ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা

অপপ্রচারে লিপ্ত দুশ’ রোহিঙ্গা নেতা ও কয়েক এনজিও

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৩ আগস্ট ২০১৯

 অপপ্রচারে লিপ্ত দুশ’ রোহিঙ্গা নেতা ও কয়েক এনজিও

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি ও উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত এ দফায়ও শুরু করা গেল না প্রত্যাবাসন কর্মসূচী। এর আগে গত বছর ১৫ নবেম্বর একই রকমের একটি প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের রাজি করানো সম্ভব না হওয়ার কারণে ভেস্তে যায়। ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, এত আধুনিক জীবনযাপনের সুযোগ ছেড়ে সহজে মিয়ানমারে ফিরে যাবে না রোহিঙ্গারা। সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসন শুরু করার লক্ষ্যে আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নিজ দেশে ফিরে গেলে সবদিকে রোহিঙ্গাদের মঙ্গল হবে বলে ধারণা দেয়া হয়। সহজভাবে বুঝানোর পরও রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি হয়নি। স্থানীয় সমাজপতিরা বলছেন, রোহিঙ্গারা পাঁচ দফা দাবি তুলে আপাতত প্রত্যাবাসন ঠেকিয়েছে। মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ওসব দাবি পূরণ হবেনা এটা সত্যি, যদি পূরণ হয়েও যায়, তারপর আরও দফায় দফায় দাবি জানাবে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পের বাইরে ও অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা অন্তত ২ শতাধিক রোহিঙ্গা নেতা এবং আশ্রয় ক্যাম্পে কয়েকটি এনজিওর সেবা কার্যক্রম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফিরে যাবেনা মিয়ানমারে। রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত দেশী-বিদেশী কয়েকটি চিহ্নিত এনজিও প্রত্যাবাসনবিরোধী যৌথ বিবৃতি দিয়ে রোহিঙ্গাদের আরও বেশি উস্কানি দিয়েছে। প্রথমবার (১৫ নবেম্বর/১৮) প্রত্যাবাসনের দিন তারিখ ভেস্তে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসনের শেষ প্রান্তে ওসব এনজিওর বিবৃতি এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। অতি উৎসাহী হয়ে ওইসব এনজিও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর খবরে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে দেশ-বিদেশে প্রচার করেছে। পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা (আরএসও জঙ্গী) দালান ফেলে চোখের ঘুম হারাম করে রাত কাটিয়েছে আশ্রয় শিবিরে। প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের করজোরে মিনতি করে বুঝিয়েছে, তালিকায় থাকা তোমরা মাত্র তিন সহস্রাধিক মানুষ, বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন হয়ে গেলে ক্যাম্পে থাকা লাখ লাখ মানুষের কপালে দুঃখ আসবে বলে বুঝিয়েছে রোহিঙ্গাদের। পাশাপাশি রাতের বেলায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা এসে প্রত্যাবাসনে রাজি হলে একগর্তে গণকবর দেয়া হবে বলে হুমকিও দেয়া হয়েছে তাদের। একদিকে উন্নত খাবার, পরিশ্রমবিহীন জীবনযাত্রা, ক্যাম্পে যখন-তখন সহজভাবে একাধিক বিয়ের সুযোগ, বেশি টাকায় এনজিওর চাকরি ও বিনা খরচে বিদেশে পাড়ি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসে আশার আলো দেখছে রোহিঙ্গারা। এজন্য তারা কখনও আশ্রয় শিবির ত্যাগ করে মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশী এনজিওগুলোতে ১২ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৪৫/৫৫ হাজার টাকা বেতনের নিয়মিত চাকরিরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫-৬ হাজারের মতো। সহজেই এদের দিয়ে ওরা মিয়ানমার ফেরত না যেতে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে উস্কানি ও প্ররোচিত করছে। চাকরিরত রোহিঙ্গাদের মাসিক বেতনের একটি নির্ধারিত অংশ তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনকে (আল-ইয়াকিন) দিতে হয় বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয় সমাজপতি ও জনপ্রতিনিধিরা বলেন, মানবিক কারণে দুইবছর আগে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তাদের বেলায় খুব বেশি দরদ দেখানো হচ্ছে বলেই রোহিঙ্গাদের স্পর্ধা বেড়ে গেছে। তারা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিল করার দুঃসাহস পেয়েছে। তাই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোন ধরনের নমনীয়তা না দেখিয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় যুব সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা ওপার থেকে এখনও ইয়াবার চালান এনে ক্যাম্পে জমা করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। রোহিঙ্গা যুবকরা আরএসও জঙ্গীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের প্রচলিত আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। স্থানীয়দের হেনস্থা করতে কথায় কথায় তেড়ে আসছে রোহিঙ্গারা। তারা আরও বলে, দুইবছর আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সময় তাদের দেহ ছিল কঙ্কালের ন্যায়। আর এখন ক্যাম্পে পুঁজিবিহীন উন্নতমানের খাবার খেয়ে সুঠাম দেহের অধিকারী বনে গেছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। বাংলাদেশী সিম ব্যবহার করে মুঠোফোনে ক্যাম্পে বসে বিশ্বের খবর নেয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা। প্রবাদ রয়েছে, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠেনা, তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে গেলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে বলে স্থানীয় যুব সমাজের পক্ষে দাবি জানানো হয়েছে। সচেতন মহল বলেন, মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় রোহিঙ্গারা খালে জাল ফেলে, দিনমজুরি কাজ ও কৃষিকাজ করে জীবনযাপন করেছে। বাংলাদেশে এসে শাহেনশাহ অবস্থায় উন্নতমানের মুঠোফোন ব্যবহার করে এবং কোন ধরনের পরিশ্রম না করে চলাচল করতে পারায় বাংলাদেশ ত্যাগ করতে চাচ্ছে না। উদ্বাস্তুদের শরণার্থী আইন অনুসারে পরিচালনা করা গেলে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা (আরএসও জঙ্গী) ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারবেনা। স্বার্থান্বেষী এনজিওগুলো অবৈধভাবে এনজিও ব্যুরোর অনুমোদনহীন সেবা প্রদান থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।
×