ করলে পার্টির চেয়ারম্যান যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান চাইলে বিরোধীদলের নেতা হতে পারেন।
প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, জিএম কাদেরকে বিরোধীদলের বানানো উচিত। কারণ, তার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক রয়েছে। আর পার্টির চেয়ারম্যান বিরোধীদলের নেতা হবেন এটাই স্বাভাবিক।
অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র মোতাবেক দল পরিচালনা করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচন করতে হবে। তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। তবে গঠনতন্ত্রের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, পার্টির গতিধারা অব্যাহত রাখতে জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলের নেতা বানানো দরকার। উনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করুক এটা নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রত্যাশা। আমরা মনে করি তিনি বিরোধী দলের নেতা হলে দল এগিয়ে যাবে পাশাপাশি সংসদে আমাদের শক্তিশালী ভূমিকা রাখাও সম্ভব হবে।
পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বৈঠকে তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে। জনগণের কল্যাণে যে ধরণের কর্মসূচী নেয়া দরকার তা চলছে। বন্যা মোকাবেলা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চামড়া ইস্যুতে আমরা রাজপথে সরব ছিলাম। এখনও সরব আছি। ভবিষ্যতে মানুষের পাশে থেকে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করা হবে।
আগামী ৩১ আগষ্ট সারাদেশে একযোগে এরশাদের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, বিরোধীদলের নেতা কে হবেন সে বিষয়ে সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যাতে করে পার্টিতে কোনো বিবেদ সৃষ্টি না হয়।
রংপুরের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপ নির্বাচনে রংপুরের স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে প্রার্থী হিসেবে চারজনের নাম চাওয়া হবে। সেটার উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক পার্টির চেয়ারম্যানকে সুপ্রিম পাওয়ার দিয়া আছে। আমাদের দলে কোনো বিরোধ নেই। সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে বিরোধীদলের নেতা ও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়ন দেয়া হবে।
দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেহলাম (চল্লিশা) উপলক্ষে আগামী ৩১ আগষ্ট সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ আগষ্ট চল্লিশ দিন পূর্ণ হলেও সেদিন জন্মাষ্টমী হওয়ায় ৩১ আগষ্ট দোয়া মাহফিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভা শেষে ব্রিফিংয়ে রাঙ্গা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে যা করেছে তা দুরভিসন্ধিমূলক। বিক্রেতাদের কম মূল্য দিতেই এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে। চামড়া নিয়ে যারা কারসাজি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাতে মিরপুরে চলন্তিকা বস্তিতে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া ও পুনর্বাসন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাপা মহাসচিব। প্রেসিডিয়াম সভায় বক্তব্য রাখেন, এমএ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবুল কাশেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আলহাজ্ব সাহিদুর রহমান, এ্যাড. শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, সালমা ইসলাম, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ. টি. ইউ. তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, আব্দুর রশীদ সরকার, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনির, লেঃ জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ দিদার বখ্ত, কাজী মামুনুর রশিদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, পনির উদ্দিন আহমেদ, আদেলুর রহমান প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: