ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোস্তাফা জব্বার

ডিজিটাল মেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মুখোমুখি

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ১৯ আগস্ট ২০১৯

ডিজিটাল মেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মুখোমুখি

মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেস বস্তুত প্রথমবারের মতো আমার সামনে সুযোগ তৈরি করে বহমান প্রযুক্তি, প্রযুক্তিধারা ও নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে প্রাথমিক ও বিস্তারিত আলোচনা করার। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে দৈনন্দিন সমস্যায় ভুগে আসছি। গুজব, অপপ্রচার, সন্ত্রাসের অপপ্রচার, জঙ্গীবাদের প্রসার ও সাম্প্রদায়িকতার প্রসারে ফেসবুক আমাদের জন্য বিশাল সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে। ফলে আমাদের বিশাল আগ্রহ ছিল ফেসবুকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার। আলোচনার টেবিলে ফেসবুক : বার্সিলোনায় আয়োজিত বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮ বেলা আড়াইটায় আমার বৈঠক হলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সভায় ফেসবুক ব্যবস্থাপনার নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং ফেসবুক এশিয়া টিমের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। আমার মাথায় তখন ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি তীব্রভাবে কাজ করছিল। একই সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহার করে চলমান ডিজিটাল অপরাধের বিষয়গুলো এবং ফেসবুকের নিষ্ক্রিয়তা আমার উদ্বেগের বিষয় ছিল। ঢাকায় থাকাকালে বারবার আমরা ফেসবুকের সহায়তা চেয়েও তেমন সাড়া পাইনি। ফেসবুক সেদিন যে কথা বারবার আমাদের বলেছে সেটি হচ্ছে যে, তাদের কমিউনিটি মান যদি লঙ্ঘন না করে তবে তারা কনটেন্ট সরাবে না। বৈঠকে আমি সুযোগ পেলাম বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করার। এমনকি আমেরিকার কমিউনিটি মান আর বাংলাদেশের সামাজিক জীবন যে এক পাল্লায় মাপা যাবে না, সেটি বোঝাতে চেষ্টা করলাম। আমি তাদেরকে বোঝালাম যে, আমেরিকায় কেউ বিকিনি পরে রাস্তায় হাঁটলে সেটি কোন ঘটনাই নয়, কিন্তু বাংলাদেশে কেউ হাঁটুর ওপরে কাপড় তুললে সেটি ভয়ানক ঘটনা। তোমরা হলিউডের ছবিতে যা দেখাতে পার বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ড তার অনুমতিই দেয় না। এর চাইতে বড় বিষয় হলো বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী অবিরাম ফেসবুক ব্যবহার করে। তারা জঙ্গী রিক্রুট করার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে এমন নৈরাজ্য বাংলাদেশ সরকার ও তার দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। আমি হেফাজতের কাহিনীর পাশাপাশি সাইদীকে চাঁদে দেখা যাবার গুজব এবং ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির অপচেষ্টাগুলো তুলে ধরলাম। ফেসবুকের কর্মকর্তারা বিষয়গুলো উপলব্ধি করলেন বলে মনে হলো। আমার সঙ্গে আগেই পরিচিত ছিলেন অশ্বিনী কুমার নামে দিল্লীতে বসবাসরত এক ভদ্রলোক। অশ্বিনী বিষয়টি তার কর্মকর্তাদের বোঝাতে সক্ষম হলো বলে মনে হলো। বৈঠকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সম্মত হলেন যে, তারা বাংলাদেশের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। তাদেরকে আমরা অপরাধীদের তথ্য দেবার জন্য অনুরোধ করলে তাতেও তারা সম্মত হলো। প্রায় দেড় বছর পর যদি সেই সভাটির মূল্যায়ন করি তবে এটি বলতেই পারবো যে বৈঠকের আগের অবস্থার সঙ্গে পরের অবস্থার আমূল না হলেও বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন রয়েছে। বিগত দেড় বছরে ফেসবুক আমাদের প্রচুর অনুরোধ পেয়েছে এবং আমাদের প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ না হলেও আগের অবস্থার চাইতে এখনকার অবস্থা অনেক ভাল। বস্তুত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে পারাটাও একটি বড় অগ্রগতি। ১৯ সালে গিয়ে আবার যে আলোচনা করি তাতে অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে। এবার আমাদের প্রত্যাশা- ফেসবুক নিয়ে আমাদের সঙ্কট কমে আসবে। এবার ফেসবুকের বিজ্ঞাপনে ভ্যাট আরোপ এবং আমাদের হাতে ফেসবুকের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার প্রযুক্তি আসার সুযোগ তৈরি হওয়ায় অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। ৫জিময় বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেস : বার্সিলোনায় পা রেখে অনুভব করছিলাম একটি ভিন্ন প্রযুক্তি যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেস নিশ্চিত করে যে, এই নগরীটি কেবল মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসের রাজধানী হয়নি-পুরো মেলাটাই ৫জিময় হয়ে উঠেছে। হয়তো সেজন্যই আমাদের প্রথম দিনটি প্রচন্ড ব্যস্ততায় কেটেছে। ২৬ তারিখটি এতই ব্যস্ততাময় ছিল যে সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। আমার সঙ্গে ছিলেন টেলিকম বিভাগের সাবেক সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ বাংলাদেশের আরও প্রতিনিধিগণ। দুপুরে ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠক করেই দৌড়াতে হয় গোল টেবিল বৈঠকের জন্য। উক্ত বৈঠকে গিগাবিট ব্রডব্যান্ড, ফোরকে ভিডিও, শক্তিশালী আইওটি এবং অন্যান্য সেবা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওয়ার্ল্ড রেডিও কমিউনিকেশন সম্মেলন-২০১৯ কে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের ৫এ সেবার তরঙ্গ, ৫এ সেবা সহজীকরণ এবং ITU এর মাধ্যমে ৫এ সেবার সমন্বয় করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। গোলটেবিল বৈঠকে আগামী দিনের কর্মক্ষেত্রে রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সম্ভাবনা ও মানব জীবনে তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করি আমি। আমার আলোচনা সম্ভবত একটি ব্যতিক্রমী ধারার ছিল। সবাই যেখানে এইসব প্রযুক্তির সম্ভাবনাগুলোই দেখছিলেন, আমি সেখানে এর চ্যালেঞ্জগুলোও বলছিলাম। আমার স্পষ্ট বক্তব্য ছিল যে, প্রযুক্তি মানুষের বিকল্প নয় বরং মানুষের জীবন যাপনকে সুখকর করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে চীনাদের প্রবল আত্মপ্রকাশ : বার্সিলোনার মেলাপ্রাঙ্গণে পা দিয়েই আমরা টের পেয়েছিলাম যে- আমার দেখা অন্য কয়েকটি মেলার মতো নয়। দিনের শুরুতে আমরা বুঝতে পারি, মেলার মূল সুরটা ৫জি। মেলার মূল প্রবাহ যেহেতু ৫জি সেহেতু ৫জিকে কেন্দ্র করে কারা কি অবস্থানে আছে সেটি দেখা দরকার। আমরা খুব ভাল করেই জানি, ডিজিটাল প্রযুক্তি বস্তুত পশ্চিম গোলার্ধের বিষয়। খোদ আমেরিকা বা ইউরোপ ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নেতৃত্বেই আছে। কিন্তু স্বল্প সময়েই আমরা অনুভব করলাম যে ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ঠিকানাটা বদলে গেছে। সম্ভবত নেতৃত্বটা এখন চীনের দিকে। আমরা তাই চীনের দিকে তাকাতে চাইলাম। হুয়াওয়ের সঙ্গে বৈঠক : গোলটেবিল বৈঠক সেরেই আমরা ছুটতে থাকি চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের স্টলের দিকে। হুয়াওয়ে ততোদিনে আমার পরিচিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নানাভাবে আমি জেনে গেছি যে, চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ডিজিটাল ডিভাইস-টেলিকম, সংযুক্তি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপরিচিত। হুয়াওয়ের স্টলে পা দিয়েই তাদের উদ্ভাবনী শক্তির ব্যাপক নমুনা দেখতে পেলাম। আমাদের সময়কালে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে প্রথমে আমরা সেরা ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য জার্মানিকে জানতাম। এরপর জাপান জার্মানির জায়গা দখল করে। এরপর ধীরে ধীরে কোরিয়া বা তাইওয়ান পরিচিত হতে থাকে। চীনা পণ্য বাংলাদেশে দুই নাম্বারি পণ্য হিসেবেই আসতে থাকে। কিন্তু মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ধারণাটা পাল্টে গেল। বিশেষ করে ৫জি ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবন অন্য যে কাউকে চমকে দেবার মতো। হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা বিস্তারিতভাবে তাদের প্রযুক্তির বিবরণ দিলেন। আমরা তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করলাম। মেলার প্রথম দিনেই আমরা অনুভব করলাম যে এমন সম্মেলনে সরকারী প্রতিনিধি দলের সময়টা আসলে এয়ারটাইট। প্রতিটি সেকেন্ডকে কাজে লাগাতে না পারলে এত অল্প সময়ে বেশি কাজ করা যায় না। হুয়াওয়ের প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনকালে হুয়াওয়ের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে তাদের কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে আমাকে অবহিত করেন। বাংলাদেশে হুয়াওয়ে ল্যাপটপ ও মোবাইলের অ্যাসেম্বলী প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের জন্য ট্যাক্স কমানো ও অন্যান্য প্রণোদনা প্রদানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার বিষয়টি হুয়াওয়েকে জানাই আমি। সেই সময়ে হুয়াওয়ের সবচেয়ে বড় একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছিলো। চীনা রেলের সঙ্গে এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি নামে আলোচনা চলমান প্রকল্প নিয়ে হুয়াওয়ের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। প্রকল্পের অধীনে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করার একটি অংশে হুয়াওয়ের ল্যাপটপ সরবরাহ করার প্রস্তাব ছিল। আমি তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিলাম এটি তাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। ওরা এই সুবাদে বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপন করতে পারে। আমরা ততদিনে কম্পিউটার ও মোবাইলের যন্ত্রাংশের শুল্ক শতকরা এক ভাগে নামিয়ে এনেছি। এর আগের বাজেটে সেই কাজটির পাশাপাশি রফতানিতে শতকরা ১০ ভাগ প্রণোদনার ব্যবস্থাও করা হয়। বলা যেতে পারে ১৭ সালে এককভাবে লড়াই করেই এতটা অর্জন করতে সক্ষম হই। হুয়াওয়ের কর্তৃপক্ষ উৎসাহিত হলো। সেই সুবাদে এই একটি প্রকল্পে আমরা ১৩১ মিলিয়ন ডলার বাঁচাতে সক্ষম হই। ৮০০ ডলারের ল্যাপটপকে আমরা ৫৯৫ ডলারে নামিয়ে আনতে সক্ষম হই। যদিও প্রকল্পটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি তথাপি আমাদের সেই সফরটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন ছিল বলেই আমি মনে করি। প্রাথমিকভাবে ল্যাপটপের দাম কমাতে হুয়াওয়েকে স্থির মনে হলেও পরে আমরা তাদেরকে নমনীয় হিসেবে পাই। ১৯ সালে যখন আমেরিকানদের হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি অবরোধ আরোপ করতে দেখি তখন এটি বোঝা যায় যে, একদিকে হয়তো হুয়াওয়ে উদ্ভাবনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে অন্যদিকে আমেরিকার উদ্ভাবনের সেই ক্ষমতা এখন আর অবশিষ্ট নেই। ১৯ সালে বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা ভ্রমণের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। জেডটিইর সঙ্গে সভা : সেদিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আরও এক চীনা প্রতিষ্ঠান জেডটিইর সঙ্গে বৈঠক। সভায় সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ আমার সঙ্গী হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ZTE কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। আমরা তাদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ৪ টায়ার ডাটা সেন্টার যথাযথভাবে শেষ করার প্রস্তাব করি এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যেসব সমস্যা রয়েছে তার দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানাই। বস্তুত, আমি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিই যে তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কেবল বিলম্ব করছে না বেশ কিছু অনিয়মও করছে। তারা ত্রুটি দূর করাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও গতিশীল হবারও প্রতিশ্রুতি দেয়। জেডটিই নিয়ে আমাদের যথেষ্ট শঙ্কাও ছিল। কেবল যে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ফোর টায়ার ডাটা সেন্টারের সঙ্কট তা-ই নয়, টেলিকম বিভাগের এমওটিএন প্রকল্প নিয়েও উদ্বেগ ছিল। যদিও তখনও প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়নি তথাপি ফোর টায়ারের অভিজ্ঞতা আমাদের সতর্ক করছিল। সুখের বিষয় যে আলোচনা ফরপ্রসূ হয় এবং জেডটিই তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ফোর টায়ার ডাটা সেন্টারের বিষয়ে যত্নবান হবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। মন্ত্রীদের ভাবনায় কেবল ৫জি : পরের দিন সকাল দশটায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রীদের অধিবেশনে ‘গতিশীল ডিজিটাল যুগের জন্য নীতিনির্ধারণ’ বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিতে হলো আমাকে। বস্তুত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়েই কথা বলতে হলো। বাস্তবতা হচ্ছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বললেই এর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ৫জি সবার সামনে উঠে আসে। ৫জির ফলে ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো যেভাবে শিল্পায়ন, বাণিজ্য, ব্যবসা, শিক্ষা, সংযুক্তি ও জীবনধারায় প্রভাব ফেলবে সেটিই সকলের আলোচ্য বিষয় ছিল। সুযোগটা পাওয়ায় একটি লাঙ্গল জোয়ালের দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের গল্পটা বিশ্ববাসীকে শোনাতে পারলাম। সবার কাছেইতো অবাক লাগার কথা যে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশ দুনিয়ার সবার আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করতে পারে। এটি আরও অবাক করার মতো ছিল যে দেশটি কেবল ঘোষণা করেই বসে থাকেনি বরং এর রূপান্তরে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে এবং অন্য বহু সমগোত্রীয় দেশকে অতিক্রম করতে পেরেছে। আমাদের উত্থাপিত সূচকগুলো সবাইকে চমকে দিচ্ছিল। বৈঠক থেকে অনুভব করলাম বাংলাদেশ তার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে অতি সুপরিচিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ে বহুবিধ প্রশ্ন পেতে থাকলাম। সরকারী সেবার ডিজিটাইজেশন থেকে তৃণমূলে সেবা পৌঁছানো মন্ত্রীদের আকর্ষণের বিষয় হতে থাকল। মন্ত্রীদের স্বেচ্ছায় চা-কফির আড্ডায় পেতে শুরু করলাম। আগ্রহ দেখলাম টেলিকম সেক্টর নিয়েও। বাংলাদেশের টেলিকম এত দ্রুত প্রসারের বিষয়টি জানার আগ্রহ ছিলো নেপাল-ভুটানের মতো দেশগুলোর। মাত্র কদিন আগে নিলাম করা ৪জি নিয়েও কথা হলো। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ডিজিটাল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে টেলিকম সেক্টরের ভূমিকাও তুলে ধরি। ঢাকা, ২৯ জুলাই ১৮, সর্বশেষ আপডেট ১০ আগস্ট ১৯ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক
×