ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান একমাত্র টেস্ট

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন মুমিনুল

প্রকাশিত: ১২:২১, ২৩ আগস্ট ২০১৯

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর মাত্র ১৩দিন বাকি। এরপর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১৭ মাস পর টেস্ট খেলতে নামবে দল। যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপই এখন দলগুলোর সামনে বড় করে হাজির হচ্ছে। তাই নবেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলতে নামার আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টকে প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান আগে থেকেই হয়ে গেছেন মুমিনুল। বাংলাদেশ টেস্ট ১৭ মাস পর খেলবে বিধায় তারও আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলা দীর্ঘদিন পরই হবে। তবে খেলার বাইরে ছিলেন না মুমিনুল। সম্প্রতি ভারতের মিনি রঞ্জি ট্রফিতে খেলে এসেছেন। তাই দীর্ঘমেয়াদী খেলার মধ্যেই আছেন মুমিনুল। আর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে তো তিনি থাকবেনই। যদি ইনজুরি না হয় তাহলে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনটিতেও তিনি স্থায়ী ব্যাটসম্যানই। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টকে সামনে রেখে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে মুমিনুল জানান, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগে প্রস্তুতি হিসেবে একটা টেস্ট পাচ্ছি এটা সবার জন্য ভাল।’ সাদা-পোশাকে কখনই নিয়মিত খেলতে পারে না বাংলাদেশ। তবে এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থাকায় সেই ভাগ্য খুলবে। নিয়মিতই খেলা হবে। নবেম্বর থেকেই তা শুরু হয়ে যাবে। যা চলবে টানা দুই বছর। ৯টি দেশ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলবে। প্রতিটি দেশকে ছ’টি করে সিরিজ খেলতে হবে। লীগপর্বে হোম এ্যান্ড এ্যাওয়েভিত্তিকে খেলে যে দুটি দল পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থাকবে ২০২১ সালে সেই দুটি দল ইংল্যান্ডের লর্ডসে ফাইনাল খেলবে। বাংলাদেশও বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে। মুমিনুল এ নিয়ে বলেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যই ভাল হয়েছে। কারণ টেস্ট ক্রিকেটটাকে তেমন ফোকাস করা হয় না। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের জন্যই ভাল হয়েছে।’ এ্যাসেজে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়ে গেছে। টি২০ বিশ্বকাপের জন্য দলগুলো প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে টেস্ট নিয়েও বিশেষ ভাবনায় থাকতে হচ্ছে। এখানেও যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব থাকছে। মুমিনুল বলেন, ‘টেস্টে মানসিকভাবে অনেক শক্ত থাকতে হয়, শারীরিকভাবেও ফিট থাকতে হয়। আমার ব্যক্তিগতভাবে সমস্যা হবার কথা না। খেলার মধ্যেই আছি, কয়েকদিন আগেও ভারতে মিনি রঞ্জি ট্রফিতে খেলে এসেছি। খেলার মধ্যে থাকলে বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বসে থাকলে হয় না। অনুশীলন চালিয়ে যেতে হয় যে জায়গায় উন্নতি করা দরকার। সে জায়গায় কাজ করা প্রয়োজন। এ জন্য আমি বাড়তি অনুশীলন করি।’ বাড়তি অনুশীলন করা মানেই নিজেকে ফিট রাখা। মুমিনুল সেই কাজটি ভালভাবেই করেছেন। এখন সামনে সেই অনুশীলনের প্রভাব কতটা মিলে তা দেখা যাবে। চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট দিয়ে আবার বাংলাদেশ টেস্টে ফিরছে। সেই টেস্টে মুমিনুলের কাছ থেকে স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ কিছুর আশা আছে? মুমিনুল জানান, ‘ম্যাচ খেললে পারফর্ম করার সুযোগ বাড়বে আপনার। ভাল ফল করার সুযোগ থাকে, দলকে ভাল একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে যাওয়ারও সুযোগ থাকে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে আমার মনে হয়, এটা খুব ভাল একটি মঞ্চ আমাদের জন্য।’ রঙিন পোশাকে মুমিনুল নেই। তিনি টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানই হয়ে গেছেন। কিন্তু রঙিন পোশাকে কী খেলতে মন চায় না? মুমিনুল জানান, ‘টেস্ট ক্রিকেটের জন্য সবসময় বসে থাকলে হয় না। যেসব জায়গায় উন্নতি দরকার সেখানে উন্নতি করতে আপনাকে অনুশীলন সবসময়ই চালিয়ে যেতে হবে। এ কারণেই আমি বাড়তি অনুশীলন করি। আমার কাছে মনে হয় টেস্ট ক্রিকেটে যদি আমি খুব ভাল গড় নিয়ে যাই বা বিপিএলে ভাল অবস্থান নিয়ে যাই, যদি ভাল করতে পারি তাহলে ভাল একটা সুযোগ আছে।’ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ মোট ১৪টি টেস্ট খেলবে। ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোন টেস্ট খেলবে না বাংলাদেশ। ২০২১ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন খেলা নেই। তবে ২০২১ সালের জুনে ইংল্যান্ডের লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হওয়ার আগে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, অ¿েলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। তিনটি হোম ও তিনটি এ্যাওয়ে সিরিজ খেলবে। সাতটি নিজেদের মাটিতে, সাতটি দেশের বাইরে খেলবে বাংলাদেশ। এ বছর নবেম্বরে ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে দুটি, আগামী বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি, ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে দুটি, জুলাই-আগস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩টি, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২টি ও ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে ৩ টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের দুই বছর মেয়াদী টেস্ট বিশ্বকাপ খেলা শেষ হবে। দুই বছর ধরে নয় দল ২৭টি সিরিজে মোট ৭২টি ম্যাচ খেলবে। প্রত্যেক দল মুখোমুখি হবে ছয় প্রতিপক্ষের। লীগ পদ্ধতিতে হবে এ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০২১ সাল পর্যন্ত যে প্রতিপক্ষ থাকবে তাতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আবারও লীগ পদ্ধতিতে হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে দুই একটি প্রতিপক্ষ দল বদলাবে। আইসিসির টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের পয়েন্ট এবং অবস্থানও আলাদা থাকবে। বাংলাদেশ দল চার বা পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলার সুযোগ পায়নি। পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলার সুযোগ পাচ্ছে শুধু ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এই তিন দলের সঙ্গে শুধু চার টেস্টের একটি সিরিজ খেলার সুযোগ পাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ চারটি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও দুটি তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে নয় নম্বরে আছে বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির সুযোগ থাকছে। সেই সঙ্গে বেশি টেস্ট খেলারও সুযোগ থাকছে। নবেম্বর থেকে এই সুযোগ শুরু হবে। এর আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটি খেলবে বাংলাদেশ। আর এই টেস্টটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন মুমিনুল।
×