ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু রোগীর চাপ রয়েই গেছে হাসপাতাল ক্লিনিকে

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২৩ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু রোগীর চাপ রয়েই গেছে হাসপাতাল ক্লিনিকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাসপাতাল-ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীর চাপ রয়েই গেছে। বাড়তি সময় দিয়েও ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামাল দিতে গত দেড় মাস ধরে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য উঠানামা করলেও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যেই রয়ে গেছে। আগস্টের ২১ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৪১ হাজার জন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ১৮ বছরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ২২৮ জন। চলতি বছরে ২২ আগস্ট পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন নতুন কর্মসূচী গ্রহণ করার পরও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এবং হাসপাতালগামী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বৃহস্পতিবারও গাজীপুর, সাভার ও বরিশালে একজন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সরকারী হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৪৭ এবং বেসরকারী হিসাবে তা ১শ’ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৫৯৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত ৭৬১ এবং ঢাকার বাইরে আক্রান্ত ৮৩৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ২৩৩, ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ২২, চট্টগ্রামের ১১টি জেলায় ১৩৬, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় ১৭৯, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ৭৩, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় ৩৩, বরিশালের ৬টি জেলায় ১৩৭ এবং সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ২০ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। আর বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ৭১৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮১, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১৪, খুলনা বিভাগে ৫৮৭, রাজশাহী বিভাগে ২৫৫, রংপুর বিভাগে ১২৩, বরিশাল বিভাগে ৩৮৮ এবং সিলেট বিভাগে ৫০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২২, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০২, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ১৮, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮৮, পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ১, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৩, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৭ এবং কুয়েট বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মনির হোসেন (৩৪) নামের এক যুবক মারা গেছেন। তিনি জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রুকুনদি গ্রামের শাহজাহান মিয়ার পুত্র। এ নিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত হয়ে মনির হোসেন শেবাচিমে ভর্তি হন। তার অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে প্রেরণ করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬৩ রোগী। এরমধ্যে পুরুষ ৯৩, নারী ৩৯ ও শিশু ৩১ । গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শেবাচিম হাসপাতালে এক হাজার ৪৩০ রোগী ভর্তি হয়। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ২৬৭ জন। আর মারা গেছেন ছয়জন। এছাড়া জেলার গৌরনদীতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন জানান, এখানে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তারা কোন না কোনভাবে ঢাকায় আসা যাওয়া করেছেন। তবে বরিশাল নগরীর বাইরে অন্য জেলার কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে যারা নিজ এলাকায় ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া যারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তারা খুবই খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। নিজস্ব সংবাদদাতা সাভার থেকে জানায়, সাভারের আশুলিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হানিফ (৩৯) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে মৃত হানিফের ছোট ভাই আবু সাইম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মৃত হানিফ সাভারের আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি এলাকার মাফি ইসলামের ছেলে। সে পেশায় প্রাইভেটকার চালক । মরহুম হানিফের পরিবারের সদস্যরা জানায়, বেশ কিছু দিন ধরে হানিফ শরীরে জ্বর অনুভব করেন। পরে জ্বরের লক্ষণ দেখে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এ সময় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শরীরের অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)তে পাঠানো হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেলে হানিফের মৃত্যু হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানায়, ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৫জন ফরিদপুরের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন এবং ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ৩ জন, আরোগ্য সদনে ৪জন ও ফরিদপুর ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে ৩ জন। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, বর্তমানে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে অবস্থান করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া মোট ৮৪৫ রোগীর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে অবস্থানকালীন অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৮৩ । গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ জনই ফরিদপুরে নিজ বাসা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এনামুল হক জানান, গত ২০ জুলাই থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফরিদপুরের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৪০৬ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৪৯জন। চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন ৮৪৭ জন। ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে ২০৩জনকে। এ পর্যন্ত মারা গেছে সাত জন। স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর থেকে জানায়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার বালিথুবা গ্রামের মরহুম হাসান আলী ভূইয়ার ছেলে কামাল উদ্দীন ভূইয়া ওরফে মেহেদী (২৮) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের গাজীপুর প্রতিনিধির ভাগ্নে এবং যমুনা গ্রুপের শ্রীপুরের এম কাবা কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক। মৃত্যুকালে তিনি মা ও দু’বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আলমগীর গাজী (১৪) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে খুলনার গাজী মেডিক্যাল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই প্রথম সাতক্ষীরায় কোন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেল। সে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার শ্রীকলা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র। মৃত আলমগীর গাজীর ভাই সুজন গাজী জানান, আলমগীর যশোরের একটি কওমিয়া মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ত। কয়েকদিন আগে সে জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ আবু শাহিন জানান, আলমগীর গাজী নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আনা হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠানো হয়।
×