ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২০ আগস্ট ২০১৯

 সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে

শহরের মধ্যবিত্ত ও সচ্ছল অনেক পরিবারের আদরের সন্তানকে তার নিজস্ব সব কাজ নিয়মিতভাবে বাড়ির কাজের লোক ও অন্যেরা করে দেয়। মা-বাবা মনে করেন, তাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো পড়ালেখা, কম্পিউটার ব্যবহার, টিভি দেখে গান শুনে আনন্দ করে সময় কাটাবে। ছাত্রাবস্থায় এটুকুই তার কর্তব্য, নিজের ভাল-মন্দ ছাড়া তার কোন কিছুই বোঝা ও এখনই বাড়ির আর কোন কাজ শেখার কোন প্রয়োজন নেই বলে মনে করে। ফলে তারা ছোটবেলা থেকে নিজের অজান্তে পরনির্ভরশীল ও স্বার্থপর হয়ে বেড়ে উঠছে। সব সময় তার সব কাজ অন্যেরা দায়িত্ব নিয়ে করে দেবে বলে আজীবন আশা করে। সে শুধু নিজেকে নিয়েই চিন্তা করতে শেখে, ছোট ছোট বিষয়ে এরা বেশি কষ্ট পায়। তারা কোনদিন নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি পরিপূর্ণ দায়িত্ববোধ শেখে না, কারণ অন্যের সেবা পাওয়ার আশা তার আকাশচুম্বি হয়ে ওঠে। এরূপ অত্যন্ত আদর-যত্নে লালিত ছেলে-মেয়েরা পরবর্তী জীবনে মানসিকভাবে দুর্বল বা মনরোগগ্রস্ত হতে পারে। আজীবন সে ‘কি পেলাম আর কি পেলাম না’ হিসাব কষে যাবে। আর দুর্বিষহ করে তুলবে নিজের ও অন্যের জীবনকে সন্তানের ইচ্ছাপূরণ : সন্তানের সকল ধরনের চাহিদা সব সময় পূরণ করে দেয়া মোটেই ঠিক না। সে যা কিছুই চায় তা তার স্বাস্থ্য, আচরণগত শিক্ষা ও মানসিক বিকাশের জন্য কতটা সহায়ক বা ক্ষতিকর, তা অবশ্যই মা-বাবা বিবেচনা করবেন। সব সময় সে যা কিছু চাইবে, তাৎক্ষণিক তার আশা পূরণ না করে, সময়ের ব্যবধান রক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুকাল থেকে ধৈর্য শিক্ষা না পেলে, সে বড় হয়ে, নিজে নিজে ধৈর্যশীল হতে পারবে না। কিছুতেই। মনে রাখতে হবে, শিশু তার নিজের ভাল-মন্দ বোঝে না। শৈশব থেকে সবকিছু পেয়ে অভ্যাস হলে, পরবর্তীতে সে জেদী ও রাগী হয়ে যেতে পারে। বড় হলে সে যা চায়, তা না দিয়ে আর পারা যাবে না। অতএব সাবধান, ভালবাসার কারণে কোন বিবেচনা না করে, সব চাহিদা পূরণ রকার অভ্যাস গঠন করে, নিজেই নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না। পরিবারে মানসম্পন্ন সময় কাটানো : সন্তানের সঙ্গে মিলেমিশে মা-বাবার যথেষ্ট পরিমাণে মানসম্পন্ন সময় কাটানো প্রয়োজন। নিজেরা প্রতিদিন অন্তত দু’এক ঘণ্টা শুধু সন্তানকে একান্তভাবে সময় দিতে পারেন। যেমন- সন্তানের সঙ্গে একসঙ্গে কিছু রান্না করে, খেলাধুলা বা বিনোদনমূলক কোন কাজ করে ও মজা করে গল্পগুজব করলে পারস্পরিক সম্পর্কের অনেক উন্নতি ঘটে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বার বার ভুল ধরা, অহেতুক ভয় সৃষ্টি করা ও অন্যের সঙ্গে তুলনা করা মোটেই ঠিক না। এতে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে ও ভুল বোঝার অবকাশ থাকে। ফলে জীবনকে জটিল ও কঠিন বলে মনে হয়। বাড়িতে সব সময় সকলে হাসি মুখে থাকার অভ্যাস করা প্রয়োজন। হাসি মুখে পরিবারে সবার সঙ্গে কথা বলা ও একে অন্যের প্রশংসা করার চর্চা করা হলে, সবার মন ভাল থাকে এবং পরিবারে শান্তি বজায় থাকে। ফলে পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মানবোধ বৃদ্ধি পায় একে অন্যের সমস্যার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। প্রশংসা করে কাজের উৎসাহ বৃদ্ধি করলে, পরিবারের সকলের আত্মস্বীকৃতি ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে জীবনযাপন অনেক সহজ, সাবলীল ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। ছেলে-মেয়ের মনে আদেশ নিষেধ পালনের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রতিটি অভিভাবকের প্রধান ও নৈতিক দায়িত্ব। শৈশবেই মা-বাবা, শিক্ষক ও বড়দের সম্মান করার অভ্যাস থাকলে, বড় হয়ে সে ছোটবড় সবাইকে স্নেহ ও সম্মান করবে। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া, খেলাধুলা ও বিনোদনের সময় কিভাবে কাটাচ্ছে, তার সার্বিক খোঁজ-খবর শত ব্যস্ততার মধ্যেও মা-বাবা উভয়কেই নিতে হবে। এর মাঝে কোনরূপ অসঙ্গতি ধরা পড়লে দ্রুত সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও বোঝাপরা উন্নত মানের থাকলে, যে কোন সমস্যা পরিবারের মধ্যে নিজেরাই সমাধান করে ফেলা সম্ভব। উম্মে কুলসুম কলি মনোবিজ্ঞানী গবেষক, কনসালটেন্ট সাইকোথেরাপিস্ট
×