ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এডিস নিধনে আজ থেকে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২০ আগস্ট ২০১৯

এডিস নিধনে আজ থেকে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় আজ মঙ্গলবার থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে এডিস মশা নিধন করতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। সোমবার রাজধানীর এগারোটি প্রতিষ্ঠানকে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করে দুই সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে ডিএনসিসি এলাকা মশক সম্পূর্ণ নিধন করতে যে বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের প্রথমধাপে সতর্ক করা হবে কিন্তু পরে একই বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলে জেল জরিমানাসহ আইনানুগ কঠোর শাস্তির বিধান প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দেন মেয়র। সোমবার রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে মশানিধন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র নারী কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, কাউন্সিলর মফিজুর রহমান ও কাউন্সিলর সফিউল্লাহ সফি, ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু, অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হেমায়েত হোসেন, ডিএসসিসি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারসহ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আতিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার থেকে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি বাড়িতে চিরুনি অভিযান শুরু হবে। কোন বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হবে। ১০-১৫ দিন পরে আবার গিয়ে পরীক্ষা করা হবে। মশা বা লার্ভা পাওয়া গেলে জেল জরিমানা করা হবে। কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, বাস টার্মিনালে টায়ারের স্তূপ সহ্য করা হবে না। যারা রেখেছেন তাদের জেল-জরিমানা করতে বলেছি ম্যাজিস্ট্রেটকে। তিনি বলেন, শুধু বাস টার্মিনালে নয়, সিটি করপোরেশনের কোথাও পানি জমে থাকলে তার জন্য যে দায়ী, তাকেও জরিমানা করতে বলেছি। যদি আমিও দোষী হই, তাহলে আমাকেও জরিমানা করা হোক। মেয়র বলেন, আমি বলতে চাই, কেউ আইনের উর্ধে নয়। এছাড়া মশার আখড়া ও ময়লার স্তূপ মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনের খালটি দ্রুত উদ্ধার করা হবে। এজন্য যা যা প্রয়োজন তাই করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ওয়াসা নাকি আমাদের খাল এটি তা দেখার বিষয় নয়। নাগরিক সুরক্ষার জন্য আমরা এ খালটিকে পরিষ্কার করব। বর্তমানে এ খালটি দিয়ে ময়লার ভাগাড়ের ওপর দিয়ে হেঁটেও যাওয়া সম্ভব। এভাবে চলতে পারে না। তাই খাল যারই হোক আমি নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করব। এ জন্য মেশিনসহ যা যা লাগবে তাই দেয়া হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি, থানা থেকে পুরনো গাড়িগুলো সরিয়ে দিতে। তিনি মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। তিনি বলেন, নতুন করে আরও ২শ’ ফগার মেশিন ও দেড়শ স্প্রে মেশিন আনা হয়েছে। মশা মারার কার্যক্রম তদারকি ও ফলাফল গণমাধ্যমের কাছে জানানো হবে। আতিকুল ইসলাম বলেন, আমার সিটি কর্পোরেশনের কোথাও যদি পানি জমে থাকে, মিডিয়াতে যদি নিউজ আসে তাহলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে ফাইন করার নির্দেশ দিয়েছি, ওই কর্মকর্তাকে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছি। আর যদি আমার অপরাধ থাকে আমাকে ফাইন করুন, আমি আইনের উর্ধে নই। মেয়র বলেন, আমরা প্রতিটি বাড়িতে চিরুনি অভিযান শুরু করছি। আমি বলেছি আমি আর আমার অফিস করতে চাই না। আমার গাড়িতেই আমি অফিস করব। এই কয়েক দিন গাড়িতেই অফিস করব। যেখানে জমা পানি, স্বচ্ছ পানি সেখানেই এডিস মশার জন্ম নেবে। রোদ হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে এডিস মশা হবেই। তাই সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। যার যার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমার সিটি কর্পোরেশনে পানি জমে আছে, আমি ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছি, ‘যদি আমার সিটি কর্পেরেশনের কোথাও পানি জমে থাকে, যদি কোন নিউজ জানতে পারি। সিটি কর্পোরেশনের যে দায়িত্বে তাকেই জরিমানা করতে বলেছি। তাকেও জেল দিতে বলেছি। দরকার পড়লে মেয়রকেও ফাইন দিবা, জরিমানা দিবা। আমিও আইনের উর্ধে নই। সিটি কর্পোরেশনের যদি কোন কাজের অবহেলা থাকে তাহলে তার দায়িত্ব মেয়রকে নিতে হবে। অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও সিটি কর্পোরেশনের ফ্রি কনসালটেন্ট প্রফেসর কবিরুল বাসার বলেন, এডিস মশার মূল আবাসস্থল টায়ার। সাত দিন আগে কীটনাশক আনা হয়েছে। তা ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ কার্যকর। তবে জনবল সঙ্কটের কারণে ছিটানো যাচ্ছে না। ১১ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় নয়টি ভবনের মালিককে জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিভিন্ন অঙ্কে এসব মালিকদের মোট ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য ও আদায় করা হয়। সোমবার ডিএসসিসি পাঁচটি আঞ্চলিক এলাকায় আলাদা আলাদা অভিযান চালানো হয়। এ সময় নয়াপল্টন, সেগুনবাগিচা, তোপখানা, ধানম-ি, যাত্রাবাড়ী এলাকার এসব ভবনে এডিস মশার লার্ভা ও এডিস মশার প্রজনন সহায়ক পরিবেশের সন্ধান পান ডিএসসিসির ম্যাজিস্ট্রেটরা। করপোরেশনের পক্ষ থেকে চলমান এডিস মশার লার্ভা নিধন অভিযানের অংশ হিসেবে পাঁচটি অঞ্চলে পরিচালিত এ অভিযানে অঞ্চল-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জাহিদ হোসেন ৫০ নয়াপল্টন ইস্টার্ন ভিউকে ৭৫ হাজার টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান ধানম-ি ৮/এ (নতুন) সড়কের ৩১৭, ৩১৭/১ এবং ৩১৭/২ হোল্ডিংয়ে লার্ভা পাওয়ায় এস ফার্ম লিমিটেডের নির্মাণাধীন ভবনকে ৫০ হাজার টাকা এবং ২৪/ এ/বি তোপখানা রোডের ভবন মালিককে ৫০ হাজার টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাবর আলী ১৭/১ লালবাগ, জগন্নাথ সাহা ভবন মালিককে ১০ হাজার টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহীদ উল্লাহ, আতিকউল্লাহ ও সোনিয়া হোসেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়ায় পাঁচ বাড়ির মালিককে মোট ৪৩ হাজার টাকাসহ সর্বমোট দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ডিএসসিসির মোবাইল কোর্ট। এদিকে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় পারটেক্স গ্রুপকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে মহাখালী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে মহাখালী ওয়্যারলেস গেটে পারটেক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের পেছনে একটি গরুর খামারে অপরিচ্ছন্ন, নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়। সেখানে বেশ কিছু পরিত্যক্ত টায়ার, কন্টেনার, বোতল, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পাত্রের ভেতরে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ব্যাপক প্রচারণার পরেও এডিস মশার লার্ভা ও এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী পারটেক্স গ্রুপকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরিত্যক্ত মালামাল, আবর্জনা ও টায়ার দ্রুত অপসারণের জন্য তাদের সতর্ক করার পাশাপাশি এ জরিমানা আদায় করা হয়। ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে যান আতিকুল ইসলাম। মহাখালীতে পুরনো টাওয়ারে পানি জমে থাকায় আরও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় একটি প্রতিষ্ঠানকে। সেখানে সন্ধান মেলে এডিস মশার লার্ভার। ওষুধ স্প্রে করতেই বেরিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। বিষয়টি দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সঙ্গে সঙ্গে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা দিলেন জরিমানা ও শাস্তির। যদিও মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনের ওই জমির মালিক কে, শুধু তা-ই জানা গেছে। তবে কে টায়ার রেখেছে তা শনাক্ত করা যায়নি। টার্মিনালের পেছনের খাল ও এডিস মশা জন্মাতে পারে- এমন সম্ভাব্য জায়গাগুলো পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় একটি টায়ারে মশার ওষুধ স্প্রে করার পর অসংখ্য মশা দেখতে পাওয়ায় টায়ার মালিককে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাতদিনের কারাদ- প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু টায়ার মালিক কে- তা অভিযান পরিচালনা পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। এ সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এসব টায়ার থেকে এডিস মশা জন্মায়। আমি ১৫ দিন আগে এসব টায়ার সরাতে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ তা করেনি। এজন্য এ টায়ার মালিককে জরিমানা এবং অনাদায়ে শাস্তি দেয়া হলো। এটি টার্মিনাল এলাকার বাইরে। বাস মালিকরা আমাকে বলেছেন, এটি ওয়াসার জায়গা।
×