ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আমাদের মাস্টার যতীন সরকার

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৮ আগস্ট ২০১৯

আমাদের মাস্টার যতীন সরকার

নিহার সরকার অংকুর : নেত্রকোনা শহরটাকে সাপের মতো করে পেঁচে রেখেছে মগড়া নদী । যেন নেত্রকোনার মানুষের মূল অভিভাবক মগড়া। আমাদের ভালোবাসে আবার সময়ে শাসনও করে । আবার এই মগড়াকে জীবন পথের মাস্টারও বলা চলে। পথ চলতে গেলে তা ভালোই বুঝা যায় । এই মগড়া নদী শহরটাকে যেভাবে আগলে রেখেছে তেমনি আমাদের আগলে রাখছেন আমাদের মাস্টার অধ্যাপক যতীন সরকার। শিল্প সংস্কৃতির উর্বর ভূমি খ্যাত নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন যতীন সরকার। অধ্যাপক যতীন সরকারকে কেবল মাস্টার বলে থেমে থাকলেই চলবে না । তিনি একাধারে প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, মার্কসীয় তাত্ত্বিক আর সব কিছুকে ছাড়িয়ে থাকা একজন ভালো অভিভাবক। তবে যতীন সরকার এর ভাষায় তিনি মাস্টার ছাড়া আর কিছুই হতে পারেন নি। কি পেরেছেন আর কি পারেন নি তা বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্য ও রাজনৈতিক অঙ্গগণের মানুষেরা জানে । তবে হ্যাঁ আপনি আমাদের আদর্শ মাস্টার । যতীন স্যার এর সাথে পরিচয় হয় আমার আদর্শ গুরু কুন্তল বিশ্বাস এর মাধ্যমে। তবে পূর্ব পরিচয় আমার তেমন ছিলো না তবে আমার পরিবারের ছিলো মতিন্দ্র স্যারের (যতীন সরকার এর ছোটভাই) সাথে । বলতে গেলে আমার যতীন স্যারকে দেখা জানা আর কাছে আসা ঘটে কুন্তল বিশ্বাস জেঠুর মাধ্যমে। তারপর সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র ইউনিয়ন করার সুবাদে আরো কাছে চলে গেলাম। প্রায়ই যাওয়া হতো নেত্রকোনায় ছাত্র আন্দোলন করার সময়টায়। তবে প্রচুর বকা খেয়েছি স্যারের থেকে আমি নাকি পড়াশোনার থেকে বেশী বাইরের কাজ করি। তবে বলতেন দুটোই করতে হবে। বর্তমানে না পড়লে যে কোন কিছুর মূল্য নেই। বকা খেতাম, হজম করতাম আবার যেতাম। বকা দিলেও স্যারের বাসায় যাওয়া বন্ধ হয়নি বরং বেশীই যেতাম। কারন আমার এই শাসনটার দরকার ছিলো। ছাত্র সংগঠন করা অবস্থায় কিছু সংকটে পড়েছিলাম তা থেকে উত্তরণ এর পথ দেখিয়েও ছিলেন তিনি তবে বিনিময়ে আমাকে বকা খেতে হয়েছিলো আর তাদেরকেও বকা খেতে হয়েছিলো যারা সমস্যার সৃষ্টি করেছিলো। এই জন্যেই বলেছিলাম ভালো অভিভাবক। এরকম অনেককেই অনেক কিছুর সমাধান দেন আমাদের মাস্টার যতীন সরকার। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাধে ছুটি ছাড়া খুব একটা আসা হয়না নেত্রকোনা। তবে আসলে কম বেশী যাই স্যার এর বাসায়। বকা খাওয়ার জন্যেই যাই। কিন্তু আগের মতো এখন আর বকা খাই না। কেন খাই না জানি না। তবে বকা খেতে ইচ্ছে করে। এইতো কদিন আগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের প্রকাশনা ‘কলম’ এর লেখা চেয়ে স্যারকে ফোন দিলাম। অপর প্রান্ত থেকে স্যার বলে উঠলো আমার নাকি পরিবর্তন হয় নাই। হুট করে লেখা চাওয়াটাকে বাজে অভ্যাস বললেও আমার কিন্তু খুব ভালো লেগেছে। দুদিনের মধ্যে লেখাটাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এটার মধ্যেও একটা ভালোবাসা ছিলো। যতীন স্যার কতোটা প্রচার বিমুখ তা তার কার্যক্রম দেখলেই বুঝা যাবে। দেশে যখন পন্ডিতকুল ঢাকামুখী তখন তিনি গ্রাম কেন্দ্রিক। যখন সবাই বোকা বাক্সে (টেলিভিশন) বন্ধী তখন বার বার বলেও তাকে সেই বাক্সে নেয়া যায়না। তিনি প্রচারহীন ভাবেই থেকে যেতে চান জীবনজুড়ে। আমাদের মিডিয়া বাস্তবতাও জানি দিনকে দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে । আপনার সমাজ ও রাজনৈতিক ভাবনা আমাদের ভবিষ্যত এর পথ দেখাবে। সেই দেখানো পথের সাথী হয়েই চলতে চাই জীবন রাস্তায়। রোববার ১৮ আগস্ট আপনার ৮৪ তম জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা। ভালো থাকবেন আর বন্ধ্যা সময়টাকে আরো কিছু দান করে আমাদের মাঝেই বেঁচে থাকুন সুস্থ ভাবে । আমাদের প্রিয় অধ্যাপক যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদক, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সাহিত্য পদক সহ বিভিন্ন পদক পেয়েছেন এই গুণী। পাকিস্থানের জন্ম-মৃত্যু দেখা মানুষটির জন্মদিনে বাংলাদেশের ঘারে ভর করা পাকিস্থানের ভূতকে ধ্বংসের পথগুলো দেখাবেন আমৃত্যু এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির শিকড় উপড়ে ফেলতেও পথ দেখাবেন সেই প্রত্যাশা। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সেই প্রত্যাশায় শুভ জন্মদিন স্যার । লেখকঃ নিহার সরকার অংকুর সাধারণ সম্পাদক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব
×