ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের সঙ্গে আবাহনীর লড়াই

প্রকাশিত: ১২:২১, ২১ আগস্ট ২০১৯

আজ উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের সঙ্গে আবাহনীর লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ৩১ বছর আগে মোহামেডান পেরেছিল। এবার পালা তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑ পারবে কী তারা? উত্তরটা জানা যাবে বুধবার। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবার পর। পাঠকদের কাছে ওপরের বাক্যগুলো কিছুটা ধোঁয়াশাপূর্ণ মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই। এএফসি কাপের আন্তঃ আঞ্চলিক সেমিফাইনাল প্লে-অফের খেলায় (প্রথম লেগ) আজ স্বাগতিক ঢাকা আবাহনী লিমিটেড আতিথ্য দেবে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভকে। কোরিয়ান ক্লাবটি বাংলাদেশের ফুটবলে খুব অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। এই দলটির বিপক্ষে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের ক্লাবের। অতীতে এএফসি কাপ বলতে কোন আসর ছিল না। ১৯৮৮ সালে সে সময়ের এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে এই ক্লাবকেই ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। মোহামেডানই ১৯৯০ এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্তপর্বে গোলশূন্য ড্র করেছিল ক্লাবটির সঙ্গে। ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্তপর্বে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল। ইন্টার জোন সেমিফাইনালে বিজয়ী দু’দল খেলবে ইন্টার জোন প্লে-অফ ফাইনাল। এই ম্যাচের জয়ী দল চলে যাবে এএফসি কাপের ফাইনালে। ফাইনালে ওয়েস্ট জোনের একটি দল থাকবে। ওয়েস্ট জোনের ফাইনালের প্লে-অফে মুখোমুখি হবে জর্দানের আল-জাজিরা ও লেবাননের আল-আহেদ। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ নবেম্বর। এএফসি কাপে ইতিহাস গড়া আবাহনীর সামনে আজ কঠিন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন আবাহনীর পতুর্গীজ কোচ মারিও লেমোস। আবাহনীর খেলোয়াড়রাও তাই বিশ্বাস করেন। তাদের জন্য প্রেরণা হতে পারে ৩১ বছর আগে মোহামেডানের সেই জয়টি। কোচ লেমোস বলেন, ‘আমরা এই খেলায় জিতে দেশের মানুষকে গর্বিত ও সুখী করতে চাই। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে জিতব, এটা আমি বিশ্বাস করি।’ আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু বলেন, ‘এটা শুধু আবাহনী নয়, বাংলাদেশের খেলা। সমর্থকদের অনুরোধ করব মাঠে এসে আবাহনীকে সমর্থন করুন। সবার উৎসাহ নিয়ে আমরা খেলায় ভাল কিছু করতে চাই।’ অথচ বাস্তবতা হচ্ছেÑ আজকের ম্যাচে আবাহনীকে খেলতে হবে তাদের তিন ফুটবলারকে ছাড়াই। তারা হচ্ছেন আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ্ সাইঘানি, মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম এবং মিসরিয়ান ডিফেন্ডার ঈসা আলমাগরাবি। সাইঘানি চলে গেছেন চেন্নাইন এফসিতে। তার পরিবর্তে আসা ঈসা নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারবেন না। ইনজুরিতে পড়েছেন মামুনুল। তবে এ নিয়ে বেশি ভাবিত হন কোচ মারিও, ‘ফুটবলে এমনটা হতেই পারে। এটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাই না। বাকিদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। রক্ষণভাগে যদি ভাল খেলতে পারি তাহলে যে কোন কিছুই সম্ভব।’ এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ ক্লাবের সব খেলোয়াড়ই সেনাবাহিনীর সদস্য। এই ক্লাবে খেলেন জাতীয় দলের আট ফুটবলার। ঢাকায় এসেছেন চারজনÑ কুন চাং ইয়ক, ও হুয়ক চুল, কিম ইউ সং এবং আন তায়ে সং। বিস্ময়কর ব্যাপা- এই দলে কোন বিদেশী ফুটবলার নেই। অথচ আবাহনীতে আছে চার বিদেশী খেলোয়াড়। এসব নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না দলটির কোচ ও ইয়ন সন, ‘আবাহনীর যে চার বিদেশী আছে তাদের সম্পর্কে জানি। আমাদের বিদেশী নেই বলে কোন সমস্যা নেই।’ এএফসি কাপের গ্রুপ ‘আই’-এ খেলেছিল এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। ছয় ম্যাচে ৫ জয় এবং ১টিতে হেরেছিল তারা। প্রতিপক্ষের জালে ১৭ গোল দেয়া উত্তর কোরিয়ান ক্লাবটি গোল হজম করেছে মাত্র ২টি। আর ৬ ম্যাচে ৪ জয় ১ ড্র ১ হারে গ্রুপ ‘ই’র সেরা হওয়া আবাহনী গোল দিয়েছে ১২টি, হজম করেছে ৫টি। এ থেকেই আঁচ করা যায়, আক্রমণভাগ এবং রক্ষণভাগে আবাহনীর চেয়ে কতটা এগিয়ে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। তবে ঘরের মাঠে ম্যাচ বলে আবাহনী আত্মবিশ্বাসী। প্রতিপক্ষ এপ্রিল ২৫ ক্লাবও জিততে মরিয়া। এই ম্যাচটির জন্য তিন সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়েছে আবাহনী। ম্যাচটি তাদের জন্য এককথায় ফাইনাল।’ উত্তর কোরিয়ান ক্লাবটি সম্পর্কে আবাহনীর তেমন কোন ধারণা নেই, তেমনি করে বাংলাদেশের ক্লাবটির শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে অজ্ঞ অতিথি ক্লাবটি। এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের জন্ম ১৯৪৯ সালে। কোরিয়া প্রিমিয়ার লীগে সর্বাধিক ১৮ বারের চ্যাম্পিয়ন তারা। এছাড়াও শিরোপা জিতেছে হুয়াইবুল কাপে ৪ বার, মান’জিয়ংদাই প্রাইজ কাপে ৭ বার, পাইকতুসান প্রাইজ কাপে ১ বার, পোচ’অনবো টর্চ প্রাইজ কাপে ৩ বার এবং রিপাবলিকান চ্যাম্পিয়নশিপে ৩ বার। ৭০ বছর বয়সী ক্লাবটি সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ট্রফি জিতেছে মোট ৩৬ বার। ১৯৭২ সালে জন্ম ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর। ১১ বার ঢাকা লীগ, ৬ বার প্রিমিয়ার লীগ, ১১ বার ফেডারেশন কাপ, ১ বার স্বাধীনতা কাপ, ১ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, ১ বার সুপার কাপ, ১ বার ডামফা কাপ, ১ বার বিটিসি ক্লাব কাপ এবং ৩ বার বিদেশী টুর্নামেন্ট (১ বার করে নাগজি কাপ, চার্মস কাপ ও বরদলুই ট্রফি, সবগুলোই ভারত থেকে জেতা) চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোট ৩৬টি ট্রফি করায়ত্ত করেছে ৪৭ বছর বয়সী ক্লাবটি।
×