ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুস্থ নারীরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 দুস্থ নারীরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের নারী সমাজের দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলার অগণিত নারী তাদের অসামান্য অবদান, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় নারীরাও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে এসব ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রযাত্রা। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার রক্ষা, বাংলাদেশের সর্বস্তরের নারীদের সার্বিক উন্নয়ন এবং তাদের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করার জন্য তৎকালীন সমাজকল্যাণ অধিফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন। তারই প্রেক্ষিতে একটি মহিলা সংস্থার রূপরেখা প্রণীত হয়, যা ১৯৭৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মহিলা সংস্থা নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে সংস্থার কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ ও জোরদার করার জন্য ১৯৯১ সালের ৪ মে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। গৌরনদীতে মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে স্বল্প পরিসরে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে। ফলে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যক্রম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় গৌরনদী জাতীয় মহিলা সংস্থার উদ্যোগে দুস্থ নারীদের সেলাই ও এম্ব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ, গাভী ও ছাগল পালনসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। তথ্য আপা প্রকল্প : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থা বাস্তবায়ন করছে এ প্রকল্পটি। গৌরনদী উপজেলায় তথ্য আপা প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত নারীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে তাদের জীবনমান সহজ, সুন্দর এবং উন্নত করার জন্য প্রতিদিন গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাগুলো ঘুরে তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন তথ্য আপারা। গৌরনদী উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা শিল্পী বণিক জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জেন্ডার, আইনী সহায়তা এবং ব্যবসা বিষয়ক ছয়টি বিভাগে নারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আসছেন তথ্য আপা কর্মীরা। এ ছাড়াও নারী উদ্যোক্তা তৈরিতেও তথ্য আপারা কাজ করে যাচ্ছেন। গৌরনদী উপজেলা পরিষদ ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী জানান, গৌরনদীতে জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি দুই হাজার ৮১৫ নারীকে প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সেলাই ও এম্ব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১১শ’ ৯৯ নারীর মাঝে এক কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা দিয়ে গ্রামীণ অসহায় নারীরা বিভিন্ন কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এ ছাড়াও কয়েক হাজার নারীকে যৌতুক ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচাররোধ, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতন করে তোলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০১২ সালে গৌরনদীতে তথ্য আপা প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে ১৮ হাজার নারীদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। -খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×