ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটনের বিকাশে সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার

পর্যটকদের স্বচ্ছন্দ ভ্রমণে ২৯ জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৩ আগস্ট ২০১৯

 পর্যটকদের স্বচ্ছন্দ ভ্রমণে ২৯ জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ

সমুদ্র হক ॥ অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী পর্যটকদের স্বচ্ছন্দ ভ্রমণে নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তাদের যানবাহন ও আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে ট্যুরিস্ট বান্ধব পুলিশিংয়ে পরিণত করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে দেশে প্রথম ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠিত হয়। পরের বছর (২০১৪) চৌকস মেধাদীপ্ত ৭শ’ পুলিশ সদস্য নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা এক হাজার ৪শ’ জন। ঢাকার বনশ্রীতে ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পুলিশ সুপার সরদার নুরুল আমিন জানালেন, পর্যটন স্পটের গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের ২৯ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি ভ্রমণে সহযোগিতা দিচ্ছে। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় ও প্রতœসম্পদ সমৃদ্ধ স্থানে বেড়ানোর প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে। তরুণরাও দল বেঁধে ভ্রমণে বের হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে নতুন দর্শনীয় স্থান খুঁজে বের করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই স্থানগুলোর স্থির ও ভিডিও চিত্র পোস্ট করে বাংলাদেশকে নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছে। এইসব বর্ণনা দেশে এবং প্রবাসী ও বিদেশীদের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। এ ছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশের নিজস্ব ওয়েব পেজে (ওয়েব সাইট) ভ্রমণ পিয়াসীদের নিরাপদে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের বার্তা দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। সীমিত লোকবল ও সীমিত সাধ্যের মধ্যেই ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। তিনি মনে করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগে প্রযুক্তি নির্ভর যানবাহন বাড়ানো দরকার। এমন একটি প্রস্তাব ওপর মহলে পাঠানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ বগুড়া জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর অলিভ মাহমুদ জানান, ২০ সদস্য নিয়ে বগুড়ার মহাস্থানগড় ও দর্শনীয় কয়েকটি স্থানে পর্যটক নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে। মহাস্থানগড়ে আসা পর্যটকদের থাকতে হয় বগুড়া নগরীতে। তবে মহাস্থানগড় পৌঁছাবার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আগে পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে আসন সংখ্যা কম। পর্যটকরা কোথায় কখন যাচ্ছে তা জানতে হোটেল কর্তৃপক্ষ, পর্যটক ও কখনও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়। টুরিস্ট পুলিশের সূত্র জানান, বগুড়াকে ট্যুরিস্ট পুলিশের বিভাগীয় অফিস করা হচ্ছে। রাজশাহী, রংপুরে আঞ্চলিক অফিস। এ ছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশের জোন অফিস ও সাব জোন অফিস গঠন করা হয়েছে। নাটোরসহ কয়েকটি জেলা সাব জোন অফিস। সাপ্তাহিক ছুটি (উইক এ্যান্ড), সরকারী ছুটি, বিভিন্ন দিবসের ছুটি, ঐচ্ছিক ছুটি ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও ঘুরে বেড়ানো লোকজনের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। ছুটি কাটাতে সঙ্গে থাকে পরিবার পরিজন, প্রিয়জন, বন্ধু বান্ধব। এসব ছুটির বাইরে বিনোদন ট্যুর যেকোন সময়ে ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ ঘর থেকে বের হন। পর্যটকরা প্রকৃতির নিসর্গ স্থানে ঘুরে বেড়ায়। যেমন সিলেটের বিছানাকান্দি ও রাতারগুলের কথা বছর তিনেক আগে কেউ জানত না। অপরিচিত ছিল চট্টগ্রামের মীরেরসরাইয়ের খইয়াছড়া, শ্রীমঙ্গলের হামহাম ঝরনা, বগুড়ার ভাসুবিহার, ভিমেরজাঙ্গাল, সারিয়াকান্দির যমুনার ঘাট, বান্দরবানের বগালেক, নীলগিরি, বোয়াংছড়ি, তিনাপ সাইতার, রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনা, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, জাদুকাঠা নদী, দিঘীনালার তৈদুছড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। দর্শনীয় এই স্থানগুলো সামাজিক মাধ্যমে উন্মোচিত হওয়ায় দেশ ও বিদেশের ভ্রমণ পিয়াসীরা নতুন স্থান খুঁজে পেয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি) জানায়, দেশের ৮শ’র বেশি স্থান পর্যটন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে ৪শ’টি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। তরুণরা নতুন যে দর্শনীয় স্থানগুলো খুঁজে বের করছে সেগুলোও পর্যটন স্পটে যুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য : বতর্মানে দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটক ১ কোটি ৬০ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। এই সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) তথ্য : বছরে বিদেশী পর্যটক আসেন গড়ে ৬ লাখ। চট্টগ্রাম ও কুয়াকাটায় বেশি পর্যটক যাচ্ছেন। ছুটি ও শীতের সময় অন্য স্থানে পর্যটকদের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যায়।
×