ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর

প্রকাশিত: ১১:২৬, ২১ আগস্ট ২০১৯

গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর

আজ ২১ আগস্ট। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পঞ্চদশ বর্ষ। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতির ইতিহাসে বর্বরোচিত ও কলঙ্কিত দিন। ২০০৪ সালের এইদিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে এই হামলা চালানো হয়। হামলার মূল টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। নৃশংস সেই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। দলটির কয়েক শ’ নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হন। এই হামলার শিকার বহুজন এখনও শরীরে ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ভিন্ন আদর্শ ও ভিন্ন মত থাকবে। সেই মত জনমুখী করতে রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তা তুলে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন দলকে নিশ্চিহ্ন করা বা দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র কোন সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া যে এ ধরনের হামলা সম্ভব নয় তা এখন স্পষ্ট। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকার এ ঘটনার পর তদন্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়নি। বরং ঘটনার পরপরই সরকারের প্রভাবশালী মহল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি বিশেষ ভবনের সম্পৃক্ততার কথা, ঘটনার পর আলামত নষ্ট করা, এফবিআই-এর তদন্ত দলকে সহযোগিতা না করার মতো ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটকের অবতারণা করেছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এমনটাও বলেছিলেন যে, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলেন। সংসদেও অনুরূপ মিথ্যাচার করে সরকারী দল। পরবর্তীকালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই ঘটনার তদন্ত করে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আদালত এই বর্বরোচিত হত্যাকা-ের অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। পুনর্তদন্ত শেষে ২০১১ সালের তিন জুলাই আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে একটি সম্পূরক চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়। এতে অভিযুক্ত হিসেবে আরও অন্তর্ভুক্ত হয় বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিবসহ ত্রিশজন। ফলে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় বায়ান্নজনে। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বুধবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্র্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদ- এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানসহ ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদ- দেয়া হয়েছে। মোট ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদ- ইতোপূর্বে কার্যকর করা হয়েছে অন্য মামলায়। দেশবাসী এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের প্রত্যাশী। এ ধরনের বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক এই প্রত্যাশা সবার। দেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা প্রয়োজন। বোমা বা গ্রেনেড দিয়ে কাউকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। দেশবাসীর প্রত্যাশা, অচিরেই গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দ-িত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করে আইনের হাতে সোপর্দ করা বাঞ্ছনীয়।
×