ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নূপুর

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৩ আগস্ট ২০১৯

ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নূপুর

সমুদ্র হক,বগুড়া অফিস ॥ মধুময় প্রণয় থেকে পরিণয়। থেমে থাকেনি এই যুগলের এক হৃদয়ের বন্ধন। প্রেমের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলেন স্ত্রী। মরণের পথ থেকে স্বামীকে বাঁচিয়ে আনলেন স্ত্রী। নিজের লিভার দান করে স্ত্রী প্রমাণ করলেন- জীবনে যা গৌরব হয় মরণেও নেই পরাজয়। এরই নাম প্রেম। এই ঘটনা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার নিভৃত এক গ্রামের। প্রায় একযুগ আগে দিগদাইর ইউনিয়নের মাদারীপাড়া গ্রামের জামিলুর রহমান বুলবুলের সঙ্গে বিয়ে হয় কাতলাহার গ্রামের মাকছুদা জাহান নূপুরের। ওদের ছিল গভীর প্রণয়। নূপুর ও বুলবুলের দীর্ঘদিনের প্রণয়ের সফল পরিণতি পরিণয়। উভয় পরিবারই মেনে নেয়। পরিণয়ের এক বছর পর নূপুরের কোলে আসে কন্যাসন্তান। নাম রাখা হয় জাইমা রহমান ইলা। এর বছর দু’য়েক পর এই দম্পতির ঘরে আসে ছেলেসন্তান নাবিল রহমান নূর। মধুময়তায় গড়ে ওঠে অনাবিল সুখ। সুখের মধ্যেই এক কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন বুলবুল। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। চিকিৎসক জানিয়ে দেন লিভারের কার্যক্ষমতা আর নেই। যে ক্ষতি হয়েছে তাতে লিভার দ্রুত ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। অর্থাৎ অকেজো লিভার (যকৃৎ) কেটে ফেলে ওই স্থানে ম্যাচ করতে পারে এমন লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। অপারশেনটি অত্যন্ত জটিল। অর্থ ব্যয় হবে অনেক। প্রেম ও জীবনের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হলেন নূপুর। সিদ্ধান্ত নেন তিনি লিভার দান করবেন স্বামীকে। নূপুরের লিভারে বেঁচে থাকবে বুলবুল। একদিন যাকে প্রণয়ের মধুময়তায় ভরে দিয়েছিলেন আজ প্রেম বাঁচিয়ে রাখবেন হৃদয়ের গভীরে। গত ১১ আগস্ট চেন্নাইয়ের একটি বড় হাসপাতালে অপারশেন থিয়েটারের (ওটি) এক বেডে নূপুর। আরেক বেডে বুলবুল। একজনের দেহের লিভার কেটে আরেকজনের দেহে প্রতিস্থাপন। দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টার অপারেশন শেষে শৈল্য চিকিৎসকগণ ওটি থেকে বের হয়ে হাসিমুখে জানালেন অপারেশন সফল হয়েছে। এদিন নূপুরের বড় বোন পাপিয়া আক্তার ছিলেন চেন্নাই হাসপাতালে। চিকিৎসকগণ তাকে জানিয়েছেন বুলবুল ও নূপুর দু’জনই সুস্থ আছেন। পাপিয়া খবরটি ফোনে জানায় বাবা আব্দুল মজিদকে। খবর পায় বুলবুলের পরিবার। বুলবুল মাদারীপাড়া গ্রামের ইয়াসিন আলী তরফদারের একমাত্র ছেলে। প্রণয়ের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নূপুর।
×