ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই- ফখরুল

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২০ আগস্ট ২০১৯

খালেদাকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই-  ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার’ (এনআরসি) নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘আমার দেশ আমার শিল্প’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশ এখন ভয়াবহ সঙ্কটে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এ পরিস্থিতিতে দেশ বাঁচাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি অনিবার্য। তাঁকে মুক্ত করেই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। অবিলম্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া সরকার প্রতিষ্ঠায় নতুন নির্বাচন করতে হবে। এর বাইরে দেশের জনগণের সঙ্কট উত্তরণ হবে না। এবারের ঈদে কাঁচা চামড়ার বাজারে ধ্বস নামার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির জন্য চামড়া ক্রয় করেছিল সময় মতো তা বিক্রি না হওয়ায় অর্ধেকের বেশি চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে উপর মহল পর্যন্ত দেশ আজ লুটপাটের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ‘এ সরকার ফর দ্য লুটেরাস, বাই দ্য লুটেরাস এবং অব দ্য লুটেরাস।’ ফখরুল বলেন, সরকারের ব্যর্ততায় চামড়া শিল্প চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছে। কোরাবানির ঈদে চামড়ার মূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, এতিমখানাগুলো। এতিমখানাগুলোতে কোরবানীর পশুর চামড়া থেকেই বছরের অর্ধেক অর্থের সংস্থান হয়। কিন্তু এবার চামড়ার দাম না পাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ‘ম্যানুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রিস’ গড়ে ওঠছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিস বলতে গার্মেন্টস। তাই আমাদের শিল্পের যদি বিকাশ ঘটাতে হয় তাহলে দেশকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা শুনলাম, মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেস ওয়ের একেকটা পিলার নাকি একেকজন সরকারি দলের লোকজনকে দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলাম- এখানে তো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রয়েছে। এখানে তো তারা কাজ করছে’। পরে জানলাম একেকটা পিলার একেকজন সরকারি দলের লোককে দেয়ার জন্য সেইসব বিনিয়োগকারীদের বাধ্য করা হয়েছে।’ এই যদি অবস্থা হয়, তাহলেতো লুট ছাড়া কোন কিছু নাই। অনুষ্ঠানের দর্শকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহর- দেশের যে প্রান্তের মানুষের সঙ্গেই কথা বলেন, বিনিয়োগকারী কিংবা ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে দেখবেন সব দিকে শুধু লুট চলছে। ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা। টিআর কাবিখা থেকে শুরু করে মেগা প্রজেক্ট পর্যন্ত সব জায়গায় ভাগ-বাটোয়ারার মহোৎসব চলছে। ফখরুল বলেন, আমরা যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ করি তখন আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন হল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পূর্ব শর্ত হচ্ছে সমৃদ্ধ শিল্প। কারণ, এই শিল্পের মাধ্যমে জনগণের কর্মসংস্থান এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। চামড়া শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমাদের দেশের বেনাপোল থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে ভারতের বানতলা নামে একটি চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়েছে। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এটাকে নয়াদিগন্ত নামে অভিহিত করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশে সরকার থাকলে চামড়া শিল্পের এমন বিপর্যয় হতো না। সরকার থাকলে ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যু হতো না। সরকার থাকলে ব্যাংকের টাকা চুরি হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, দেশে আইন-শৃংখলা বলতে এখন আর কিছু নেই। বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষ এখন আস্থাহীন। সরকারের বিরুদ্ধে নিজেদের কার্যকর আন্দোলন গড়ে না তোলার ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে দুদু বলেন, অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা আছে। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমরা তা পারিনি। তবে অতীতের মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আয়োজক সংগঠনের পরিচালক বাবুল তালুকদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
×