ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাসব্যাপী প্রদর্শনী জাদুঘরে

উত্তাল সময়ের লিফলেট গুলিবিদ্ধ ছবি, মানপত্র বলছে মুজিবের কথা

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৯ আগস্ট ২০১৯

উত্তাল সময়ের লিফলেট  গুলিবিদ্ধ ছবি, মানপত্র  বলছে মুজিবের কথা

মোরসালিন মিজান ॥ প্রদর্শনীটিকে নতুন বলা যাবে না। প্রতি বছর আগস্টে জাতীয় জাদুঘর এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এবারও তা-ই। দেয়ালজুড়ে আলোকচিত্র। শিল্পীর আঁকা ছবি। গ্লাস শোকেসে কিছু পত্রিকা। ম্যাগাজিন। মানপত্র। উত্তাল সময়ে প্রকাশিত পুস্তিকা লিফলেট ইত্যাদি আছে। গত ৩ আগস্ট নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলছে এখনও। যারা আগে দেখেননি তাদের কৌতূহলী করবে। করছে। গ্যালারির দেয়ালে বেশ কিছু আলোকচিত্র। ১২০টির মতো ছবি। প্রায় প্রতিটি ফ্রেমে শেখ মুজিব। নানা ভাব ভঙ্গিতে ধরা দিয়েছেন তিনি। মহান নেতার জীবন এবং সংগ্রাম এক সূত্রে গাঁথা। সেভাবেই সাজানো হয়েছে ছবিগুলো। দেখতে দেখতে বাংলাদেশ এবং বাঙালীর ইতিহাস সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। বরেণ্য শিল্পীদের আঁকা ছবিতে খুঁজে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুকে। মোট ১৬টি ক্যানভাস। ক্যানভাসে প্রিয় পিতার মুখ। প্রতিকৃতি। বিখ্যাত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী জলরঙে নেতাকে এঁকেছেন। বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা শেখ মুজিবকে সযত্নে খুঁজে নিয়েছেন তিনি। মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছেন হাশেম খান। তাঁর ছবিতে বিপ্লবী চেতনা। বঙ্গবন্ধুর প্রাসঙ্গিক উচ্চারণ, কিছু নির্দেশনা ছবির সঙ্গে যুক্ত করেছেন শিল্পী। শেখ আফজাল, শাহজাহান আহমেদ, বিকাশ প্রানেশ, কুমার মন্ডল ও রাকিব হাসান মঞ্জুও নিজেদের মতো করে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেছেন। একটি ছবি গুলিবিদ্ধ। মূল ফ্রেমটি ভেঙ্গে পড়েছে। ভাঙ্গা কাঁচ হুবহু রেখে নতুন ফ্রেমে ছবিটিকে ধরার চেষ্টা করেছেন আয়োজকরা। ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানীরা ধানম-ি ৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুড়েছিল। বুলেটের ক্ষত নিয়ে আজও টিকে আছে ছবিটি। প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে কয়েকটি মানপত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়ানোর সময় বঙ্গবন্ধুকে এসব মানপত্র প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত সরকার। জনগণও অভিন্ন আবেগ নিয়ে বাঙালীর পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই আবেগ মানপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। একাত্তর সালে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা ম্যাগাজিন রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। অমৃত বাজার পত্রিকা, দ্য ন্যাশন, জয়বাংলা, দেশ বাংলা, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, জাগ্রত বাংলা- আরও কত নাম! দেশী-বিদেশী পত্রিকার পাতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। মহান নেতা শেখ মুজিবের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব খবরের উৎস হয়ে এসেছেন মুজিব। পাশেই দুর্লভ পুস্তিকা। প্রচারপত্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত পুস্তিকা প্রচারপত্রগুলো গর্বের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ‘বাংলাদেশ স্পিক্স’, ‘জয় বাংলার দামাল ছেলে’, ‘মুক্তিফৌজ’, ‘আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা’, ‘বজ্রকণ্ঠ’ ‘স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা’, ‘আমি মুজিবর বলছি’, ‘ঢাকার পথ স্বাধীনতার পথ চলো ঢাকা’ ‘বাংলাদেশ পোয়েমস’, ‘বাংলাদেশ শোষণের চিত্র’, ‘নেতাজী বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রকাশনা মুক্তিযুদ্ধ ও মহান নেতা সম্পর্কে অনেক চমকপ্রদ তথ্য দেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের লেখা, নিজেকে নিয়ে লেখা বই আছে প্রদর্শনীতে। সম্প্রতি প্রকাশিত বইগুলো রাখা হয়েছে। তবে প্রদর্শনীর দুর্লভ পুস্তিকা বা প্রচারপত্রগুলো পড়ে দেখার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হচ্ছে। এই সীমাবদ্ধতা যে কোন উপায়ে দূর করা সম্ভব ছিল। সেটি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ করেনি। আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।
×