ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ৩ মিলিয়ন টন ক্ষমতার রিফাইনারি বানাতে চায় চীন

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২১ আগস্ট ২০১৯

চট্টগ্রামে ৩ মিলিয়ন টন ক্ষমতার রিফাইনারি বানাতে চায় চীন

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বিশাল বাজার বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বৃহৎ একটি তেল শোধনাগার (রিফাইনারি) নির্মাণ করতে চায় চীনা পেট্রোকেমিক্যাল সংস্থা সিনোপেক গ্রুপ। ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করা হবে এই শোধনাগার; যার বার্ষিক শোধন ক্ষমতা হবে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এতে ব্যয় হবে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই শোধনাগার নির্মাণ করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার বার্ষিক জ্বালানি তেল শোধন ক্ষমতা তিনগুণে উন্নীত হবে। বাংলাদেশে শোধনাগারটি নির্মাণের সুযোগ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী এই চীনা প্রতিষ্ঠান। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকায় সোমবার (১৯ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে একটি শোধনাগার প্রতিষ্ঠার কাজ পাওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিনোপেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং ওয়েনউ। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ৭১ দেশ নিয়ে বেজিংয়ের বেল্ট ও সড়ক যোগাযোগ গড়ার সেই মহাপরিকল্পনা সামনে রেখে এই উদ্যোগ চীনা প্রতিষ্ঠানটির। সিনোপেক ইঞ্জিনিয়ারিং এই বেল্ট ও রোড বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টই শুধু নয়, অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান। সিনোপেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বাংলাদেশে একটি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ এগোতে পেরেছি। বর্তমানে এর টেন্ডার নেগোসিয়েশন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বাংলাদেশে আমাদের প্রতিষ্ঠানের এই প্রকল্পটি পাওয়ার ভাল সুযোগ রয়েছে। এর বেশি বিস্তারিত বলব না। এদিকে, ভারতের দ্যা ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকা গত মে মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সিনোপেক ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপকে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি যৌথভাবে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণের প্রক্রিয়া করছে। দেড় বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এ শোধনাগারের ক্রুড অয়েল শোধন ক্ষমতা হবে বার্ষিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন জ্বালানি আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র এক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে সেই কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিদেশী পত্রিকার প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রামে বৃহৎ এই তেল শোধনাগার নির্মাণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বার্ষিক তেল শোধন ক্ষমতা হবে তিনগুণ। বছরে তেল শোধন করা সম্ভব হবে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা বর্তমানে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এতে করে বছরে সাশ্রয় হবে ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বছরে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্রুড ও রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম আমদানি করে থাকে। তবে সিনোপেক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জনসংযোগ বিভাগ এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোন মন্তব্য করেনি। সিনোপেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং ওয়েনউ বলেন, আয় বৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বাজারই তাদের মূল টার্গেট। চীনা পত্রিকাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরে এই খাতে আয় ১০ বিলিয়ন ইউয়ানে নেমে এসেছে, যা ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ছিল ১৪ বিলিয়ন ইউয়ান। আয় কমার হার বছরে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রথম ৬ মাসে কমেছে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউয়ান। নতুন বৈদেশিক চুক্তি কমেছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউয়ান। এই অবস্থায় চীনা এই কোম্পানি কিছুটা আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি বড় প্রকল্প পেয়েছে গত কয়েক বছরে। উত্তর আফ্রিকার মিসর ও আলজিরিয়াতে তাদের কিছু সম্ভাবনাময় প্রকল্প রয়েছে বলে জানান সিনোপেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে চীনা বেল্ট এ্যান্ড রোড প্রজেক্ট ধারণাটি নিয়ে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন। উদ্দেশ্য এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ৭১ দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা। এক্ষেত্রে অবকাঠামো গড়ার বেশিরভাগ ব্যয় চীনই বহন করবে। চীনা ব্যাংকগুলো ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ তহবিল গড়েছে ২ হাজার ৭০০ প্রকল্পে সহযোগিতা দিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ সম্পর্কে সিনোপেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং বলেন, এটি বড় প্রভাব ফেলবে না। পারস্পরিক সহযোগিতায় আমরা বাজার বহুমুখীকরণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সক্ষম হব। তিনি বলেন, আমাদের বছরে ৫৫ বিলিয়ন ইউয়ান নতুন চুক্তির টার্গেট রয়েছে। আমরা তেল শোধন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা থেকে কেমিক্যাল এবং পাশাপাশি হাইড্রোজেন শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করব, যাতে করে কার্বন নিঃসরণ কম হয়।
×