ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড বৃষ্টিতে দুর্ভোগ

খুলনা নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৮ আগস্ট ২০১৯

খুলনা নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে খুলনায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হয়নি। ভাদ্র মাসের শুরুতে ছয় ঘণ্টার টানা বর্ষণে তলিয়ে যায় খুলনা মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা। রাত তিনটা থেকে শুরু হয়ে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বর্ষণ হয়েছে। এরপর হালকা ও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়। খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, শুক্রবার রাত তিনটা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা খুলনায় এ বছরের একদিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় খুলনা অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ড্রেন-নর্দমা ছাপিয়ে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। শান্তিধাম মোড়, শামসুর রহমান রোড, খানজাহান আলী রোড, আহসান আহমেদ রোড, রয়্যাল মোড়, বাইতি পাড়া, তালতলা, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, দোলখোলা, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, বড়বাজার, মির্জাপুর রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরা বান্দা বাজারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি কোথাও তার চেয়ে বেশি পানি জমে। এসব এলাকার রাস্তা উপচেপড়া পানি অনেকের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে। নি¤œাঞ্চলের অনেক বস্তিবাসী মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হন। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর থেকে পানি নামতে শুরু করে। অনেকে বলছেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনা, খাল ভরাট, খালের অবৈধ দখলসহ নানা কারণে সামান্য বৃষ্টিতে নগড়জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হন নগরবাসী। আবার সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, অতীতে নগরীতে যে সব ড্রেন তৈরি করা হয়েছে তা বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়। ড্রেন নির্মাণ যেমন ত্রুটিপূর্ণ ছিল, তেমনি ড্রেন-নর্দমা পরিস্কার রাখার জন্য ঢালাওভাবে সিটি কর্পোরেশনের ত্রুটি খোঁজাও ঠিক নয়। নাগরিকরা সচেতন হলে এই দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে উল্লেখ করে তারা বলেন, ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা, কোল্ড ড্রিংকস বা পানি পানের পর প্লাস্টিকের বোতল, ফাস্ট ফুডের পলি ব্যাগ, দৈয়ের মালসা ইত্যাদি সিটি কর্পোরেশনের কেউ ফেলেনা। এ শহরে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকরা এগুলো ফেলে থাকেন। তাই এ বিষয়ে নাগরিক সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শান্তিধাম মোড় এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী বলেন, খানজাহান আলী রোডের ফুল মার্কেটের কাছে, শান্তিধাম মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যে সব ‘পেডেস্ট্রিয়ান ক্রসিং’ নির্মাণ করা হয়েছে তা জনগণের কোন কাজে আসছে বলে মনে হয়না। তবে এগুলো বৃষ্টি হলে বেড়িবাঁধের মতো কাজ করছে। আগে ড্রেন উপচেপড়া বৃষ্টির পানি রাস্তা থেকে গড়িয়ে নিচু এলাকা গিয়ে নিষ্কাশিত হতো। এগুলো নির্মাণ করায় পানি আটকে থেকে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মেঝে উঁচু করেছেন এবং পানি যাতে ঢুকতে না পারে তার জন্য প্রয়োজন মতো দেয়াল তৈরি করেছেন। এদিকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) কেডিএ এভিনিউসহ যে সব বড় বড় সড়ক নির্মাণ করেছে, তার পাশে ড্রেন তৈরি করা হয়েছে খুবই ছোট। তাছাড়া কেডিএ নির্মিত বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রেন করা হয়নি। এ কারণেও জলাবদ্ধতা নিরসনে সমস্যা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। সাতক্ষীরা স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে জানান, মাত্র দু’দিনের ভারি বর্ষণে শহরের নি¤œাঞ্চল পানিতে ভাসছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। এই অবস্থায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি সাতক্ষীরা শহরসহ জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে সকল বাধা অপসারণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। শনিবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহিদ স ম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে কমিটির বিশেষ বর্ধিত সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় বলা হয়, সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না রেখে যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ, মাছ চাষ ও অবৈধ দখলের কারণে সামান্য দু’একদিনের বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরেরই অনেক স্থানে ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেকে বাড়িতে রান্না-বান্না করতে পারছে না। অনেক বাড়ি-ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘর হতে বের হতে পারছে না। জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, এ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী, সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী, এ্যাডভোকেট শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, মাধব চন্দ্র দত্ত, বিশ্বনাথ ঘোষ প্রমুখ ।
×