ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কলকাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মাইনুলের লাশ ঝিনাইদহের বাড়িতে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ আগস্ট ২০১৯

কলকাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মাইনুলের লাশ ঝিনাইদহের বাড়িতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ ॥ কলকাতার সেক্সপিয়ার সরণিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতি গ্রামের কাজী মাইনুল আলম সোহাগ’র (৩৬) গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত মঈনুল ভুটিয়ারগাতি গ্রামের কাজী খলিলুর রহমানের ছেলে। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে সোহাগ’র মৃতদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। তখন বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী, ভাই-বোনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মরদেহ দেখতে এলাকাবাসী ভীড় করে। সকালে বেনাবেল স্থলবন্দর দিয়ে লাশ বাংলাদেশে আনা হয়। তার চাচাতে ভাই জিহাদ মৃতদেহ গ্রহণ করেন। মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। চোঁখের সমস্যা নিয়ে বুধবার কলকাতার এ্যাপোলো হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যান। আজ রবিবার তার দেশে ফেরার কথা ছিল। মইনুল আলম সোহাগ গ্রামীন ফোনের ঢাকার মতিঝিল এলাকার এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় বেচে যাওয়া নিহতের সাথে থাকা তার চাচাতো ভাই কাজী শাফী রহমত উল্লাহ জিহাদ জানান, তারা চোখের চিকিৎসার জন্য গত ১৪ আগস্ট কলকাতায় যান। ১৬ আগস্ট মাঈনুল, ফারজানা সহ তারা তিনজন কলকাতার সেক্সপিয়র সরণিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে তারা রাস্তার পাশের একটি ট্রাফিক পুলিশের পোস্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হঠাত করে রাত ২টার দিকে একটি প্রাইভেটকার তীব্র গতিতে শেক্সপিয়র সরণি ধরে বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের দিক থেকে কলামন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। লাউডন স্ট্রিটের কাছে সেটি অপর একটি প্রাইভেটকারকে সজোরে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে ট্রাফিক পুলিশের পোস্টে ঢুকে পড়ে। সেসময় দুই দিক থেকে আসা দু’টি প্রাইভেটকার উল্টে তাদের গায়ের ওপর এসে পড়ে। এতে তারা সবাই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাদের মঈনুল ও ফারজানাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান তিনি। তিনি আরও জানান, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকান্ডের জন্য তিনি ভারত সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। নিহতের ভাই কাজী সাইফুল আলম জানান, সোহাগের স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। এমন অপমৃত্যু একটি পরিবারের জন্য অপুরনীয় ক্ষতি। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গাড়ী চালানোর ফলে আমার ভায়ের প্রান দিতে হলো। এমন মৃত্যু যেনো আর কারো না হয়। তার জন্য ভারত সরকারের কাছে আমি ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাজী মাইনুল আলম সোহাগ’র মৃতদেহ বাংলাদেশে আনা হয়। তার চাচাতে ভাই কাজী শাফী রহমত উল্লাহ জিহাদ তার মৃতদেহ গ্রহণ করেন। মইনুল আলম সোহাগ গ্রামীন ফোনের ঢাকার মতিঝিল এলাকার এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া ফারজানা ইসলাম তানিয়া কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার চান্দুর গ্রামের মুন্সি আমিনুল ইসলামের মেয়ে। তার চাচাতো ভাই আবু ওবায়দা শাফিন তার মরদেহটি গ্রহণ করেন। ফারজানা ইসলাম তানিয়া সিটি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে রাজধানীর ধানমন্ডি শাখায় কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। এদিকে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে সোহাগ’র মৃতদেহ ঝিনাইদহ শহরের ভুটিয়ারগাতির বাড়িতে পৌছানোর পর পরিবার সহ গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। জোহরের নামাজ পর ভুটিয়ারগাতি মাদরাসা মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
×