ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাজিদ আল ইসলাম

চিকিৎসায় বায়োসেন্সর প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 চিকিৎসায় বায়োসেন্সর প্রযুক্তি

বায়োসেন্সর হলো এক ধরনের এ্যানালাইটিক্যাল বা বিশ্লেষণমূলক ডিভাইস, যেটা রাসায়নিক কোন বস্তুকে ডিটেক্ট করতে ব্যবহৃত হয়। সংবেদনশীল জীববৈজ্ঞানিক বস্তু যেমন- কলা, অণুজীব, অঙ্গাণু, সেল রিসেপ্টর, অণুঘটক, এ্যান্টিবডি, নিউক্লিক এসিড ইত্যাদিকে পর্যবেক্ষণ করে বায়োসেন্সরের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভবপর হচ্ছে। বায়োসেন্সর রিডার ডিভাইসগুলো কোন ইলেকট্রনিকস বা সিগন্যাল প্রসেসরের সঙ্গে যুক্ত থাকে যা ব্যবহারকারীকে অত্যন্ত সহজ করে ফলাফল দেখায়। ভিন্ন ভিন্ন কাজের পরিবেশে কাজ করার উপযোগী করেই ডিভাইসগুলো বানানো হয়ে থাকে। বায়োসেন্সের ব্যবহার হচ্ছে কৃষিকাজে, পরিবেশে, চিকিৎসাবিজ্ঞান ইত্যাদিতে। এর মধ্য থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বায়োসেন্সরের ব্যবহার একনজরে দেখে নেয়া যাক- ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার ৩% ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন যেটা মৃত্যুর অন্যতম কারণ এবং এই হার ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস এমন এক ধরনের রোগ যেটা রক্তের চিনির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, বৃক্ষের অসারতা, মস্তিষ্কজনিত রোগ ইত্যাদি তৈরিতে সহায়তা করে। স্বাভাবিক অবস্থায়, উপস দেহে ব্লাড গ্লুকোজের পরিমাণ থাকে ৬.১ থেকে ৬.৯ মিলিমোল/লিটার। গ্লুকোজের পরিমাণ এর থেকে বেড়ে গেলেই মূলত ডায়াবেটিস হয়। তাহলে এখানে গ্লুকোজ আসলে বায়োমার্কারের কাজ করছে। আর বায়োসেন্সর দিয়ে সামান্য রক্ত গ্রহণ করে গ্লুকোজের পরিমাণ জানাটাই আসলে গ্লুকোজ বায়োসেন্সরের কাজ। এটা আবিষ্কৃত হয় ১৯৬২ সালে। বর্তমানে একে ছোট এবং সহজেই বহনযোগ্য আকারে বাজারজাত করার অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। হৃদকেন্দ্রিক রোগে বিশ্বব্যাপী মানব মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই হৃদ ও হৃদকেন্দ্রিক রোগগুলো। এই রোগগুলো হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণগুলো একটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। কার্ডিয়াক ট্রপোনিনের মাত্রা নির্ণয় করে হৃদ এবং হৃদকেন্দ্রিক রোগ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। কালেস্টেরল বায়োসেন্সরের মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। বায়োসেন্সরে সেন্সিং এলিমেন্ট হিসেবে ফ্রি কোলেস্টেরল, টোটাল কোলেস্টেরল, প্রধাণত কোলেস্টেরল অক্সিডেজ, কোলেস্টেরল এস্টারেজকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ডিভাইসের মাধ্যমে খুব সহজেই এখন কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে, হৃদ কিংবা হৃদকেন্দ্রিক রোগের চিকিৎসা তুলনামূলক সহজ হয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশ্বে ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু এখন স্বাভাবিক ঘটনা তে পরিণত হয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। একযুগ আগেও নারীদের সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার ছিল জরায়ুর ক্যান্সারে। ক্যান্সার হবার জিনগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণই বিদ্যমান। কেমিক্যাল, ফিজিক্যাল এবং বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল কারণে ক্যান্সার হতে পারে। যেমন- তেজষ্ক্রিয়, ক্যান্সার হবার উপাদানযুক্ত রাসায়নিক, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত কারণে পাকস্থলীর ক্যান্সার হতে পারে। ভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে হতে পারে জরায়ু ক্যান্সার। বিভিন্ন বিষাক্তদ্রব্য যেমন আলফাটক্সিনের জন্য যকৃত ক্যান্সার হতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ, কলা, অঙ্গ থেকে নিঃসৃত বায়োমার্কার শনাক্তের মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার কে ডিটেক্ট করতে পারি। বায়োসেন্সরের মাধ্যমে এসব ক্যান্সার ডিটেকশন সহজ হচ্ছে। প্রোটিওমিক এ্যানালাইসিসের মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় থেকে বায়োসেন্সরের মাধ্যমে ডিটেকশন অধিক কার্যকরী, অধিক ব্যবহার উপযোগী, কম ব্যয়ের বলে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও বায়োসেন্সরগুলোকে আরও উন্নত করার জায়গা রয়েছে তথাপি আমরা এটা বলতে পারি বায়োসেন্সরের ব্যবহার আমাদের জীবনকে অধিকতর সহজ এবং প্রতিনিয়ত নিরোগ রাখতে অধিকতর সহায়তা করছে।
×