ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জমি বাঁচাতে আইন

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১৮ আগস্ট ২০১৯

জমি বাঁচাতে আইন

শুক্রবার জনকণ্ঠে কৃষি জমি হ্রাস সংক্রান্ত প্রতিবেদন পড়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও আবাসনে দ্রুত কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। পাশাপাশি বাড়ছে জনসংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি জমি সংরক্ষণে আইন করার উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে প্রলম্বিত হয়ে চলেছে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া। আইনের খসড়া বছরের পর বছর ঘুরছে টেবিল থেকে টেবিলে। এটি অনাকাক্সিক্ষত। বহু বছর ধরেই দেশে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। তার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। সেই সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাড়িঘর নির্মাণ, জলাভূমি ভরাট, চিংড়ি চাষ, তামাক চাষ, দোকানপাট নির্মাণ, হাউজিং সোসাইটি, ইটভাঁটি, বনভূমি ধ্বংস করার আত্মবিনাশী প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে চলতে থাকলে বসবাস উপযোগী পরিবেশই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, নিকট-ভবিষ্যতে সমগ্র জনগোষ্ঠীই এক বিপর্যয়কর অবস্থায় গিয়ে পড়বে। বাংলাদেশ ছোট একটি ভূখণ্ড। অথচ জনসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৬ কোটি। এখনই মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অতি সামান্য। তারপরও যদি কৃষি জমি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দেয়া এক সময় কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। আর সে কারণে সাগরতীরের অপেক্ষাকৃত নিচু জমি লোনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বড় অংশ লোনা পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মরুকরণের প্রভাব বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ভূ-গর্ভের পানির স্তর অত্যধিক নিচে নেমে যাওয়ায় এখনই অনেক জায়গায় গভীর নলকূপে পানি ওঠে না। খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে যেতেও পারছে না। দেশে মোট ভূমির ষাট শতাংশ কৃষি কাজে ব্যবহৃত হলেও প্রতিবছর এক শতাংশ হারে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। যার পরিমাণ ৬৯ হাজার হেক্টর বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধ্বংসের হাত থেকে কৃষি জমি রক্ষা ও কৃষকের অধিকার রক্ষা করা যাচ্ছে না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ১২ বছরে দেশে প্রতিবছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষিখাতে চলে গেছে। একই সঙ্গে প্রতিবছর আবাসন খাতে ৩০ হাজার ৮০৯ হেক্টর, নগর ও শিল্পাঞ্চলে চার হাজার ১২ হেক্টর এবং মাছ চাষে তিন হাজার ২১৬ হেক্টর জমি যুক্ত হচ্ছে। ইটভাঁটির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমিও। কৃষি জমি কৃষিকাজে ব্যবহার নিশ্চিত করা ভূমি ব্যবহার নীতির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলেও বাস্তব অবস্থা এর বিপরীত। এ নীতির বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না। গ্রামীণ বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুতল ভবন হতে পারে কৃষি জমি রক্ষার অন্যতম উপায়। অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করা জরুরী। এ জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা ও গণআন্দোলনের। কালবিলম্ব না করে কৃষি জমি সংরক্ষণে জরুরী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কৃষি জমি রক্ষার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা হোক।
×