ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-সিলেট রেলপথ ॥ ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৮ আগস্ট ২০১৯

ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-সিলেট রেলপথ ॥ ঘটছে দুর্ঘটনা

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিলেট-ঢাকা রেলপথে দুর্ঘটনা পিছু ছাড়ছে না। সিলেট আখাউড়া রেল সেকশনে ট্রেন দুর্ঘটনা এখন নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে এই রেলপথে প্রায় ১২টি ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট থেকে যাত্রীবাহী উপবন এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফেঞ্চুগঞ্জ ও মাইজগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছার পর ট্রেনটির একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। রাত ১টা ২০ মিনিটে লাইনচ্যুত বগিটি ফেঞ্চুগঞ্জে রেখেই ট্রেনটি ঢাকার পথে ছেড়ে যায়। গত ২৩জুন সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেসটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। উপবন এক্সপ্রেস বরমচাল স্টেশন অতিক্রম করে কুলাউড়া আসার পথে রেলপথের একটি কালভার্ট ভেঙ্গে পেছনের ছয়টি বগি খালে পড়ে যায়। এতে চারজন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। এই ঘটনার পরদিন দুর্ঘটনার কারণ জানতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যাত্রীদের কাছে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা রেলপথে বছরেও একদিন দুর্ঘটনার সংবাদ যেখানে আশা করা যায় না সেখানে নিয়মিত দুর্ঘটনার সংবাদ ট্রেন ভ্রমণকারীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। এক দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি দুর্ঘটনার সংবাদ শুনতে হচ্ছে। বলতে গেলে দুর্ঘটনার আতঙ্ক মনে নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী রেলপথে যাতায়াত করছেন। সিলেট-ঢাকা সড়কপথে প্রতিদিন ২৫/৩০ হাজার লোক যাতায়াত করছেন। তাদের অধিকাংশেরই প্রথম চাহিদা ট্রেনে ভ্রমণ। সড়কপথে বাসে চলাচলে অনেকের সমস্যা হয়ে থাকে তাছাড়া আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা হিসেবে সকলেই ট্রেন যাত্রাকেই বেছে নিতে চান। কিন্তু যাত্রীদের সে চাওয়া নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রেনের স্থান সঙ্কুলান একটি অন্যতম সমস্যা। এছাড়া যাত্রাপথে বিড়ম্বনা, মাত্রাতিরিক্ত সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছা ও বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থায় রেলপথে যাত্রীরা আস্থা হারাচ্ছেন। রেল ভ্রমণ নিরাপদ হলে যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। রেলের ব্যবসায়িক সাফল্য নিশ্চিত হবে। সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে গত কয়েক বছরে বেড়ে গেছে রেল দুর্ঘটনা। কিছুদিন পরপরই এই রুটে দুর্ঘটনায় পড়ছে ট্রেন। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এই রুটে ট্রেন চলাচল। রেলওয়ের তথ্যমতে- আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস নামের ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন গড়ে ১২ বার চলাচল করে। এসব যাত্রায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশন দিয়ে সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম পথে ভ্রমণ করেন। পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, নতুন প্রকল্পের প্রতি মনোযোগী হলেও পুরনোগুলো রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি কমই নজর দেয়া হচ্ছে। তার বর্ণনায়, আমরা বানাই, ভুলে যাই, আবার বানাই। মাঝখানে যে এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে টেকসই এবং নিরাপদ রাখব সেই কালচারটা (সংস্কৃতি) কখনই আমাদের গড়ে উঠেনি। জানা গেছে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথের ১৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩টি সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব সেতুর ওপর ট্রেন পারাপারে ‘ডেড স্টপ’ ( সেতুর আগে ট্রেন থেমে যাবে, এরপর পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলা শুরু করবে) ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু ‘ডেড স্টপ’-এর আওতাধীন রয়েছে। রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা যায়, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেকগুলো সেতুই অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯ নং সেতু এবং মনতোলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু। সেতু সংস্কারের কোন প্রকল্প না থাকায় এগুলো সংস্কার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। মনু ব্রিজের দুরবস্থা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়ছে। ব্রিজের স্লিপারের নাট খুলে যাওয়া এবং কাঠের বদলে বাঁশ দ্বারা জোড়াতালি দিয়ে স্লিপার বানিয়ে রেলসেতুটি মেরামত করা হয়। সেই মনু সেতুটি এখনও সেই অবস্থায়ই আছে এবং রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকায়ও রয়েছে এটি।
×