ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাই সিনেমায় ঘুরেফিরে একই মুখ!

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২২ আগস্ট ২০১৯

ঢাকাই সিনেমায় ঘুরেফিরে একই মুখ!

জননন্দিত নায়ক-নায়িকা যখন একাধিক সিনেমায় আলাদা আলাদা গল্পে অভিনয় করে, ধীরে ধীরে দর্শকদের মধ্যে ভাল লাগা কাজ করে। দর্শক অজান্তে তাদের নতুন নতুন গল্পে আশা করে। নিজেরাই তৈরি করে সময়ের সেরা যুগল! এই ধরনের অনুভূতি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে সব সময় দেখা গিয়েছে। ঢাকাই সিনেমায় এ ধরনের জুটি উল্লেখ করলে, রাজ্জাক-কবরী, শাবানা-আলমগীর, ফারুক-ববিতা, বুলবুল আহমেদ-জয়শ্রী কবীর, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, শাবনাজ-নাঈম, সালমান-শাবনূর, রিয়াজ-পূর্ণিমা এবং শাকিব খান-অপু বিশ্বাস হয়ে বুবলীতে এসে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, জুটি দর্শকনন্দিত। বর্তমানের সঙ্গে পার্থক্য হলো এইÑ অতীতের অভিনয় শিল্পরা কেবল নির্দিষ্ট যুগলে কু-লীবদ্ধ ছিলেন না। তাদের কে সমানে দেখা গেছে গল্পের প্রয়োজনে সবার সঙ্গে অভিনয় করতে। কিন্তু হালের পালে চলছে অন্য ঢেউ। সবাই সবার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করছেন না। কি এক রহস্যের জাল এদের আটকে ফেলেছে! ২ হাজার ষোলো সালে ‘বসগিরি’ সিনেমার মাধ্যমে শাকিব খানের সহশিল্পী হয়ে ঢাকাই সিনেমার নায়িকার খাতায় নাম লেখান শবনম ইয়াসমিন বুবলী। এ পর্যন্ত যে কয়টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সব ছবিতে নায়ক ছিলেন শাকিব খান। অবশ্য বুবলীর আগে শাকিবের ব্র্যান্ড নায়িকা ছিল, বর্তমান সময়ের ঢালিউডের নিভে যাওয়া তারা অপু বিশ্বাস। এখন চলছে শাকিব-বুবলী যুগ! ঈদ-কোরবানির উৎসব মানে তাদের সিনেমা। কিন্তু অন্য বারের তুলনায় এবারের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। এখন যে কোন ইস্যুতেই নেটিজেনরা তাদের মতামত মন খুলে জানাতে পিছপা হন না। আর বিনোদনের মতো বিষয়ে, ভাল খারাপ বলতে তো এক মুহূর্তেও দেরি করে না। সম্প্রতি সিনেমা বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপে দেখা যায় দর্শকদের নানা তির্যক মন্তব্য। গেল রোজার ঈদে মুক্তি পায় মালেক আফসারি পরিচালিত ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমা। ছবিটি একাধিক কারণে ছিল আলোচনায়। সেই রেস কাটতে না কাটতেই কোরবানির ঈদে মুক্তি পায় পুনরায় শাকিব-বুবলী অভিনীত, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না।’ শাকিব-বুবলী জুটিতে দর্শক সন্তুষ্ট? এমন প্রশ্নের উওর খুঁজতে গিয়ে জানা যায় এই জুটির জনপ্রিয়তায় দর্শক ভাটার টান দেখতে পাচ্ছে! সম্প্রতি ফেসবুকে সিনেমাকেন্দ্রিক গ্রুপে এই জুটির প্রতি ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন। কোরবানির ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবিটি দেখে বিরক্ত প্রকাশ করে মোঃ সুলাইমান শরীফ নামের এক দর্শক লেখেন, ‘আমি শাকিব খানের একজন বড় ভক্ত। শাকিব ভাইয়ের নতুন ছবি সাধারণত মিস করি না। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করছি যে, বুবলীর অভিষেকের পর উৎসব মানেই শাকিব-বুবলী। আমার দৃষ্টিতে বুবলীর অভিনয় সেভাবে ভাল লাগে না! প্রতিটি ছবিতে একঘেয়েমি অভিনয়! তাছাড়া শাকিব ভাই তাঁর ক্যারিয়ারে অন্যান্য নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করে সবার নজর কেড়েছেন, সাফল্য পেয়েছেন। আমি একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে মনে করি বুবলী ঘরোয়ানা থেকে বেরিয়ে শাকিব খানের উচিত অন্য নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করা। তিনি বাংলা সিনেমার মুকুটহীন রাজা। তাঁর উচিত সবাইকে নিয়ে ভাবা! এবং দর্শক তাঁকে যাদের সঙ্গে পছন্দ করে তাঁদের সঙ্গে কাজ করা।’ সেলিম শাকিব নামের একজন মন্তব্য করেন, ছবি হিসেবে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ভাল। তবে এটা আরও ভাল হতো যদি সময় নিয়ে নির্মাণ করত। আর বুবলীর অভিনয় গতানুগতিক, উন্নতি চোখে পড়ছে না। শাকিবের সঙ্গে টানা কাজ করায় বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে। কোনভাবেই ছবির নাম ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ যুক্তিসঙ্গত নয়। ছবির নাম আমার মতে হওয়া উচিত ছিল ‘সাহসী নারী’। যাই হোক সামাজিক ছবির সুনির্মাতা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ছবি আরও শক্তিশালী হবে আশা করেছিলাম, কিন্তু মনের মতো ছবি পাইলাম না! যারা ছবিটি দেখেছেন তাঁরা হয়ত আমার সঙ্গে একমত হবেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘শাকিব খান-অপু বিশ্বাস জুটি সবচেয়ে সেরা জুটি ছিল। তাঁরা অনেক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন। তাঁদের জুটি দর্শক খুব মিস করে। তবে শাকিবের সঙ্গে বুবলীকে মানায় না! তার চেয়ে বরং নবাগত জাহারা মিতুকে শাকিবের সঙ্গে বেশ মানাবে! শাকিবের উচিত বুবলী ঘরোয়ানা থেকে বেরিয়ে সবার সঙ্গেই কাজ করা। এ বিষয়ে পরিচালক ও প্রযোজকদেরও ভাবতে হবে। তা হলে আমাদের সিনেমা আরও এগিয়ে যাবে।’ তবে শাকিব খান ছাড়া অন্য যে কোন নায়কের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নায়িকা বুবলী বলেন, ‘ভাল গল্প চরিত্র পেলে যে কোন নায়কের বিপরীতে কাজ করতে অগ্রহী। হয়ত একটু সময় লাগছে। এটি স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন দর্শকদের মনে আসতেই পারে। আমরা কিন্তু খুব একটা কাজ করিনি। দর্শকদের ধন্যবাদ তাঁরা আমাদের এতটা আলোচনায় রাখে যে আমরা অনেক কাজ করেছি। তাই তাঁদের মনে এমন প্রশ্ন। কারণ শাকিব খান ছাড়া আমার অন্য কারও সঙ্গে এখনও কাজ করা হয়নি। তবে এমন কিন্তু নয় যে, আমরা অনেক কাজ করে ফেলেছি। আমার অল্প দিনের ক্যারিয়ারে হাতেগোনা কয়েকটি কাজ করেছি। আমি অবশ্যই সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই। হয়ত একটু সময় নিচ্ছি। আমাদের পর পর যখন একসঙ্গে কাজ হচ্ছে। তখন কিন্তু অনেকেই মনে করছে তারা একসঙ্গে কাজ করছে এর বাইরে হয়ত কাজ করবে না। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। আমাদের দেশে এখন অনেক সুন্দর সুন্দর সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। জুটি প্রথা বলে একটা কথা আছে, তবে জুটি প্রথার বাইরে গিয়েও কিন্তু শিল্পীরা কাজ করে। আমার ক্যারিয়ার যেহেতু অল্প দিনের সামনে অনেক সময় পড়ে আছে, অনেক কাজ হবে। অবশ্যই আমিও অন্যদের সঙ্গে কাজ করব। অন্য অনেক হিরোই অনেক ভাল কাজ করছে। হয়ত একটু সময় লাগছে। তবে অন্য হিরোদের বিপরীতে অবশ্যই আমাকে দেখা যাবে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্ট-কমেন্টে উঠে এসেছে দর্শক পর্দায় একই মুখ দেখতে দেখতে ক্লান্ত। তাদের নিয়ে একের পর এক সিনেমা নির্মিত হতে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দর্শক। দর্শক ধরে রাখতে হলে গল্প অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচনে সচেতন হতে হবে নির্মাতাদের, এমনটাই মনে করছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনরা।
×