ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিনষ্টকরণের ডার্বি

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৮ আগস্ট ২০১৯

বিনষ্টকরণের ডার্বি

এই বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইতে আমি ও স্ত্রী সিতারা গিয়েছিলাম ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের রাটল্যান্ড শহরে। রাটল্যান্ড ছোট শহর, জনসংখ্যা সতেরো হাজার, পশ্চিম গোলার্ধের ২য় বৃহত্তম মার্বেল পাথরের খনি নিয়ে প্রখ্যাত এবং নিউইয়র্ক ও বস্টনের লোকাধিক্যের আপেক্ষিকতায় সাজানো গুছানো বনরাজি আবৃত শহর। এই শহরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০%। এখানে মার্বেল খনির অবস্থান ইতালী থেকে গত শতাব্দীতে বেশ সংখ্যক মার্বেল খনন ও মসৃণ করার অভিজ্ঞ লোকজনকে আকর্ষণ করেছিল। ছেলে জয়, বউমা হিমি এবং নাত-নাতনি অনিম, অড়ি ও অর্নকে নিয়ে রাটল্যান্ডে এসেছিলাম আমরা নতুন ও পৃথক পরিবেশে ২ দিনের অবকাশ কাটাতে। আর এই শহরের প্রখ্যাত অথচ অস্বাভাবিক বিনষ্টকরণের ডার্বি বা প্রতিযোগিতা দেখতে। রাটল্যান্ডের পর্যটক আকর্ষণ করণীয়া উৎসব হলো ৪ জুলাই উদযাপনের অংশ হিসেবে মোটরযান বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতা বা ডার্বি। যুক্তরাষ্ট্রের কতিপয় ছড়ানো ছিটানো শহরে বছরের বিভিন্ন অথচ সুনির্দিষ্ট তারিখে এ ধরনের মোটরযান বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতা বা ডার্বি অনুষ্ঠিত হয়। এরূপ প্রতিযোগিতা দেখা এবং সম্ভবত উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের তুলনায় স্থানীয় শহরবাসীদের উৎসাহ অংশগ্রহণ ও সমর্থন বেশি বলেই দেখেছি আমরা। ৪ জুলাই রাটল্যান্ডে মোটরযান বিনষ্টকরণের এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে। স্থানীয় স্টেডিয়ামের পাশের এক প্রাঙ্গণে মহার্ঘ টিকেট নিয়ে ঢোকা প্রায় ১০ হাজার দর্শকদের সামনে একটি ৫০০ গজ দীর্ঘ ও ১০০ গজ প্রশস্ত পানি ভেজানো ঘাসবিহীন ধূসর বালি আবৃত প্রাঙ্গণ ছিল প্রতিযোগিতার স্থান। প্রতিযোগিতার প্রাঙ্গণ পানি ভিজিয়ে রাখা হয়েছিল যাতে প্রতিযোগী মোটরযানসমূহ সীমার বাইরে গতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করতে পারে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য চালকসহ আনা হয়েছিল প্রায় ১০০ পুরনো ও ভাঙ্গাচোড়া সিডান গাড়ি, স্টেশন ওয়াগন ও হাফট্রাক। প্রতিযোগিতায় সহায়তা করার জন্য উপস্থিত ছিল অগ্নিনির্বাপণের কয়েকটি দানবসদৃশ ট্যাংক লড়ি, ৫০ জন উদ্ধার কর্মী, ১০ জন চিকিৎসক ও সেবিকা। প্রতিযোগিতার স্থানের চারদিকে নিচু দেয়াল ঘেঁষে অবস্থান নিয়েছিলেন ২০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবী পাহারাদার। প্রতিযোগিতা শুরু করার আগে এই প্রতিযোগিতায় আগের বছরে নিহত এক চালকের কবর থেকে তোলা মাটি ছিটিয়ে তার বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান দেখানো হলো। স্থানীয় দর্শনার্থীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানলাম সাধারণত এসব প্রতিযোগিতায় সাবধানতা এমন মাত্রায় অনুসরণ করা হয় যেÑ এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে না এবং এবারকার প্রতিযোগিতায় উঁচুমাত্রার সাবধানী পরিচালনা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে দূরে রেখেছে। অন্যান্য দর্শকদের মতো বেশ দামে টিকেট কেটে প্রতিযোগিতার প্রাঙ্গণে ঢুকেছি আমরা। বিউগল বাজিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা হলো সূর্য ডোবার পরপরই। প্রতিযোগিতার মাঠে উত্তর দিকে ৮টি এবং দক্ষিণ দিকে ৮টি ভাঙ্গা সিডান উল্টো করে বা পিছন ঘুরিয়ে ১৬ জন চালক প্রতিযোগিরা জড়ো করলেন। চালকরা সবাই পুরুষ এবং তরুণ ও টগবগে। তাদের বান্ধবীরা দর্শকদের গ্যালারি হতে চিৎকার করে তাদের নাম বলছেন, উৎসাহ ও বাহবা দিচ্ছেন এবং তাদের দিকে হাতের তালুতে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু ছুড়ে দিচ্ছেন। সিডানগুলোর গা থেকে সব প্লাস্টিক ও কাঁচের অংশ খুলে নেয়া হয়েছে, দরোজাগুলো- একমাত্র প্রতিযোগী চালকের পাশের দরোজা ছাড়া খুলে নেয়া হয়েছে। এমনকি চালকের সামনের ড্যাসবোর্ডও কাচ ও প্লাস্টিক বিবর্জিত। এর কারণ প্রতিযোগী চালকদের নিরাপত্তা বিধান। প্রতিযোগী সব গাড়ি কালোর পটে সাদা অক্ষর ও নম্বর দিয়ে শনাক্তকৃত প্রতিযোগিতার বিধি অনুযায়ী চালকের বসার দিক ছাড়া অন্য সব স্থানে প্রতিযোগী গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেয়া বা আঘাত করা যায়। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম এক গাড়ি দিয়ে আরেক গাড়িকে ধাক্কা আর আঘাতের তা-ব। প্রায় ২০ মিনিট ধরে প্রতিযোগী চালকরা একে অন্যের গাড়ি আঘাত করে চললেন, একে একে দুটি গাড়ি ছাড়া সব গাড়ি বিনষ্ট কিংবা অকেজো হয়ে প্রতিযোগিতায় হেরে প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে বিদায় নিল কিংবা তাদের বুলডজার দিয়ে সরিয়ে ফেলা হলো। শেষ দুটি সচল গাড়ি তখন একে অন্যকে ধাক্কা দিয়ে বা আঘাত করে চলল এবং মিনিট দশেকের মধ্যে একটি গাড়ি নিশ্চল হয়ে বিদ্যমান সচল ৩৪ নং গাড়ির চালককে বিজয়ী করল। করতালি মুখরিত জনতা, জয়ীর দিকে হাতের তালুতে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু ছুড়ে দেয়া বিরল বসনা বান্ধবী ও মেয়ে শুভেচ্ছার্থীরা তাকে অভিনন্দন জানালেন এবং সবশেষে বিজয় স্তম্ভে দাঁড়িয়ে ১ম ও ২য় চালক তাদের নিপুণতা ও সাহসিকতার প্রতিবিম্ব ও প্রতিফলন আমাদের উপহার দিলেন। দেখলাম আমাদের নাত নাতনিরাও দীর্ঘ করতালি দিয়ে মার্কিন দর্শকদের সঙ্গে উপভোগে একমনা হলো। ১ম দফা প্রতিযোগিতার পর অকেজো গাড়িগুলোকে মাঠ থেকে বুলডোজার দিয়ে সরিয়ে জয়ী হওয়া গাড়িটিকে রেখে তেমনি ১৮/১৯টি ভাঙ্গা গাড়ি নতুন প্রতিযোগী চালকরা নিয়ে এসে প্রতিযোগিতায় নামলেন। ১ম দফার বিজয়ী প্রতিযোগী তার গাড়ি নিয়ে এই দফার প্রতিযোগিতায় রয়ে গেলেন। ১ম দফার প্রতিযোগিতার মতো গাড়ি দিয়ে গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে ১টি শেষ পর্যন্ত চালু গাড়িকে ও তার চালককে জয়ী ঘোষণা করা হলো। এমনি আরও ৪ দফা প্রতিযোগিতার পর কাদা মাখা মুখাবয়ব নিয়ে জয়ী হলেন সেই ৩৪নং গাড়ির চালক। সমাপনীয় হাসি আর ধ্বনিতে মুখরিত হলো সারা মাঠ ও বেশ দামের টিকেট করে দেখতে আসা অগুনতি মানুষ। আমি, সিতারা, ছেলে জয়, বউমা হিমি, নাতি অনিম ও অর্ন এবং নাতনি অড়ি দেখলাম, বেশ স্পন্দিত হলাম, প্রতিযোগিতার প্রাঙ্গণে ঘরে বানানো রঙিন ও সুস্বাদু আইসক্রিম মুখে নিয়ে হাসিতে উজ্জ্বল ও ধ্বনিতে মুখরিত সব দর্শকদের মেলে নিজেদের হারিয়ে ফেললাম। মোটরযান বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতার নাকি প্রচলন ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩০ এর দশকে। ফোর্ড মোটর কোম্পানি কর্তৃক সে সময়ে নির্মিত প্রখ্যাত মডেল-টির পুরনো ও প্রায় অকেজো মোটরযানসমূহ বিভিন্ন মেলায় ও ছোটখাটো শহরে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়ার আগে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় নামানো হতো। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৭ সালে জনৈক ডন বাসেল কারেল স্পীডওয়েতে আকর্ষণীয়ভাবে এই প্রতিযোগিতা জনগণের সামনে নিয়ে আসেন। পরে নিউইয়র্কের ইসলিপ স্পিডওয়েতে ল্যারি মেন্ডলসন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জনগণের নজর কাড়েন। এর পরে বেশ কয়েকটি ছোট ও মাঝারি শহরে মোটরযান বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে থাকে। অষ্ট্রেলিয়ায়ও পুরনো গাড়ি বিনষ্টকরণের এই ধরনের প্রতিযোগিতা সেই সময় থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে জানা যায়। ১৯৬৩ সালে সে মহাদেশের এডিলেডের রোউলী পার্ক স্পীডওয়েতে ২০ হাজার দর্শকপুষ্ট মোটরযান বিনষ্টকরণের এক বিরাট ডার্বি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এর পরে বিভিন্ন শহরে এই ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে মহাদেশের প্রতিযোগিতায় প্রধানত অষ্ট্রেলিয়ায় তৈরি মোটরযান অংশগ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত এসব প্রতিযোগিতায় তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পুরনো মোটরযানদের স্থান দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে লসএঞ্জেলেস শহরে একবার একেবারে আনকোরা নতুন মোটরযান নিয়ে গাড়ি ভাঙ্গার এই মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আনকোরা নতুন গাড়ি ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা অবশ্য জনগণ গ্রহণ করেননি। ফলত লসএঞ্জেলেসের বিনষ্টকরণের এই মহোৎসবের পর আনকোরা নতুন গাড়ি নিয়ে আর এ ধরনের ডার্বি অনুষ্ঠিত হয়নি। শোনা যায়, ২০০১ সালে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে পুরনো ২০০০টি মোটরযান বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতার প্রায় ৪০০০ প্রতিযোগী চালক অংশগ্রহণ করেন। কানাডার ওয়াইড ওয়াটার শহরে ২০০০-২০০১ সালে একই ধরনের বিনষ্টকরণের ডার্বি অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময়ে নাকি এই ধরনের প্রতিযোগিতাকে ভিডিওতে ধারণ করে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে জনপ্রিয় করার চেষ্টাও করা হয়। স্পিড চ্যানেল নামীয় টিভি ২০০৫ সালে বিনষ্টকরণের ডার্বি সম্প্রচার করেছিল। ২০০০ এর দশকে পেপার ভিউ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে বিনষ্টকরণের ডার্বি প্রচার করে এসেছে। সাম্প্রতিককালে অবশ্য মোটরযান বিনষ্টকরণের এই প্রতিযোগিতার সংখ্যা কমে এসেছে। এসব প্রতিযোগিতায় ক্রমান্বয়ে ছোট পুরনো ভাঙ্গাচোরা সিডান গাড়ি প্রযুক্ত করা হচ্ছে। ছোট ছোট জনপদে প্রযুক্তিকে মাধ্যম করে কিংবা ভিডিও গেমসের অবয়বে অন্যান্য প্রচারিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আবির্ভাব গাড়ি বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে কিংবা এরূপ অনুষ্ঠানকে জনপ্রিয়তার নিরিখে পিছনে ফেলে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য বিনষ্টকরণের ডার্বি, বিনষ্টের প্রতিযোগী শিরোনামায়িত ভিডিও গেমস বা ক্রীড়াচ্ছবি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর কিশোরীদের কাছে প্রিয় বিনোদনীয় খেলা। মোটরযান বিনষ্টকরণের এই প্রতিযোগিতা বলা হয়ে থাকে, সাধারণ মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার্য বা গ্রহণীয় হিসেবে ধরে নেয়ার বাইরে প্রতিকূলতাকে জয় করার মানব মানস প্রতিফলিত করে। দৃশ্যমান বাধা-ব্যত্যয় দূর করে, মানুষ উদ্ভাবিত প্রযুক্তিভিত্তিক যন্ত্র দানবকে যে জয়ী করা যায় এবং এভাবে অর্জিত জয় যে মানুষের ক্রমবর্ধমান সৃজনশীল উদ্ভাবনাকে সপ্রতিভ ও সুপ্রমাণিত করে সেজন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতা সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়কের কিংবা সারথীর ভূমিকা পালন করে বলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উৎসাহী ব্যক্তিরা বলে থাকেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচুর্যে ভরা জীবনে এই ধরনের মানুষ সৃষ্ট হাতিয়ার ভেঙ্গে পার্থিব সন্তুষ্টি অর্জন করার পথে যে অলস ও অনুৎপাদনশীল তারুণ্য মাঝে মাঝে বেপথগামী হয়- তাই প্রতিফলিত করে এই ধরনের প্রতিযোগিতা। সারা বিশ্বে ক্রমান্বয়ে তথ্য, অর্থ, প্রযুক্তি ও যাতায়াত সীমান্তবিহীন হয়ে সবার জন্য মুক্ত হয়ে আসছে, দারিদ্র্যের অভিঘাত প্রযুক্তিক উদ্যোক্তা বিত্তশালীর অনুভূতিকে সকলের কল্যাণে এগিয়ে আনার মানস দিয়ে প্রগতিশীলতার অনুকূলে নিয়ে যাচ্ছে বলে মোটরযান বিনষ্টকরণের এরূপ প্রতিযোগিতার জন্য জনসমর্থন ক্রমান্বয়ে কমে আসছে বলে আমাদের ধারণা। রাটল্যান্ডের মোটরযান বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইর আকাশ ভরা সূর্য তারার ঝলকানিসম আতশবাজির রোশনী ছড়িয়ে পড়ছিল আমাদের সামনে। প্রতিযোগিতার স্থানের ৩ দিকে এক ঘণ্টা ধরে নিরবচ্ছিন্ন আতশবাজি আকাশজুড়ে সূর্য তারার রোশনী ও ভাবধারা নিয়ে স্বাধীনতা ও প্রগতির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছে। পলকহীন নীরবতায় আমরা মার্কিনীদের সঙ্গে একযোগে এক মনে এই আতশবাজিকে গ্রহণ করেছি। আকাশজুড়ে সূর্য তারাকে মানুষের জয়যাত্রার দিক দিশারী হিসেবে মনে করেছি। মনে হয়েছে ৪ জুলাই এর আলোকসজ্জা ও মনমাতানো আতসবাজি এই দেশের প্রতিষ্ঠার সেই দার্শনিক ভিত্তি- সকল মানুষ সমান এবং জীবন, মুক্তি ও সুখের অন্বেষণ সব মানুষের অলঙ্ঘনীয় অধিকার- এর দর্শন আলোর ছটার বৈভব ও আকর্ষণীয়তা নিয়ে আমাদের চিত্তের অনুধাবনে স্থান নিয়েছে। আমরা নিশ্চিতভাবে জেনেছি যে যুক্তরাষ্ট্রের সব স্থানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই দর্শনের উত্তরাধিকারী। এই প্রেক্ষিতে আমাদের মনে হয়েছে মোটরযান বিনষ্টকরণের মতো এসব প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিযোগিতা স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যতার স্থান নিতে পারবে না। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে মানুষের সমতা ও মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়াকে বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতা থামিয়ে দিতে পারবে না, প্রাচুর্যের সাময়িক বিভ্রান্তি চিরায়ত জয়ের পথ থেকে মানব প্রগতিকে বিচ্যুত করার বেদনাদায়ক পারঙ্গমতায় কোন কালেই পৌঁছবে না। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া আমাদের নাত নাতিনরা, লক্ষ্য করলাম বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতার তুলনায় অনেক বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে, আকাশে আতশবাজির ছড়িয়ে দেয়া স্বাধীনতা ও মুক্তির সেই প্রতিচ্ছবি ও আবেদন দেখছে এবং নিশ্চিতভাবে মনে প্রাণে গ্রহণ করছে। এবং তাই লক্ষ্য করে রাটল্যান্ডের বিনষ্টকরণের প্রতিযোগিতার অনুৎপাদনশীল পরিম-ল থেকে নিরন্তর সৃজনশীলতার ভিত্তিতে সব মানুষের অন্তর্ভুক্তিয় প্রগতির প্রতীতি এবং সেই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্পবোধ নিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মেলে আবার ফিরে এসেছি। লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
×