ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বকেয়া আদায়ে সিদ্ধান্ত না হলেও চামড়া বেচাকেনা অব্যাহত থাকবে

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ২২ আগস্ট ২০১৯

 বকেয়া আদায়ে সিদ্ধান্ত না হলেও চামড়া বেচাকেনা অব্যাহত থাকবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় সংক্রান্ত বৈঠকটি সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হলেও চামড়া বেচাকেনা অব্যাহত থাকবে। আগামী ৩১ আগস্ট শনিবার ফের বকেয়া আদায়ে বৈঠক আহ্বান করেছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। আশা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকের পর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন। এছাড়া কাঁচা চামড়া রফতানির সরকারী ঘোষণা বহাল রাখা হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা ন্যায্যদামে চামড়া সংগ্রহে ব্যর্থ হলে কেস টু কেস ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৃহষ্পতিবার বিকেলে মতিঝিলের এফবিসিসিআই ভবনে ‘বকেয়া আদায়’ সংক্রান্ত বিষয়ে ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান (বিটিএ) মো. শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো, দেলোয়ার হোসেন সহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বকেয়া আদায় সংক্রান্ত বৈঠকটি এক প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এ নিয়ে আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তুুষ্টি তৈরি হয়েছে। তবে জাতীয় সম্পদ রক্ষায় চামড়া বেচাকেনা অব্যাহত রাখবে পোস্তার ব্যবসায়ীরা। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী বৈঠকে বকেয়া সংক্রান্ত বিষয়ের সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বলছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে বকেয়া একটি নিয়মিত বিষয়। বকেয়া হবে এবং তা পরিশোধও হবে। এ নিয়ে কখনো বাণিজ্য বন্ধ হয় না। আশা করা হচ্ছে, এটির একটি ভাল সমাধান হবে। প্রসঙ্গত, বকেয়া সংক্রান্ত কারণে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে টানপোড়ন চলছিল আড়তমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে কোরবানির ঈদে চামড়া নিয়ে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়। চামড়া না কেনায় এ বছর দেশে সবচেয়ে বেশি চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। অবশেষে সরকার কাঁচা রফতানি ঘোষণা দেয়। আড়তমালিকরা বকেয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত ট্যানারিতে চামড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়ে বকেয়া সংক্রান্ত বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেয় এফবিসিসিআইকে। কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের প্রথম বৈঠকেও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এদিকে, জেলা পর্যায় থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে তা ঢাকায় আনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কোরবানির বিপুল পরিমাণ চামড়া মজুদ রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মোকাম ও আড়তগুলোতে। এছাড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছেও চামড়া মজুদ রয়েছে। আগামী তিনমাসের মধ্যে এসব চামড়া ঢাকায় এনে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ঢাকা ও আশপাশ জেলাগুলোর প্রায় ৭৫ ভাগ চামড়া আড়ত ও ট্যানারিতে বিক্রি করা হয়েছে। বাকি চামড়াগুলো চলতি সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহ করে লবণ দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ চামড়া তারা সংগ্রহ করতে সমর্থ্য হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে সারাদেশের চামড়া আসবে ঢাকায়। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের চামড়া কেনার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে জেলা পর্যায়ের চামড়া কেনা হচ্ছে। কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণার বাস্তবায়ন চেয়ে তিনি বলেন, এটা হলে দেশের চামড়া শিল্প বাঁচবে। ট্যানারি মালিকদের কাছে এ শিল্পখাত জিম্মি হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশ ট্যানার’স এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারিগুলোতে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ লাখের উপরে চামড়া কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী তিনমাস পর্যন্ত সারাদেশ থেকে চামড়া আসবে ট্যানারিতে। তিনি বলেন, বছরের প্রায় ৫০ শতাংশ চামড়া আসে কোরবানির ঈদ থেকে। প্রতি বছরের মতো এই ঈদে গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি পিস চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
×