ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ঢাবির কালো দিবস

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৩ আগস্ট ২০১৯

 আজ ঢাবির কালো দিবস

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস। ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্ট সেনা মদদপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংঘটিত ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদে এই দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এবারের কালো দিবসের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রী কালো ব্যাজ ধারণ এবং বেলা এগারোটায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। কালো দিবসের পটভূমি ॥ ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলা চলছিল। ওই খেলাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছাত্র ও সেখানে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পের সদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। খেলার মাঠেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় উপস্থিত সেনাসদস্যরা। এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সেনাসদস্যদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দাবি ওঠে ছাত্রদের কাছে সেনা সদস্যদের ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু সেনাবাহিনী তা মেনে নেয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ ওই ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। পরদিন ২১ আগস্ট রাস্তায় নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। পুরো ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। ২২ আগস্ট এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। সেদিন রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রিক্সাচালক আনোয়ার। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে। সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ২৩ আগস্ট রাতে ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ঢাবির আরও দুই শিক্ষকসহ ৫ ছাত্র নেতাকে গ্রেফতার করে সেনাসমর্থিত সরকার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনার ৬৬ দিন পর খুলে দেয়া হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নির্যাতনবিরোধী ব্যানারে মাঠে নামে আসে। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হতে থাকে। ছাত্রশিক্ষকদের মুক্তি আন্দোলনের কাছে হার মানে সেনাসমর্থিত সরকার। বাধ্য হয়ে গ্রেফতারকৃত ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি দেয়া হয়। পরের বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ২৩ আগস্টকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
×