ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইরাকের অনুমতি নিতে হবে

প্রকাশিত: ০৯:১২, ১৮ আগস্ট ২০১৯

ইরাকের অনুমতি নিতে হবে

ইরাকের যে কোন জায়গায় বোমা হামলা চালাতে এখন দেশটির সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জোট মিত্রদের। গত সপ্তাহে অজ্ঞাত এক বিস্ফোরণে দেশটিতে বহু বেসামরিক লোক হতাহত হওয়ার পর আকাশপথ নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন এ বিধিতে রাজি হয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। নিউজউইক। ইরাকের আল-সাকর সামরিক ঘাঁটিতে সোমবার ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ওই বিস্ফোরণে একজন নিহত এবং বহু আহত হন। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, ইরাকী সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে থাকা ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের অস্ত্র রাখা হয়েছে এমন একটি বাড়িতে ইসরাইলের বিমান হামলা থেকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল-মাহদী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াহিয়া রসুল বৃহস্পতিবার ইরাকী আকাশসীমা ব্যবহারের সকল অনুমোদন বাতিল ঘোষণা করেন। এটি ইরাকী এবং ইরাকের বাইরের সকল পক্ষের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই বিধির আওতায় থাকছে পর্যবেক্ষণ, সশস্ত্র পর্যবেক্ষণ, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং সকল প্রকারের ড্রোন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যে কেউ ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করতে চাইলে তাকে ইরাকের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল কমান্ডারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমোদন নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেটাকে শত্রুর বিমান হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এটির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে আকাশ প্রতিরক্ষা দলের সদস্যরা। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এ বিষয়ে শুক্রবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে তারা। মার্কিন বিমান বাহিনী ও এর মিত্ররা গত প্রায় ২৫ বছর যাবত কোন অনুমতি ছাড়াই ইরাকে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর থেকে সেটি আরও জোরদার হয়েছে। ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং আল কায়েদার সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে - এমন অভিযোগে দেশটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেটা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ৬৮৭ প্রস্তাব সংশোধনের মাধ্যমে আদেশ জারি করে যে, ইরাকের সব ধরনের রাসায়নিক, জৈব, পরমাণু এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করে দিতে হবে। ১৯৯১ সালের যুদ্ধের পর ইরাক টিকে গেলেও ২০০৩ সালের যুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনী পর্যুদস্ত হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে সাদ্দামকে আটক করা হয়। ২০০৬ এর ডিসেম্বরে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশটিতে একটি যুগের অবসান ঘটে। এই যুদ্ধ নিয়ে জন চিলকট যে প্রতিবেদন তৈরি করেন তাতে বলা হয়েছে যুদ্ধে অন্তত দেড় লাখ (সম্ভবত, এর চার গুণ) ইরাকী নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয় যে সাদ্দামকে উৎখাতের পর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরাক যুদ্ধের পরিণতিতে ইরান এখন কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে। শিয়া জঙ্গী ও বাগদাদে সহানুভূতিশীল সরকারের বদৌলতে ইরান কার্যত ইরাকের বিশাল জায়গা দখল করে বসে আছে। ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে মিলে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাজ্য। সে সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টনি ব্লেয়ার, উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন জন প্রেসকট। চিলকট প্রতিবেদনে ইরাক যুদ্ধকে অবৈধ বলে মন্তব্য করা হয়।
×