ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলার নাট্যশালায় তিন নাটকের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২১ আগস্ট ২০১৯

শিল্পকলার নাট্যশালায় তিন নাটকের মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার নাট্যাঙ্গন এখন দারুণ সরব। বিকেল থেকেই শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালাকে ঘিরে ভিড় জমছে নাট্যরসিকদের। মঙ্গলবারও সেসব দর্শকরা নাট্যশালার তিনটি মঞ্চে পৃথক গল্পের বুননে গড়া তিনটি নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছে। খুদে শিল্পীর আঁকা ছবি থেকে অনুপ্রাণিত নির্দেশকের ভাবনার ফসল ‘দুই আগন্তুক বনাম করবী ফুল’ নামের নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে স্টুডিও থিয়েটার হলে। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে নিঃসঙ্গ এক নারীর গল্পময় নাটক ‘তৃতীয় একজন’। প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে একইসঙ্গে গণনায়ক ও কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসেবে পরিচিত যোসেফ স্টালিনের জীবনচিত্র নির্ভর ‘স্তালিন’। স্পেস এ্যান্ড এ্যাক্টিং রিসার্চ সেন্টার প্রযোজিত নাটক দুই আগন্তুক বনাম করবী ফুল। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন অভিনেতা ও নির্দেশক আশীষ খন্দকার। সাধারণত সন্ধ্যা সাতটায় অধিকাংশ নাটকের প্রদর্শনী হলেও স্টুডিও থিয়েটার হলে রাত আটটায় মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটি। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে আশীষ খন্দকার জানান, নাটকের দুই আগন্তুকের চরিত্র দুটির উদ্ভব হয়েছে এক শিশুর আঁকা একটি চিত্রকর্ম থেকে। ছবিটি এঁকেছিলেন তারই মেয়ে মৃন্ময়ী। অন্ধকারে হেঁটে চলা দু’টো লোক ও আঁকিয়ে মৃন্ময়ীই তার ভাবনার জগতে সৃষ্টি করেছে ‘দুই আগন্তুক বনাম করবী ফুল’। প্রসঙ্গক্রমে আশীষ খন্দকার বলেন, একদিন আমি আমার মেয়ে মৃন্ময়ীর সঙ্গে বসেছিলাম। সে তেল রঙে একটা ছবি আঁকছিল। সেই চিত্রপটে আছে অন্ধকারে হেঁটে চলা দুজন লোকের উপস্থিতি। এই নাটকটার বীজ তখনই আমার মাথায় এসেছে। অনেকটা সময় গবেষণার পর ওই ছোট্ট একটা বীজ থেকে নাটকের পটভূমিটা দাঁড় করাই। আমি বিস্মিত হয়ে মৃন্ময়ীর ব্যাখ্যাটাও শুনেছিলাম। ও রূপকথার গল্প থেকে এই চরিত্র দু’টোকে এঁকেছে। অদ্ভুতভাবে এই গল্প প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকা চিরায়ত রূপকথার গল্প। যে গল্পটা আবার ঘুরিয়ে দেখলে দেখতে পাই, আমাদের এই ঘুণে ধরা, পচা গলা বাস্তবতা। সেই রূপক চরিত্রগুলো অভিনয়শিল্পীদের দক্ষতায় প্রাণ পেয়েছে মঞ্চে। নাটকের নারী চরিত্র বান্দ্রার ভূমিকায় রূপদানকারী অভিনেত্রী মানিসা অর্চি বলেন, প্রযুক্তির রঙিন ফাঁদে আমাদের আটকে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাই এই নাটকের ঘটনাপ্রবাহে। প্রতিটি সংলাপে খুঁজে পাওয়া যায় ভাবনার খোরাক। তিন চরিত্রের এ নাটকে মনিসা ছাড়া দুই আগন্তুক চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফরহাদ শাওন ও রাব্বী। সমীর দাশগুপ্তের রচনায় শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র প্রযোজিত ‘তৃতীয় একজন’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা। নাটকের গল্পে স্বামী সামীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক এবং স্ত্রী তুলি শিক্ষিতা এক গৃহিণী। একাকী ও নিঃসঙ্গ এক নারী। তুলি এক সময় তুখোড় নাচত, ডক্টরেট করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখত। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে লোভনীয় চাকরি পেয়েও সামীরের আপত্তির কারণে চাকরি করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে স্বামীর সংসারে তুলি চার দেয়ালে বন্দী এক অস্তিত্বহীন সত্তায় পরিণত হয়। অন্যদিকে সামীর ব্যস্ত থাকে নিজের ক্যারিয়ার এবং লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তা গড়ে তোলার রেসে। সামীরের এই প্রবল ব্যস্ততায় তুলির জীবনে তৃতীয় একজনের আগমন নিয়েই নাটকের গল্প। সেই তৃতীয় ব্যক্তির নাম বিবেক। বিবেক ও তুলি একসময় একসঙ্গে নাচ শিখত। তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে। এক পর্যায়ে বিষয়টি সামীর জানতে পারলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও কলহ। এমনি সঙ্কটের ভেতর নাটক এগিয়ে চলে পরিণতির দিকে। প্রযোজনাটিতে অভিনয় করেছেন রওশন জান্নাত রুশনী ও অনন্ত হিরা।
×