ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলায় শেষ সমাধান ॥ ১৯ আগস্ট, ১৯৭১

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ১৯ আগস্ট ২০১৯

 বাংলায় শেষ সমাধান ॥ ১৯ আগস্ট, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। হানাদার বাহিনী আতঙ্ক তাড়িত হচ্ছে, প্রতিদিন পরাজিত হচ্ছে এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করছে। পাক সেনারা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষী এবং বিশেষত বাঙালীরা যে যার অবস্থান থেকে লড়াই করছে, তাদের এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। প্রবাসী জনগণের দেয়া সেবাকে বাংলাদেশ সরকার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করে। তারা ইতোমধ্যে তাদের নীতি ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশের প্রয়োজনের সময়ে দেয়া আত্মত্যাগ ও সেবাকে যথাযথভাবে পুরস্কৃত করা হবে। সরকারের কাছে পাকিস্তানের সহযোগী ও দালালদের কার্যক্রম সম্পর্কেও তথ্যপ্রমাণ আছে এবং যথাসময়ে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুপুর ১২টায় পাকবাহিনীর তিনটি নৌকা শালদা নদী অবস্থান থেকে ব্রাহ্মণ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিবাহিনী ছোট নাগাইশের কাছে নৌকাগুলোর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর দুটি নৌকা পানিতে ডুবে যায় ও ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। পিছনের নৌকাটি দ্রুত পাড়ে ভিড়িয়ে পাকসেনারা নৌকা থেকে নেমে পড়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। প্রায় চারঘণ্টা গুলিবিনিময়ের পর পাকসেনারা পিছু হটে। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর শালদা নদী গুদাম অবস্থানের ওপর কামান আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর একটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় ও ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। কুড়িগ্রামের চিলমারীর হানাদার পজিশন, বাঙ্কার সারাদিনের পর সন্ধ্যায় হঠাৎ যেন দুলে উঠল । ইস্ট বেঙ্গল ও মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শাণিয়ে তুলল। বীরদর্পে অসীম সাহসে সন্ধ্যার আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে থার্ড বেঙ্গল মেজর জামিলের সঙ্গে আরও কয়েক জন এগিয়ে সামনের একটা হানাদার বাঙ্কার দখল করে নেয়। বাঙ্কারেই হত্যা করা হয় ৪ হানাদারকে। রাতের আঁধারে যুদ্ধ আরও রক্তক্ষয়ী ও হিংস্র হয়ে উঠল। পাকিস্তানী স্ট্রং আর্টিলারির কাভারিং থাকা সত্ত্বেও চিলমারীর বুক থেকে পালাতে চায় ১ ব্যাটালিয়ন হানাদার। ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমানের অর্ডার-‘ওদেরকে রিট্রিট করতে দেয়া হবে না। চিলমারীর বুকে ওদের কবর হবে।’ মুক্তিযোদ্ধারা সন্তর্পণে ক্ষিপ্ত গতিতে গিয়ে পজিশন নেয় হানাদারদের পেছনে। ভোর রাতে জোর কদমে ইস্ট বেঙ্গল ঢুকে পড়ে পাকিস্তানী বাঙ্কারে, পজিশনে, ডিফেন্স লাইনে। ইস্ট বেঙ্গলের নির্ভীক যোদ্ধাদের নিশ্চিত লক্ষ্যভেদী আঘাতে ভেঙে পড়তে লাগল হানাদারদের বাঙ্কার, গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেল পাকিস্তানী ডিফেন্স। প্রাণভয়ে চিলমারী ডিফেন্স ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ৭০০ পাকসেনার হেড-বডি ও আহতদের নিয়ে ৭/৮ মাইল দূরে, চিলমারী রেলওয়ের দিকে। পালাবার পথে প্রাণ দিচ্ছে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে। ঢাকায় মুক্তিবাহিনী সাঁটুরিয়া থানা আক্রমণ করে। এ অভিযানে ৪ জন পাকসেনা ও ৫জন পুলিশ নিহত হয় এবং ১৪ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়। থানা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে। খুলনার পাইকগাছায় মুক্তিবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর একটি লঞ্চকে এ্যামবুশ করে। এতে লঞ্চে অবস্থানকারী ২৬জন পাকসেনার সকলেই নিহত হয় এবং লঞ্চটি বিধ্বস্ত হয়। মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ-সিলেট- মৌলভীবাজার সেক্টরে কামালপুরের কাছাকাছি সড়ক সেতু ধ্বংস করে ৩ পাহারারত ৫ রাজাকারকে হত্যা করে। কুশিয়ারা নদীর উত্তরে বাঁধ ধ্বংস করে। লাঙলাতে পাকসৈন্যদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে দু’জন পাকসেনা আহত করে। বড়লেখাতে দুই পাকসেনা হত্যা করে। ছোটা লাদাখে অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী এক রাজাকার হত্যা করে। শুটার কান্দির কাছাকাছি ফাইলাপুরে দুই পাকসেনা ও দুই পাক সমর্থকদের হত্যা করা হয়। জাকিব বাড়ি বাজারে অভিযান চালিয়ে ১২ রাজাকার হত্যা করা হয়। পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে : পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদে অধুনালপ্ত আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত ৯৪ জন সদস্যের সদস্যপদ ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহাল থাকবে। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র রবার্ট ম্যাকক্লক্সি বলেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে বলে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী যে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার সঙ্গে একমত নন। ঢাকায় সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান আওয়ামী লীগের ২৯ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। তারা হচ্ছেন : আবদুল মমিন, আবদুল হামিদ, জিল্লুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মৌলবী হুমায়ূন খালিদ, শামসুর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, আলী আজম, আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ আবদুর রব, মোস্তফা আলী, এ. কে. লতিফুর রহমান চৌধুরী মানিক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, মোহাম্মদ ইলিয়াস, ফজলুর রহমান, এ. কে. শামসুজ্জোহা, আবদুল করিম ব্যাপারী, এ.ভুঁইয়া, শামসুল হক, কে.এম.ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন মোল্লা, এম.এ.গফুর, শেখ আবদুল আজিজ, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, এ.মান্নান হাওলাদার, আবদুর রব সেরানিয়াবাত এবং এনায়েত হোসেন খান। টরেন্টোতে অক্সফাম আয়োজিত একটি বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্যার হিউ কিননীসাইত এতে সভাপতিত্ব করেন আর ব্রিটেনের জুডিথ হার্ট, ভারতের জেনারেল চৌধুরী, প্রফেসর নুরুল হাসান এবং কানাডায় বহু সংসদ সদস্য এই সম্মেলনে যোগদান করেন। এই সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলো সুবিখ্যাত ‘টরেন্ট ডিকলারেশন’ হিসেবে পরিচিত। এই সম্মেলনে জনাব এম আর সিদ্দিকী এবং এমএ মুহিত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন। এর কিছুদিন পর শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কিত খবর আসে। প্রতিনিধিদ্বয়ের জোর তৎপরতায় এর বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হয়। বেশ কিছু কংগ্রেস সদস্য বিবৃতি দেন এবং এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত কথিকামালা বিশ্বজনমত অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সাবেক এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের নামে প্রহসনের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি পাকিস্তানী সামরিক চক্রকে এই বলে হুঁশিয়ার করেছেন যে, পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বাংলাদেশে যা করেছে এবং বঙ্গবন্ধুর বিচারের নামে প্রহসনে মেতে যা করতে যাচ্ছে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এর ফলে পাকিস্তানটাই তাসের ঘরের মতো এক মুহূর্তে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে। দু’ সপ্তাহে পাকিস্তানী জাহাজ আল-আহমাদী মার্কিন সমরাস্ত্র বহনের জন্য ফিলাডেলফিয়া বন্দরে ভেড়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু সেখানে পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয় এবং বিক্ষোভকারীরা ছোট ছোট নৌযান দিয়ে পাকিস্তানী জাহাজের সম্মুখে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে পাকিস্তানী জাহাজটিকে ফিলাডেলফিয়া বন্দরে ভেড়ার সংকল্প পরিত্যাগ করে বাল্টিমোরের দিকে এগুতে হয়। শুধু ফিলাডেলফিয়া বন্দর নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই পাকিস্তানী সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ধিক্কার উঠেছে। পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী সর্বত্রই লাঞ্ছিত। যুদ্ধবাদ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মদদ পেয়ে পাকিস্তানের গোঁয়ার সামরিক চক্র এখনও আস্ফালন করছে সত্যি কিন্তু এর শোচনীয় পরিসমাপ্তি অত্যাসন্ন। বাংলায় শেষ সমাধান শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয় আমরা কি বুঝতে পারছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব বাংলায় একটি ‘চূড়ান্ত সমাধান’ করার জন্য পাকিস্তানের ওপর নীরব অথচ ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করছে? ১৫৬ জনের একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও পুনর্বাসন দল পূর্ব বাংলায় পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে নিক্সন প্রশাসন একটি প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে পাকিস্তানের সম্মতি আমাদের কাছে একেবারেই বিস্ময়কর ছিল না। ইউএনএর দল পাঠানোর প্রকল্পটি মানবিক সাহায্যের ছদ্মবেশে পশ্চিম পাকিস্তানী জেনারেলদের নড়বড়ে শাসন বাঁচানোর জন্য একটি প্রক্রিয়া। আসুন আমরা ত্রান প্রস্তাবনার প্রকৃত চেহারার দিকে লক্ষ্য করি। যেখানে বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী ‘খাদ্য সঙ্কট এবং রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমানোর জন্য পাকিস্তানী প্রশাসনকে সাহায্য’ করার জন্য নিয়োজিত দলের তত্ত্বাবধানে থাকবে। যে পাকিস্তানী প্রশাসন ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দলকে সহযোগিতা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, তারা কারা? সঠিকভাবে বলতে গেলে, জেনারেল টিক্কা খানের সামরিক প্রশাসনের সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে মজুদ খাদ্য নষ্ট করেছে, বাজারে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং চাষীদের গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেছে যাতে করে ধানের বীজ বোনা না হয়। একই সামরিক নেতৃত্বের অধীনে থেকে একই সেনারা ইউনিসেফ এর জীপ গাড়িগুলো নিজেদের কাজে এবং দীর্ঘ পরিসরে কলেরার মাঠ সমীক্ষা ভন্ডুল করার উদ্দেশ্যে যেসব চিকিৎসক নৌকায় করে গ্রামবাসীদের দেখতে যেত, তাদের নৌকা ছিনিয়ে নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো। একইভাবে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত যে নীতি অনুসরণ করেছে তা যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় ও ঘরবাড়ি পুনর্বাসন কাজ জটিল করে তুলছে। সেনারা শুধু হাজার হাজার গ্রাম ও শহরের আবাসই ধ্বংস করেনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা অবাঙালী অথবা তাদের সহযোগীদের হিন্দু, খ্রিস্টান, আওয়ামী লীগের মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ অধিকার করার জন্য এবং বুদ্ধিজীবীদের তাদের ঘর থেকে বিতাড়িত করার জন্য প্ররোচনা দিয়েছে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরী সহায়তার অপর লক্ষ্য হলো পশ্চিম পাকিস্তানী প্রশাসনের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের ওপর যত কাজের ভার ছিল তার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠন, ৪০০০০ নৌযান ও ১০০০০ ট্রাকের প্রাদেশিক নিজস্ব বহর একত্র করাই ছিল প্রধানতম দায়িত্ব। এটা সত্যি যে বাঙালী গেরিলারা পরিবহন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ক্ষেত্রে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছিল। তারা ভারতীয় সীমান্তের ওপারের অভয়ারণ্য থেকে, তাদের ছোট্ট স্বাধীনকৃত ছিটমহল থেকে, এই বদ্বীপের বনজঙ্গলের নিরাপদ আবাস থেকে আক্রমণ করে রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, সেতু উড়িয়ে দিয়েছে, নৌযান ডুবিয়ে দিয়েছে, নদীপথ মাটি ফেলে ভরিয়ে দিয়েছে, জাহাজ মেরামত কারখানা ধ্বংস করেছে। কারন পরিবহন পূর্ব বাংলার সেনাবাহিনীর প্রাণশক্তি। যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানীদের মাঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে, শেষে গিয়ে তাদের বিতাড়িত করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ত্রাণ প্রকল্পের নামে কিছুটা হলেও যোগাযোগ মাধ্যম পুনঃরুদ্ধার করতে পারবে যাতে করে পূর্ব বাংলার ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত হয়। ... নিউইয়র্ক টাইমস ভারতে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জন কেইনথ গালব্রাইট এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, বাংলার এই দুঃখজনক অবস্থায়, চারটি উপাদান নিয়ন্ত্রণ করছে। শরণার্থী সমস্যা এবং অসহনীয় পরিস্থিতি অবিলম্বে হ্রাসকরণের প্রচেষ্টা করা। কিন্তু সহনশীল সমাধান না হলে এই মানুষগুলো তাদের গ্রাম এবং জমিতে ফিরে আসতে পারবে না।...ওয়াশিংটন পোস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের সঙ্গে এক মার্কিন কোম্পানি থেকে ভাড়া নেয়া দুটি জেট বিমান পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লিটে একত্রিত করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সৈন্যবাহিনী আনা-নেয়া এবং পূর্বাঞ্চল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে। বোয়িং ৭০৭-র উভয় প্লেন, ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের কাছ থেকে লিজ নেয়া, এটি সবচেয়ে বড় ইউএস চার্টার বিমান। সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এবং বেসরকারী ব্যক্তিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে পিআইএ জেটলাইনার আহত সৈন্যদের বহন করার জন্য এবং প্রতিস্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়। ভাড়া করা বিমান দুটি পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সেবা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূর্ণ করার প্রচারাভিযান চালানোর জন্য দরকারি মিলিটারি কার্যক্রম চালানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেরিলা তৎপরতায় ঢাকা শহর ও শহরতলী এলাকা এখনও আংশিক নিষ্প্রদীপ অবস্থায় রয়েছে। মুক্তি বাহিনীর সফল আক্রমণে শহরের প্রধান সঞ্চালন কেন্দ্র অকেজো হয়ে পরায় ঢাকা ও সংলগ্ন এলাকাবিদ্যুত বিহীন। সারাদিন ধরে মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সংবাদে বলা হয়েছে, ঢাকা মৃতের শহরে পরিণত হয়েছে, শুধু রাজাকাররা টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে, পাকসৈন্যরা তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যারাকের মধ্যেই অবস্থান করছে।
×