অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘এ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ (এসিআই)-এর লোকসান খতিয়ে দেখতে গঠিত ডিএসই’র তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ইতোমধ্যে ডিএসই’র কাছে চিঠির মাধ্যমে এ অসঙ্গতির ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। যা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, ডিএসই’র গঠিত তদন্ত কমিটি বিএসইসি’র কাছে যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে, এতে অসঙ্গতি রয়েছে। এর মধ্যে ‘এসিআই লিমিটেড’ ও ‘এসিআই লজিস্টিকস’-এর কর-পরবর্তী মুনাফার যে তুলনামূলক চিত্র দেখানো হয়েছে, সেখানে বেশ ভিন্নতা পেয়েছে বিএসইসি। উদাহরণস্বরূপ ২০০৯ সালে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসিআই’র কর পরবর্তী মুনাফা দেখানো হয়েছে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৩ টাকা। যা ডিএসই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৬২ টাকা। এখানে ডিএসই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৭৯ টাকার ভিন্নতা রয়েছে। আবার ২০১৩ সালে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসিআই লজিস্টিকসের কর পরবর্তী লোকসান দেখানো হয়েছে ৮৪ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ টাকা। যা ডিএসই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৮৬ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৮২৩ টাকা। এখানে ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার ২০৬ টাকার ভিন্নতা রয়েছে।
এদিকে কর পরবর্তী সমন্বিত আয়েও এ ধরনের ভিন্নতা পেয়েছে বিএসইসি। চিঠিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলছে, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন) একটি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি। কোম্পানির প্রতিবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এসিআই লজিস্টিকসের কোন শেয়ার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে শুধু কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এসিআই লজিস্টিকসের শেয়ারপ্রতি আয় কীভাবে হিসাব করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া প্রতিবেদনে কোম্পানির সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা এবং মুনাফা-লোকসানের অবস্থা মন্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। যেখানে কোন সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করা হয়নি। এখানে শুধু ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ওপর নিরীক্ষকের মন্তব্য দেয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সাল থেকে বাকি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের মন্তব্য দেয়া হয়নি।
এসব প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রতীয়মান হয় যে, এখানে শুধু সামগ্রিক লোকসান, উচ্চ প্রশাসনিক ও মার্কেটিং খরচ, উচ্চ আর্থিক খরচ দেখানো হয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড হুমকির মুখে। তাই এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর ধারা ২৪ এবং সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ৬(৩) অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের সর্বশেষ প্রান্তিকের লোকসানসহ কোম্পানির গত কয়েকবছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ বলে অভিযোগ উঠে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পরও ‘স্বপ্ন’-এর কার্যক্রম বন্ধ করে না দেয়ায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ, কোম্পানির মালিক পক্ষের প্রতি অবিশ্বাস বিরাজ করছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ।