জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। -খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার-এই তিন দেশের জাতীয় স্বার্থেই এটা করা জরুরী। বাংলাদেশ থেকে এই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে এবং রাখাইন রাজ্যের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।’ ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি একথা বলেন।
জয়শঙ্কর বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং ভবিষ্যতে এটা আরও জোরদার হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী দুটি অনুষ্ঠানই উদযাপন করতে যাচ্ছি।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব প্রতিবেশী দেশগুলোও যে পাশাপাশি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে তার উদারহণ। আমরা অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেল হিসেবে এই অংশীদারকে টিকিয়ে রাখতে চান।’ জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে গর্ববোধ করি। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছি।’ পানি বণ্টনের বিষয়ে ভারতের এই মন্ত্রী বলেন, পানিসম্পদ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের মতো তারাও অভিন্ন ৫৪ নদীর জন্য উভয়পক্ষের গ্রহণযোগ্য একটি উপায় বের করতে চায়।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আপনারা জানেন, এ বিষয়ে আমাদের সরকারের একটি অবস্থান আছে। এ বিষয়ে আমাদের একটি অঙ্গীকার আছে এবং এটা পরিবর্তন হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে আসে তখন অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থার বিরুদ্ধে দু’দেশের অংশীদারিত্বও উন্নয়ন দু’দেশের জনগণকেই সরাসরি সুফল দেয় বলে আমাদের বিশ্বাস।’ তিনি বলেন, দু’দেশের জনগণের মধ্যে সবক্ষেত্রে যোগাযোগ বেড়েছে। জনগণের মধ্যে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে। জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, দুটি দেশই পরস্পরের সফলতার সুফল ভোগ করে।
অসমের নাগরিকপঞ্জি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় ॥ অসমের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের মধ্যেই বিষয়টিকে ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তবে জম্মু ও কশ্মীরের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার পর থেকে চলমান উত্তেজনা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় রাজ্য অসমের নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এনআরসি) নিয়েও বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে। যেভাবে ওই তালিকা করা হচ্ছে তাতে অসমের ৪০ লাখের বেশি বাসিন্দা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং তাদের অবৈধ ‘বাংলাদেশী’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে দেশটির গণমাধ্যমেই। কিন্তু সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন আলোচনায় যাননি জয়শঙ্কর। তিনি সরাসরিই বলেন, ‘এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’
বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন ॥ সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজধানীর ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
