ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অলোক আচার্য

লোভ আর লাভের হিসাব

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২২ আগস্ট ২০১৯

লোভ আর লাভের হিসাব

খাদ্যে ভেজাল নিয়ে দেশে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। আমরা যা খাচ্ছি তার কতটুকু খাদ্য আর কতটুকু বিষ তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। মাঝে মধ্যে কোন পরীক্ষাগারে ধরা পড়ে আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিষ খেয়ে জীবন ধারণ করছি। তাতে অবশ্য আমাদের আর কিছু হয় না! পেটে মনে হয় সয়ে গেছে! সারা বছরই অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজাল দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হন। ভেজাল পণ্যের ভেতর নামী-দামী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের পণ্য আমরা প্রায় চোখ বুজে নিশ্চিন্তে কিনে বাড়ি ফিরি। তারাও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে এখন কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। এরা নিজেদের এত নিচে নামিয়ে এনেছে যে কেবল ঘৃণাটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজনে নিরাপদ খাদ্য আইন সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদ-ের বিধান করা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এটা এখন সময়ের দাবি। খাদ্যে ভেজাল দিয়ে তিলে তিলে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে যারা তারা কেন সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করবে। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও কোন না কোন খাদ্যপণ্য ভেজাল বলে শনাক্ত হচ্ছে। এই মাসেও এসব অসাধু মানুষগুলো তাদের কাজ দেদার চালিয়েছে। বাজার থেকে যে ম্যাঙ্গো জুস কিনে খাচ্ছি দেখা গেল সেসব জুসে আমের চিহ্নমাত্র নেই। আবার পত্রিকায় দেখলাম রাজবাড়ীর পাংশায় আখের গুড় বলে যে জিনিসটা বিক্রি হচ্ছে তাতে আদৌ আখের রসই নেই। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। খাদ্যপণ্যে কেন ভেজাল দেয়? কেবল লাভ আর লোভের বশবর্তী হয়েই তারা এই কাজটি করছে সন্দেহ নেই। যারা খাদ্যপণ্যে ভেজাল দিয়ে বিক্রি করে বড়লোক বনে যাচ্ছেন ভেজাল আসলে তাদের নিজেদের মধ্যে। মানুষ হিসেবে তারা সঠিক নয় বলেই তাদের কর্মেও তারা সঠিক নন। পৃথিবীর অনেক দেশে রমজান মাসে খাদ্য পণ্যের দাম কমানো হয়। আর আমাদের দেশে হয় ঠিক উল্টো। দাম যেন এ সময় না বৃদ্ধি পায় তার জন্য সরকারকে নানা পদক্ষেপ নিতে হয়। কিন্তু কেন? কেন আমরা নিজেরাই একটু সৎ হই না। আজ যারা মাছে, ফলমূলে ফরমালিন মেশাচ্ছেন, যারা মুড়ি ভাজার সময় ইউরিয়া সার ব্যবহার করছেন, যারা চালে মোম ব্যবহার করে পালিশ করছেন বা মোটা চাল ছেটে চিকন করে মোটা টাকা কামাচ্ছেন, যারা অখাদ্য-কুখাদ্য বাহারি মোড়কে মুড়িয়ে আমাদের খাওয়াচ্ছেন তারাও কিন্তু বাজার থেকে ভেজাল পণ্য কিনেই বাড়ি ফিরছেন। তিনি নিজেও এই চক্রের প্রভাবের বাইরে নন। তিনি তার পরিবারের কাছে কি জবাব দেবেন। তার সন্তান এবং পরিবারের সদস্যরা সেই ভেজাল পণ্যই খাচ্ছেন। তাহলে তার কি লাভ হলো। তিনিও তো ঠকছেন। নিজে মানুষকে ঠকাচ্ছেন সেই সঙ্গে নিজেই ঠকছেন। যে দোকানদার মিষ্টির প্যাকেটে কারসাজি করে ওজন বাড়িয়ে মিষ্টি কম বিক্রি করেন সেই দোকানদার কি বাজার থেকে ঠকছেন না। তাকেও তো বাজার থেকে সেই দুধ কিনতে হচ্ছে যে দুধে আদৌ দুধই নেই। কেবল জল, পাউডার আর কেমিক্যাল মেশানো রয়েছে। তবুও তিনি তার জায়গা থেকে সরছেন না। তিনি রীতিমতো তার ভেজাল কারবার ফেঁদে পয়সা কামাচ্ছেন। সত্যি কথা বলতে জনগণ এক্ষেত্রে অসহায়। কারণ বাইরে থেকে কারও বোঝার উপায় নেই যে কোন্ পণ্যটি ভেজাল আর কোনটি আসল বা খাঁটি। এখানে কেবলই বিশ^াস কাজ করে। আর এই বিশ^াস পুঁজি করেই এসব ভেজাল কারবারিরা মোটা টাকার মালিক হয়ে যান। এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি- কত বছর আগে কবি এ কথাটি বলেছিলেন আর আজও সে কথার প্রয়োগ আমাদের সমাজের সর্বত্র ঘটে চলেছে। এত এত টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিন্তু তার ভেজাল কারবার বন্ধ করছেন না। দেশকে ভালবাসি এটা প্রমাণ করার জন্য কোন প্রচারের দরকার হয় না। দরকার হয় কাজের। দেশ এমনি এমনি উন্নত দেশে পরিণত হয় না। দেশকে উন্নত করতে হলে দেশের মানুষকে ভালবাসতে হয়। ব্যবসায়ীরা এর বড় অংশীদার। কারণ তারা ব্যবসায়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন। আমি দেশের জন্য কতটুকু কাজ করছি কি কাজ করছি সেটাই মুখ্য বিষয়। যারা ভেজাল ব্যবসায়ী তাদের ভেতর দেশপ্রেম থাকতেই পারে না। তারা কোনভাবেই দেশের মানুষকে ভালবাসতে পারে না। যে যার যার জায়গা থেকে দুর্নীতি করলে দেশটা চলবে কিভাবে? অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কোন খাদ্যপণ্য কেনার আগেই মনে সন্দেহ জাগে। এই সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। আবার না কিনেও কোন উপায় নেই। আমাদের খেতে হবে, বাঁচতে হবে তো। ভেজাল খাদ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন এবং সচেতনতা দুটোই একসঙ্গে প্রয়োজন। আইনের কাজ হলো খুব দ্রুততার সঙ্গে এসব ভেজাল পণ্য চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের শাস্তি এমন হতে হবে যাতে অন্য ব্যবসায়ীরা এই কাজ করতে সাহস না পায়। অন্যকে যারা বিষ খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারা কেন কঠিনতম শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। পাবনা থেকে
×