ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় পুরো দমে চলছে কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 পদ্মায় পুরো  দমে চলছে কর্মযজ্ঞ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ হাল্কা বৃষ্টি। এর পর সোনা রোদ। চারদিকের প্রকৃতিতে স্বচ্ছভাব। শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। আর পদ্মায় হরেক রকমের যন্ত্রযানের বিচরণ। পদ্মার বুক চিরে বড় বড় জাহাজ যাচ্ছে। যাচ্ছে ফেরি, লঞ্চ-স্পীডবোট কত কি। কিন্তু এরই মাঝে পদ্মায় চলছে সেতু তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ। শুক্রবার বিকেলে মাওয়া ও আশপাশের এলাকায় শরতের এক বিশেষ রূপ লক্ষ্য করা গেছে পদ্মা তীরের জনপদগুলোতে। আর পদ্মায়ও তার প্রভাব পড়েছে। পানি কমতে শুরু করেছে, স্রোতের দাপট অপেক্ষাকৃত কম। আর তাই পদ্মা সেতুর সবচেয়ে খরাস্রোত এলাকা ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির কাজ আবারও শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এই দুই খুঁটির কংক্রিটিং চলছে এখন। দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানান, নানা কারণেই এই খুঁটি দুটির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। তাই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে দু’খুঁটি স্প্যান ওঠানোর উপযোগী করা যায় সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ চলছে। কারণ, সব খুঁটির পাইলিং সম্পন্ন হয়ে গেছে। আর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩১টি খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১টির দুটি হচ্ছে এই ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি। বাকি নয়টি খুঁটি (পিয়ার) হলো- ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২। এদিকে পানি হ্রাস পেতে থাকায় ৩২ নম্বর খুঁটিতে পাইল ক্যাপের কাজও পুরোদমে শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মায় সেতু প্রকল্পের কাজে বিশেষ গতি আনা হয়েছে। ঈদের ছুটির প্রভাবও এখানে তেমন পড়েনি। হরদম কাজ চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করার তাগিদে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই তোড়জোড় শুরু করেছে। বর্ষার পরের আমনের শুষ্ক মৌসুমকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। এব কারণে এবারের ঈদে ছুটি নেননি অধিকাংশ প্রকৌশলী ও শ্রমিক। সকল প্রতিকূলতা আর বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে সেতুর কাজ। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে প্রচ- স্রোত আর পলির কারণে কাজের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটেছিল। প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর ৬, ৭, ৮, ১০, ১১ নম্বর পিলারের অবস্থান পদ্মা নদীর মাঝখানে। প্রচ- স্রোতের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এই ৫টি পিলারের কাজ। এখন পানি কমতে শুরু করেছে, স্রোত হ্রাস পেয়েছে। ৬ ও ৭ ছাড়া বাকি তিনটি খুঁটির পাইলের ভেতর স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের কাজ চলছে। সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের অবস্থান বিআইডব্লিউটিএর নৌযান চলাচল নৌরুটে। পাইল ড্রাইভিং শেষ করে পরবর্তী ধাপের কাজ সুবিধাজনক সময়ে শুরু হবে। সেতুর ২৭ নম্বর পিলারে পাইল ক্যাপের জন্য যন্ত্রপাতি সেট করা হচ্ছে। সেতুর ২৯ ও ৩০ নম্বর পিলারের বটম প্লাগ শেষ হয়েছে এবং এখন পাইলগুলো কংক্রিটিং হচ্ছে। সেতুর ৩১ নম্বর খুঁটিরও পাইল ক্যাপের কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩১ নম্বর পিলারের পাইলের রড বাইন্ডিং চলছে ও ৩২ নম্বর পিলারের পাইলের পাইল ক্যাপের অর্ধেক কাজ হয়েছে। ভরা বর্ষার কারণে ৩২ নম্বর খুঁটির কাজ বন্ধ ছিল। এই ১১ খুঁটির পিলারের কাজ স¤পন্ন হতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। এদিকে বর্ষায় পলি পরে যাওয়ার কারণে এখন ড্রেজিং চলছে। স্প্যানবাহী ভাসমান ক্রেনবাহী বিশাল জাহাজটি যাতে খুঁিটর কাছে আসতে পারে সে লক্ষ্যে এই ড্রেজিং চলছে। ২০, ২১ ও ২২ নম্বর খুঁটির কাছে এই ড্রেজিং চলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাই ২০ ও ২১ নম্বর খুঁটিতে ১৫ তম স্প্যান বসতে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল এই প্রকৌশলী জানান, সেতুর ১৩ থেকে ২৫ পর্যন্ত একটানা ১৩টি খুঁটি সম্পন্ন রয়েছে। এই খুঁটি এলাকায় স্প্যানবাহী জাহাজ চলাচলের উপযোগী করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ড্রেজিং চলমান থাকবে। ২০২০ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে সময় বেঁধে দিয়েছে বিবিএ (বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ)।
×