ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুমধুম সেতু দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২০ আগস্ট ২০১৯

  ঘুমধুম সেতু দিয়ে রোহিঙ্গা  প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যে শুরুতে যারা প্রত্যাবাসিত হতে ইচ্ছুক তাদের মতামত আজ নেয়া হবে ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে। স্বেচ্ছায় তারা যেতে রাজি হলে পরে তাদের নিয়ে আসা হবে ট্রানজিট ক্যাম্পে। ওপারেও ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে প্রত্যাবাসিতদের জন্য বিপুলসংখ্যক আশ্রয় ক্যাম্প। চীন এবং জাপান সরকারের উপর্যুপরি চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাপক তৎপর বলে সরকারী বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। এদিকে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মোঃ আবুল কালাম সোমবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ সরকার পক্ষ সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। একেবারে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি এখন চলছে। আজ তিন ক্যাম্প থেকে যাদের প্রত্যাবাসন করার তালিকা হয়েছে তন্মধ্যে একটি ক্যাম্পের সদস্যদের কাছ থেকে ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে মতামত নেয়া হবে। স্বেচ্ছায় তারা প্রত্যাবাসনে রাজি হলে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হবে। আরআরসি আবুল কালামের সঙ্গে সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে মিয়ানমার তদন্ত দলের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নৌপথে সিদ্ধান্ত বাতিল করে স্থলপথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করতে মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেন, টেকনাফের কেরুনতলী নৌপথের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বান্দরবানের ঘুমধুমের মৈত্রী সেতু দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে যে ৩ হাজার ৫৪০ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়েছে তাদের অবস্থান ২৫, ২৬ ও ২৭ নং ক্যাম্পে। ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে এসব ক্যাম্পে গিয়ে আজ লিস্টেড রোহিঙ্গাদের মতামত নেয়া হবে। তাদের মতামতের ওপরই নির্ভর করছে ২২ আগস্টের প্রত্যাবাসন কাজ শুরুর বিষয়টি। প্রত্যাবাসিত হওয়ার পর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কীভাবে রাখা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আরআরসি কমিশনার জানিয়েছেন, সেদেশের সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তারা প্রথমে রিসিপশন সেন্টারে যাবে। সেখান থেকে নবনির্মিত ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হবে। এদিকে, মিয়ানমার পক্ষ বিদেশী গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আগামী ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে উভয় দেশ প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা সম্মত। এরপরই কক্সবাজারে প্রত্যাবাসন টাস্কফোর্সে জরুরী সভা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগে গত বছরের ১৫ নবেম্বর উখিয়ার ঘুমধুম ও টেকনাফে নাফ নদী দিয়ে কেরুনতলী প্রত্যাবাসন ঘাট দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা হয়। কিন্তু রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে অনাগ্রাহী প্রদর্শন করায় সে দেশে আর তা হয়নি। এদিকে, কক্সবাজারে বিভিন্ন প্রশাসন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা জোরদার করেছে। প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। টাস্কফোর্স কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, ২২ আগস্টকে টার্গেট করে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সদস্যদের অনেকে এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। এরই মধ্যে গত ৯ আগস্ট ২১ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ নিজ উদ্যোগে মিয়ানমারে ফিরে গেছে। ফিরে যাওয়ার বিষয়টিতে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। তারা নিজ উদ্যোগে নিজ দেশে অর্থাৎ রাখাইনে ফিরে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রত্যাবাসনে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়নি। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে তার পেছনে চীন ও জাপানের চাপ রয়েছে তা কার্যকর করার জন্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের নবেম্বরে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করলেও প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে এ পর্যন্ত দরকষাকষি করে গেছেন। ঐ চুক্তির পেছনে চীন সরকারের ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন তালিকায় ৩ হাজার ৪৫০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি বলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে এর আগে ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠানো হয়। এর মধ্য থেকে এই ৩ হাজার ৪৫০ জনকে বৈধ বলে তারা পাল্টা তালিকা প্রেরণ করেছে। কক্সবাজারের প্রশাসন জানিয়েছে, কোন রোহিঙ্গাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে পাঠানো হবে না। বর্তমানে রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতিতে উন্নতি ঘটেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জীবিকা প্রকল্প নেয়া হয়েছে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সমঝোতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি এখনও খোলাসা করা হয়নি। এক্ষেত্রে মিয়ানমার পক্ষ এনভিসির (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট) ওপর জোর দিচ্ছে। যে সার্টিফিকেটের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা আবাসিক অধিকার পাবে। ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইনের অধীনে যেটা ভবিষ্যতে নাগরিকত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে না যায় সে লক্ষ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার উস্কানি।
×