ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জৈন্তাপুরের জারা লেবু এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৮ আগস্ট ২০১৯

জৈন্তাপুরের জারা লেবু এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ জৈন্তাপুরের জারা লেবু দেশের বাজার ছেড়ে এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাহাড় টিলা বেষ্টিত সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা এক সময় কমলা লেবু ও তেজপাতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। নানান কারণে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জৈন্তা এলাকা থেকে কমলা লেবু হারিয়ে যেতে থাকে। এক সময় এই এলাকা থেকে সারা বাংলাদেশে তেজপাতা সরবরাহ করা হতো। গত ৪০ বছরে এই এলাকায় তেজপাতা চাষও কমে গেছে। টিলা ও উঁচু ভূমির অঞ্চল জৈন্তা গোয়াইনঘাটে জমির মালিকরা এবার জারা লেবু চাষে এগিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে লন্ডন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জারা লেবুর চাহিদা থাকায় এখানকার চাষীরা জারা লেবু চাষকে কেন্দ্র করে ব্যবসার নতুন সম্ভাবনা দেখছেন। জৈন্তিয়ার জারা লেবুর কদর এখন দেশ-বিদেশে। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় জারা লেবু চাষ করে প্রায় ২শ’ কৃষক পরিবার এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয় এলাকার উৎপাদিত জারা লেবু দেশের বাজার ছেড়ে এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। যার ফলে বদলে যাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের চেয়ে জারা লেবুর চাষ লাভবান হওয়ায় জারা লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষক পরিবার। ভূমি ও টিলা শ্রেণী হওয়াতে লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল, হরিপুর, জৈন্তাপুর ও ফতেহপুর বাজারেই জারা লেবুর ব্যবসা জমে উঠেছে। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা জারা লেবু ক্রয় করে নিচ্ছেন। প্রক্রিয়া জাতের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা লন্ডন, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাতসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছেন। দেখা যায়, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর, হরিপুর, বাগেরখাল, শিকারখাঁ, উৎলারপার, চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর, পানিছড়া, ঠাকুরের মাটি, নিজপাট ইউনিয়নের কালিনঞ্জিবাড়ি ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বানিগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে টিলা শ্রেণীর ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে জারা লেবু চাষ হচ্ছে। অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় জারা লেবু চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক পরিবারগুলো। এই অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক অন্যান্য ফসল চাষ বাদ দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় জারা লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এলাকার অধিকাংশ জনগণ অন্য কোন পেশা না থাকায় জারা লেবু চাষে দিন দিন বেড়ে চলেছে। ফলে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামের সাধারণ লোকজন। এক সময় প্রচুর জমি বছরের পর বছর অনাবাদী থাকত এখন এসব জমির কদর অন্য সব জমির চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। জারা লেবুর কলম করা চারা রোপণের দুই বছর পর হতে ফলন আসতে শুরু হয় এবং গাছগুলো পাঁচ বছরের অধিক সময় পলন পাওয়া যায়। জারা লেবুর বৈশিষ্ট্য হলে খুব স্বাদ ও টক জাতীয় ফল। লেবু দেখতে অনেকটা কুমড়ার মতো। লেবুর রস তেমন না থাকলে ও তা খেতে খুব সু-স্বাদু। বাগেরখাল গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বারের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, জারা লেবু চাষের জন্য আমাদের এলাকাটি খুব উপযোগী। আমাদের পূর্ব পুরুষরা জারা লেবু চাষ করেছেন শুধু নিজ পরিবারের জন্য, আমরা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে শুরু করেছি। বাগেরখাল গ্রামের কৃষক সামছুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ দিন থেকে আমি লেবু চাষ করে আসছি। প্রতিদিন আমার বাগানে পাঁচজন শ্রমিক পরিচর্যার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন। চলতি মৌসুমে বাগান হতে এক লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। এ ব্যাপারে চাষীরা ভাল উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে বলেন প্রয়োজনয়ী প্রশিক্ষণ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও রোগ বালাই প্রতিরোধে কিটনাশক এবং উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করলে এই ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হবে। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল হাসান নজরুল বলেন, জৈন্তাপুরের মাটি ও আবহাওয়া সাইট্রাস জাতীয় ফলের জন্য উপযোগী। উঁচু নিচু টিলা ভূমিতে বৃষ্টি পানি গাছের গোড়ায় জমে থাকে না, এজন্য এখানে সাইট্রাস ও লেবু জাতীয় ফসল কম খরচে বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের গবেষণা কেন্দ্র নিয়মিতভাবে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও চারা সরবরাহ করছে। তাছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে।
×