ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

জনকের ঋণ শোধের দেশী-বিদেশী দায়

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১৯ আগস্ট ২০১৯

 জনকের ঋণ শোধের দেশী-বিদেশী দায়

বাঙালী ও বঙ্গবন্ধু যে অভিন্ন সেটা বার বার প্রমাণিত হবার পরও আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের প্রজন্ম অবশ্য বুঝতে না পারারই কথা। যে সময় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল তখনও তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়। কিন্তু তারপরও তাঁর নির্মম হত্যাকান্ডে মানুষ ফুঁসে উঠতে পারেনি। কেন পারেনি তার একশ’ একটা ব্যাখ্যা দেয়া যেতেই পারে। কিন্তু তাতে কষ্ট বা ক্রোধ লাঘব হবে না। আমরা যা হারিয়েছি তা আর কোনকালেও ফিরে পাব না। তিনি আমাদের কি কি দিয়েছেন তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তারপর এক শ্রেণীর মানুষের চোখ খোলেনি। তাদের চোখে পাকি ঠুলি লেগে আছে। এবারের পনেরো আগস্ট বিদেশে যারা আওয়ামী লীগের শাখা প্রশাখা খুলে বসে আছে তাদের কতটা প্রভাবিত করেছে বোঝা মুশকিল। আমাদের সিডনি শহরে আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমতি নেই। কিন্তু তাদের শোক দিবসের কর্মকান্ড কেমন জানি সীমিত। অথচ একসময় এই শহরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের শোক সভাই ছিল বিশাল ও ব্যাপক। যা ইতিহাস ও স্বদেশের শিকড়ে থাকতে প্রেরণা যুগিয়েছিল। আজ কি তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে? আমরা কি ভুলে গেছি এখনও বেশ বিরাট এক অংশ তাঁকে জাতির পিতা বলে স্বীকার করতে চায় না? তারা সময় সুযোগ মিললেই তাঁর অন্যায্য সমালোচনা আর নিন্দায় মেতে ওঠে। আমরা কি এও মনে রাখব না বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বেনিফিশিয়ারীরা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। ঘাতকদের অনেকেই ধরা পড়েনি। তারা কেউ কিন্তু দেশে নেই। সবাই পালিয়ে আছে বিদেশে। এই তালিকায় এমন একজন আছে যার আস্ফালন আর চিৎকার কোনদিন ভুলব না আমরা। রেডিও স্টেশন দখল করার পর আমি ডালিম বলছি বলে আস্ফালন করা ঘাতককে বাঙালী মাফ করতে পারে না। এদের বিচার হয়নি এখনও। এ কার গাফিলতি? এখন তো আওয়ামী লীগ টানা তিনবারের মেয়াদে সরকারে। তাদের কি করণীয় কিছু নেই? খালি বিবৃতি আর শোক দিবস ঘনিয়ে আসলে সান্ত¡নাসুলভ কথা বলাই তাদের কাজ? আমরা কেন জানি না বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের বাইরে ভাবতে পারি না। অথচ তিনি আমাদের সবার। যিনি জাতির পিতা তিনি কেন এক দলের হবেন? তাই আমার ধারণা এ জন্য সবার কণ্ঠ ও লেখনি সরব হওয়া উচিত। বিশেষত যারা বিদেশে বসবাস করেন তারা যেন সোচ্চার হন। আমরা তো বলতে গর্ব করেই বলি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি আমরা। সেসব দেশে রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রপ্রধান ও জাতির পিতাকে হত্যা করে পালিয়ে আসা কারও থাকাটা কি সুখের কিছু? এতে কি প্রমাণিত হয় না উন্নতি আর গণতান্ত্রিকতার ভেতরেও গলদ আছে। যারা তাদের মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বলে গর্ব করে আমরা কি তাদের কাছে জানতে চেয়েছি মানবিকতার সংজ্ঞা কি? মানবিকতা বা হিউম্যান রাইটস মানে কি? আমি বা আপনি রাত দুপুরে কারও বাড়িতে চড়াও হয়ে তাদের সবাইকে এমন কি দারোয়ান কাজের লোক শিশুকে হত্যা করে এসে বলব, দেখুন আমার জান নিয়ে টানাটানি আমাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতা বাঁচান? আর তাই হবে সত্যিকারের মানবিক বা গণতান্ত্রিক আচরণ? আমাদের মনে রাখা দরকার বাংলাদেশে আমরা যা দেখেছি তা কিন্তু ভুললে চলবে না। কারণ, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের আগে যে সব মিডিয়া সম্পাদক বা সেলিব্রেটিরা বঙ্গবন্ধু বলতে পাগল ছিল তাঁর বাকশাল নিয়ে রহস্য উপন্যাস লিখতে আগ্রহী ছিল তারাই পরদিন ভোল পাল্টে লিখেছিল দেশ নাকি একনায়কের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। কেউ কেউ এই হত্যাকা-কে ইতিহাসের অমোঘ নিয়তি বলতেই দ্বিধা করেনি। এরাই আবার শেষ বয়সে শেখ হাসিনার কাছে ধর্ণা দিয়েছে পদ-পদবীর লোভে। বড় বিচিত্র আমাদের জাতিসত্তা। আমরা কাউকে একসঙ্গে মানি না। সম্মান করি না। করলে এমন কঠিন মন খারাপ করা শোকের দিনে কেউ কেক কাটতে পারত? তাও আবার ভুয়া জন্মদিনের কেক। এরা সব পারে। আপনি খেয়াল করলেই বুঝবেন আওয়ামী লীগের বাইরে নেই কেউ। এটা কি সম্ভব? এ আসলে ছদ্মবেশ। দুঃখজনক হলেও সত্য বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিকের ভেতরও ঝামেলা আছে। আছে নানা ধরনের ধান্দাবাজি। মূলত আমাদের মাতমের দরকার নেই। আমরা চাই খুনীদের বিচার ও শাস্তি। কারণ তা হলেই ভবিষ্যত নিরাপদ হবে। যারা পালিয়ে আছে তাদের সঙ্গে বিএনপির যোগসাজশ সবার জানা। সঙ্গে আছে পাকিস্তানের মদদ। পাকি লবিং আর টাকার সঙ্গে জুটেছিল মধ্যপ্রাচ্যের ঢালাও সরবরাহ। সে জায়গাটা এখন ভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এখন আর আগের পলিসিতে নেই। তাদের নিজেদের ঘরেই সমস্যা। কারও কারও আর্থিক হাল খুবই খারাপ। যে লিবিয়া মদদ দিত তাকে আমেরিকা সাইজ করে ফেলেছে। সেখানে মানুষের জান নিয়ে টানাটানি। বিশ্বায়ন আর মিডিয়ার কল্যাণে দুনিয়া মানুষের হাতের মুঠোয়। পাকিস্তান নিজেই একঘরে। এমন সময়েও যদি আমরা খুনীদের ধরতে না পারি আর কখন তা হবে? [email protected]
×