ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাটির নিচে বিদ্যুত লাইন

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৩ আগস্ট ২০১৯

মাটির নিচে বিদ্যুত লাইন

বিদ্যুত সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক আবশ্যকীয় বিষয়। বসতবাড়ি থেকে আরম্ভ করে বহুতল ভবন, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্নভাবে জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক চাহিদার সঙ্গে বিদ্যুতের সম্পর্ক একেবারে ওতপ্রোত। তার ওপর তথ্য প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাময় জগতেও বিদ্যুতের ভূমিকার কোন তুলনা নেই। বিদ্যুতের ব্যবহারের সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপনও বিশেষ গুরুত্বের বিষয়। এতকাল আমরা বিদ্যুতের তার রাস্তা ও ভবনের ওপর দিয়ে নিতে দেখেছি। কিন্তু উন্নত বিশ্বে এই সংযোগ একেবারে অন্যরকম। পাতাল ট্রেনের ব্যবস্থা যেমন মাটির নিচে সেভাবে বিদ্যুতের তারও নিয়ে যাওয়া হয় একেবারে মাটির নিচ দিয়ে। অধুনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি মেট্রো রেলের নির্মাণ প্রকল্প। পাতাল রেলের প্রস্তুতিও চলছে। একইভাবে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুত লাইন সংযোগ করার এক উন্নত প্রক্রিয়া, যা গণমানুষের প্রাত্যহিক সমস্যার অনেক কিছু স্বাভাবিক নিয়মেই কমিয়ে দেবে। যেমন বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বর্তমানে কম নয়। বিশেষ করে বর্ষাস্নাত ও জলমগ্ন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা, তারের ওপর বৃষ্টির পানি লেগে থাকা সব মিলিয়ে নিরীহ মানুষের জীবনে-মরণ কামড় আসতেও সময় লাগে না। এছাড়া দর্শনীয়, সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেশ গড়তে বাহ্যিক বিদ্যুতের তার এবং ডিসের লাইনের জঞ্জালসহ ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো অপসারণ করা বাঞ্ছনীয়। এতে শুধু নিরাপদ দেশই নয়, সৌন্দর্যম-িত নগরী তৈরিতেও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার এমন সম্ভাবনাময় নির্দেশ আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এমন নির্দেশনা দিয়ে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। মাটির নিচে বিদ্যুত নেয়া ছাড়াও হাওড় এলাকায় সড়ক তৈরিতে বর্ষার পানির প্রবাহ যাতে রোধ করা যায় সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় কর্মপ্রক্রিয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পণ্য রফতানির জন্য দুটো কার্গো বিমান কেনার কথাও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার কথা আগেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার আরও জোর দিয়ে বলেন, নতুন কোন বিদ্যুত লাইন সংযোগ করা হলে তা যেন ওপরে না হয়ে মাটির নিচে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও যুগোপযোগী এবং উন্নত বিশ্বের কাতারে নিতে গেলে নতুন সময়ের আধুনিক কর্মোদ্যোগকে সব থেকে বেশি আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। সুতরাং বেশি পণ্য বিদেশে পাঠানোর জন্য কার্গোবিমানের সংখ্যা বাড়ানোও জরুরী। সেদিকেও আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। নদীস্নাত, বর্ষণসিক্ত বাংলাদেশে হাওড় এলাকায় পানির প্রবাহ আটকে থাকা এদেশের বিরূপ প্রকৃতির নিষ্ঠুর নিয়ম। এসব এলাকায় নতুন সড়ক নির্মাণে এমন সব প্রকৃতিগত অসঙ্গতিকে নজরে এনে কালভার্ট তৈরির সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত প্রকল্পগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, সময়ের দাবিই শুধু নয়, আধুনিক বাংলাদেশ তৈরির নিয়ামক শক্তিও। তবে প্রকল্পগুলো যথাযথ কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়া আবশ্যক। বিশেষ করে মাটির নিচে বিদ্যুতের তার সংযোগ যাতে অকারণে জনদুর্ভোগ না বাড়ায়, সেদিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। মেট্রো রেলের নির্মাণের সময়ে বিদ্যুত লাইন সংযোগ পাশাপাশি চলতে থাকলে অনেক বেসামাল পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। কারণ বারবার রাস্তা খোঁড়া বিপজ্জনকই শুধু নয়, পরবর্তীতে জনদুর্ভোগসহ ব্যয়ও অনেক বৃদ্ধি পায়। খানা-খন্দে সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থা বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সব দিক বিবেচনায় রেখে নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
×