ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

নওগাঁ জেলায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চির ঐতিহ্য নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় মাটির তৈরি ঘরবাড়ি। যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি বা ঘর গরিবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরবাড়ি। বৃষ্টি-বাদলে আর অযত্ন-অবহেলায় ভেঙ্গে যাচ্ছে এসব মাটির বাড়ি-ঘর।বেশি দিনের কথা নয়, বাংলার প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়ত এই মাটির বাড়ি-ঘর। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এই বাড়িঘর। এসব মাটির বাড়িঘরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা আর শীতকালে উষ্ণতায় ভরা। এই মাটির ঘরবাড়ি আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তে গ্রামবাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়িঘর প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই বাড়িঘর শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে গ্রামের অনেক বিত্তবানও এই মাটির দ্বিতল বাড়িঘর তৈরি করেন। জানা গেছে, সেই প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ি বা ঘরের প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে এই বাড়ি বা ঘর ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তবানরা এক সময় অনেক অর্থ ব্যয় করে মজবুত মাটির দ্বিতল বাড়িঘর তৈরি করতেন। যা এখনও কিছু কিছু গ্রামে চোখে পড়ে। এঁটেল বা আঠালো মাটির কাদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল বা ব্যাট তৈরি করা হয় ১০-১৫ ফুট উঁচু। দেয়ালে কাট বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া হয়। মাটির বাড়ি ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। সব ঘর বড় মাপের হয়না। গৃহিনীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির বাড়ি ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে গ্রামের মানুষরা এখন ইটের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বিবর্তনে ইটের দালানকোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়িঘর। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের আজাদ সরদার, ভবানীপুরের রমজান আলী, রসুলপুর গ্রামের মোবারক আলী, হাতিয়াপাড়া গ্রামের হাফিজুল, আয়াতালী ও আব্দুস সামাদসহ অনেকে জানান, মাটির তৈরি এই বাড়িঘর তারা পেয়েছেন পৈত্রিকভাবে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×