ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ২৩ আগস্ট ২০১৯

কবিতা

এলিজি শেখ আতাউর রহমান (ছোট খালার উদ্দেশে) ‘ঞযরং রং ঃযব ধিু ঃযব ড়িৎষফ বহফং’: ঞ.ঝ. ঊষরড়ঃ. না-পাওয়াই ‘অভ্যেসে’ দাঁড়িয়েছিলো-তাই না খালা?Ñ এÑকেমন জীবন?Ñসুখের না দুখের?Ñনাকি এসব অনুভূতিই মরেগিয়েছিলো অনেক অনেকদিনÑপ্রাপ্তির প্রতি বড় উদাসীন! ধূপের মতো পুড়েপুড়ে অপরকে দানকরে নিজে হয়েছিলে প্রয়োজনহীনÑ বড়কষ্ট খালা, কোনদিন পারবেনা কেউ শুধতে এই ঋণ! প্রবাদটা হলো এই: ‘কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কৈ!’ -এমন অমোঘ জীবনদর্শনই তুমি নিয়তির মতো আমরণ বয়ে গেছো- তাই, তোমাকে মহান করার শক্তি আমার কোই!! ** টুঙ্গিপাড়া দুলাল সরকার এখানে জন্মের স্রোত, মৃত্যুর অগ্নিগিরি সব পথ থেমে গিয়েছিল জানো? সকল বোধ কম্প ধরিত্রী, রুদ্ধ নিঃশ্বাস, মুক্ত আকাশ বহমান গতি, দিক নির্দেশনা মুক্তির ডাক... সব বর্ণমালা, জাতীয় পতাকা, ডানার উত্থান হারানোর শোক, চাষীর লাঙ্গল, গুটিধরা হাতের শক্ত পেশী,—-জানো এইখানে থেমে গিয়েছিল, কৃত সংকল্প, জলের উৎসব হাতে বোনা নবীন কিষানের পাও-স্বর এইখানে কিছুক্ষণ, জানো কিছুক্ষণ থেমে গিয়েছিল অপূর্ণ বাসনা, হাজার বছরের অগ্নিধ্বনি বাঙালীর পথ চাওয়া, স্বপ্নের স্বরলিপি বলো, পুনরুত্থান; থেমে যাওয়া নয় এতো ভোরেরই সংস্কার, লেখা পদাবলী। ** জনকের মুখ আশিক সালাম জনকের মুখ দেখে চিনেছি আমায় চিনেছি আকাশ আমি চিনেছি মৃত্তিকা চোখে তার বৃষ্টিধারা ‘নর্তকী আগুন’ চোখে তার জোছনার ধান বুকে তার গোলাপের গন্ধঢেউ পায়ে তার সরষে ফুলের নদী উত্তুঙ্গ আঙুলে তার মেঘমন্দ্র বজ্রের হুঙ্কার ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কণ্ঠে তার সাহসের বীজমন্ত্র ‘জয় বাংলা’ জনকের মুখ দেখে চিনেছি স্বদেশ চিনেছি ফাগুন আমি চিনেছি শ্রাবণ চোখে তার হেমন্তের নক্ষত্রের দ্যুতি চোখে তার মাতৃমুক্তি উজ্জ্বল উদ্ধার কণ্ঠে তার মাভৈ বাণী হাতে বরাভয় অলম্বুষ-পথে দৃপ্ত পায়ের আওয়াজ বুকে তার প্রশস্ত হরিৎ মানচিত্র ‘আমার সোনার বাংলা...’ ** সাথী হবো না নাসরীন নঈম আগুন যেমন ইচ্ছেমতো নিতে পারে নিজের আকার পানিও তাই। হৃদয় কি সে রকম হতে পারে যখন তখন অযথাই? স্বেচ্ছায় বেজে ওঠে সরোদ সেতার বেজে বেজে ফিরে আসে হারমোনিয়াম আপন নিয়মে ফুঁসে ওঠে মানুষ সাপের মতো ক্রুদ্ধফণায়। তোমাকে আঁকড়ে ধরা হাতটা ক্রমশঃ শিথিল হয়ে যাচ্ছে কেন? আমাকে বৃষ্টির জল হতে হবে পারবো না আর। চন্দন গাছ তুমি মুখ তুলে তাকাও দেখ ওরা দিন দিন কেমন নোংরা বিচ্ছিরি পথচারী হয়ে যাচ্ছে আমি আর ওদের সাথী হবো না। ** শ্রাবণ মেঘের দিন চঞ্চল শাহরিয়ার শ্রাবণ মেঘের দিনে তবু কারো শাড়ির আঁচল আমাকে দারুণ পিছুটানে। পিছু টেনে নিয়ে যায় দক্ষিণডিহির বর্ষার দুপুর, বয়রা কলেজ মোড় ডিলাক্স হোটেলে আড্ডা, অদিতির চোখ এড়িয়ে হঠাৎ চুমু খাওয়া ভোর। সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাতে গিয়ে কার কথা ভাবো শ্রাবণ মেঘের দিনে স্মৃতিতে ভাসিয়ে মন জানালার গ্রীলে এসে কেন উঁকি দাও এইসব আমি আর ভাবি না, ভাবি না। তবু বৃষ্টি শুরু“হয়। নীল শাড়ির গল্প শুনতে উদ্গ্রীব সাদিয়া, অদিতি আর দোলখোলা মোড়। নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে ভেজে একা একা কারো অভিমানী চোখ। হাজী মহসীন রোড এ খবর জানে না জানে না। ** বন্ধু শাহীন রেজা কালরাতে বালু নদীর ভেজা বাতাস আমাকে বিনীত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেছিল, প্রভু, আপনার বন্ধু কে? আমি ক্যাফে হাওয়াইর ঝুল বারান্দায় আরাম চেয়ারে শরীর ডুবিয়ে টুনা ফিশের ফ্রাই খেতে খেতে সামনের জলে আলো আর আঁধারীর খেলা দেখতে দেখতে বেশ আয়েশী ঢঙে বলেছিলাম, কেন রবীন্দ্রনাথ? তার অবিশ্বাসের হাল্কা হাসি আমার শরীর কাঁপিয়ে দিলে আমি একই সঙ্গে আরও চারটি নাম উচ্চারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, আরও শুনতে চাও, শুনে নাও, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন আর সৌমিত বসু। সে আমাকে নজলের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে আমি তার সঙ্গে যুক্ত করেছিলাম জীবনানন্দকেও। মুচকি হাসির অসহ্যতা আমাকে জ্বালিয়ে দিলে আমি অনেকটা গভীর হেসে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই উচ্চারণ করেছিলাম, কবি তো নিমিত্ত মাত্র, কবির বন্ধুত্ব সে তো কবিতার সঙ্গে। ভালবাসার সূত্রে গাঁথা কবির অন্তর। শুনতে শুনতে পাখা গুটিয়ে হঠাৎ হারিয়ে গেল সে পশ্চিমে এবং তারপর নেমে এলো অঝোর বর্ষা; আকাশ ভেঙ্গে। বালু নদীকে ছ্ুঁয়ে কখন যে জলের কণা ঢুকে গেল আমার পাঞ্জাবির ভেতর তা টেরই পেলাম না। ০৮.০৮.২০১৯ ** বঙ্গবন্ধু, তোমার জাগরণে বাবুল আনোয়ার তোমার জাগরণে জেগে আছে বাংলাদেশ। কল্লোলিত জলের নদী নিরবধি ছুঁয়ে যায় দিগন্তের প্রান্তর। পল্টনের সবুজ ঘাসের ডগায় ফুটে থাকে ইতিহাসের অনিবার্য অধ্যায় ৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় মহাকাব্য। রক্তের বেগবান ধারায় কথা বলে প্রিয় স্বাধীনতা, লাখো শহীদের মুখ। তোমার কণ্ঠের হিরণ¥য় আঁধারে ধ্বনিত হয় সাহসী মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস। কালের কণ্ঠস্বর হয়ে আছো তুমি আদিগন্ত সবুজে, অবারিত মাঠের ফসলে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল জুড়ে অনিন্দ্য অহংকারে বুকের উজ্জ্বল নিভাঁজে। তোমার দীপ্ত মুখের আদলে কথা বলে বাংলাদেশ, স্বপ্নের পথ দেখায় তোমার পথে পথ চলি শপথে, বৈভবে তোমার জাগরণে জেগে থাকে বাংলাদেশ। ** পোড়া সাধ এলিজা খাতুন আবহাওয়া যতই বৈরি হোক পাঁজরের হাড় ভাঙার মতো বিধ্বংসী নয়, বুকের খাঁচার এক একটি রড বহুদিন দুঃখে পড়ে থেকে জং ধরে ছিল বেশ তো! আগুন গোঁজা কয়লা হাতে কামারের মতো এলেই যদি, কেবল আগুনে ঝলসে, আঘাতে আঘাতে পোড়া-মুত্যুর স্বাদটুকুই উপহার দেবে! শীতল জলে ডুবিয়ে শস্য কেটে ঘরে তোলার মতো ধারালো করে তুলবে এমনই ভেবেছি তোমার হাপরের প্রত্যেক টানে বাতাস যতই তপ্ত হোক, শীতল রেখো কিছু জল নয়তো জং এ খসে গেলে মাটিতে মিশে গেলে ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে তোমার এটুকুও জানা হবে না- তোমার হাতেই হাতিয়ার হওয়ার তুমুল সাধ আমার! ** স্বাধীনতা শোক ও অন্যান্য ইয়াসিন আযীয ...সংগ্রাম মুক্তি স্বাধীনতা এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। মার্চ, উনিশ একাত্তর একটি বারুদ ভাষণ সাত কোটি হৃদয়ে আসন আকাশে বাতাসে আগুন... আগস্ট, ঊনিশ পঁচাত্তর একটি সূক্ষ্ম চক্রান্ত একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত সন্তানের হাতে পিতা খুন! বুনো শ্বাপদ-নির্লজ্জ পঙক্তি সেঁটে দিল ইতিহাসের গায়; লাল সবুজের লাগল কালি হানাদার, ঔদ্ধত্য সেনানি দাবায় রাখতে পারল নাÑ তিনিই হলেন শ্রেষ্ঠ বাঙালি। যার নেতৃত্বে স্বাধীন হলো দেশটা তাঁর খুনেই শোকের হলো মাসটা!
×