ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় ‘স্টালিন’ নাটকের দুই প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৮ আগস্ট ২০১৯

শিল্পকলায় ‘স্টালিন’ নাটকের দুই প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের (সিএটি) নতুন প্রযোজনা ‘স্টালিন’। তিনটি মঞ্চায়নের পরই নাটকটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। বিতর্কিত এই নাটকের আরও দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিল্পকলায়। সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ শাহাদাৎ হোসেন জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আগামীকাল ১৯ আগস্ট এবং পরশু ২০ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় নাটকের দুটি প্রদর্শনী হবে। এই নাটকটির ইংরেজী ভার্সনের রচয়িতা কামাল উদ্দিন নীলু। বাংলায় ভাষান্তর করেছেন রায়হান আখতার। আর নির্দেশনা দিয়েছেন কামাল উদ্দিন নীলু। ১০ মিনিটের বিরতিসহ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ব্যাপ্তির ‘স্টালিন’ নাটকের স্টালিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রায়হান আখতার ও মোঃ শাহাদাৎ হোসেন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিনা সুলতানা, এ কে আজাদ, মোহাম্মদ রাফী সুমন, শাওন কুমার দে, শিপ্রা দাস, শান্তনু চৌধুরী, সুব্রত প্রসাদ বর্মণ, মর্জিনা মুনা, মেজবাউল করিম, চিন্ময়ী গুপ্তা, কাবেরী জান্নাত প্রমুখ। ‘স্টালিন’ নাটকটি ক্ষমতাবৃত্তের একটি দৃষ্টান্ত, যেখানে একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক আত্মবিস্তারের অনিবার্যতায় তার চারপাশে চাটুকারের দল জড়ো করেন। আর এই চাটুকাররাই পরগাছার মতো করে তার স্বপ্নকে শেষ করে দেয়। তাকে বিচ্ছিন্ন করে জনমানুষ থেকে। স্টালিন তার কর্মকা-ের কারণে সহকর্মীদের কাছ থেকে তো বটেই নিজের পরিবারের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ফলে জীবন সায়াহ্নে তিনি পুরোপুরি একা হয়ে যান। একসময় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু এরপরেও তার ছায়া আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমাদের ওপরে জমে থাকা মেঘ ধীরে ধীরে কালো হয়ে হারিয়ে যায় অন্ধকারে। নাটকে উঠে এসেছে এমন এক সময়ের গল্প যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন জোসেফ স্টালিন। তিনি মনে করতেন- মৃত্যুই সব সমস্যার সমাধান, মানুষ না থাকলে সমস্যাও থাকবে না। নাটকের আইজেনস্টাইডনের একটি সিনেমা দেখছিলেন স্টালিন। সেটি দেখার মাঝ পথে স্টালিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাটি ঘটে স্টালিনের বাগান বাড়িতে। সেখানে তিনি ডেকে পাঠান তার পলিটব্যুরোর সদস্যদের। যদিও সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন স্টালিনের মেয়ে সভেৎলানা, তার সেক্রেটারি আলেকজান্ডার পসক্রেবিশেভ এবং দেহরক্ষী মেজর ভøাসিক। কিন্তু পলিটব্যুরোর সদস্যরা উপস্থিত হওয়ার আগে সেখানে উপস্থিত হন স্টালিনের গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান নিকোলাই ইয়েঝভ। স্টালিনকে তিনি একটি তালিকা ধরিয়ে দেন যেটিতে তিনি লিখে এনেছেন; পলিটব্যুরোর সদস্যদের মধ্যে কাকে কাকে ছাঁটাই করতে হবে। এর পর নিকোলাই ইয়েঝভ চলে যান এবং উপস্থিত স্টালিনের পলিটব্যুরোর সদস্য ক্রুশ্চেভ মলোতভ, মালেনকভসহ কয়েকজন। স্টালিন তাদের সঙ্গে রাজনীতির এক জটিল ও নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠেন এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে তিনি একের পর এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে থাকেন। তার এক সময়কার সহকর্মী নিকোলাই বুখারিনকে গ্রেফতার করেন এবং লোক দেখানো বিচার কাজ চালিয়ে মৃত্যুদ- দেন। এদিকে তার আরেক সহকর্মী ট্রটস্কি নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাকেও মেরে ফেলার জন্য তার গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান নিকোলাইকে নির্দেশ দেয়া হয়। স্টালিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে বাকস্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায়। তিনি মায়ারহোল্ডকে গ্রেফতার করেন। তারপর তাকে প্রচ- নির্যাতন করেন এবং মৃত্যুদ- দেন। স্টালিনের এই নিষ্ঠুরতার কারণে পলিটব্যুরোর সদস্যরা সব সময় মৃত্যুভয়ে ভীত থাকেন। ফলে স্টালিনের চারপাশে তৈরি হয় চাটুকারের দল। স্টালিন তার পৈশাচিক আচরণ ও বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে সহকর্মীদের কাছ থেকে তো বটেই পরিবারের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি স্টালিন। এ কারণে মেয়ে সভেৎলানার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। আর এভাবেই স্টালিনের মতো একজন একনায়ক জীবন সায়াহ্নে পুরোপুরি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এক সময় তার মৃত্যু হয়। তবে নাটকে তুলে ধরা বিষয়বস্তু নিয়ে বামবাদীরা সমালোচনা করেন। নাটকের গল্পে স্টালিনকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে নাটক মঞ্চায়নের সময় বিক্ষোভ হয়। এমনকি নাটকটি বন্ধ করারও দাবি জানান কেউ কেউ।
×