ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সময়

কিছু এনজিওর কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন থমকে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৪ আগস্ট ২০১৯

  কিছু এনজিওর কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন  থমকে যাচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ একদিকে স্বার্থান্বেষী মহলগুলোর প্রত্যাবাসন বিরোধী ইন্ধন, অপরদিকে, নিজেদের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অহরহ হুমকির মুখ থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের নিজস্ব কোন মতামত ব্যক্ত করতে না পেরে শিখানো বুলিতেই কথা বলছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কারা তৎপর, কারা প্ল্যাকার্ড, লিফলেট সরবরাহ করছে, কারা ইংরেজীতে পোস্টার লিখে তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে এসবের বিরুদ্ধে জোরাল তদন্ত করে তা উদঘাটন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসে গেছে। তবে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের এদেশে থাকার প্ররোচণা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণের পর এ সংখ্যা এখন ১২ লাখে উন্নীত। এদের আশ্রয়ের জন্য সরকারের নির্দেশে এখন ৩২ শিবির চালু রয়েছে। আবার শিবির থেকে পালিয় হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর যারা পালিয়ে এসেছে তারা শরণার্থীর মর্যাদা পায়নি। এদেরকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা হিসেবেই সরকার চিহ্নিত করেছে। এদিকে, নাফ নদীতে জল অনেক গড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শনের ভয়াবহ জের টানতে হচ্ছে সরকারকে বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফের স্থায়ী বাসিন্দাদের। এসব রোহিঙ্গারা স্বভাবগত কারণে অন্ধকার জগতের প্রতি এদের আকর্ষণ বেশি। লেখাপড়ায় অনগ্রসর থাকার কারণে দিনে দিনে এরা আইন কানুন মেনে চলার তেমন ধার ধারে না। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এদেরকে বছরের পর বছর অবহেলায় রেখে এর ওপর বাড়তি নির্যাতন চালিয়ে হিংস্র মনোভাবে এরা গড়ে উঠেছে। এ জাতীয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়ে এখন প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একের পর এক যে দফা দিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব সৃষ্টি নয়। এসবের নেপথ্যে রয়েছে বেশকিছু এনজিও সংস্থা এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন। রোহিঙ্গারা এদেশে যত বেশি সময় থাকবে তত বেশি তাদেরই বহুমুখী লাভ বলে চিহ্নিত হয়ে আছে। দুই শতাধিক এনজিও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে দেশী বিদেশী অর্থায়নে। আর রোিহঙ্গাদের নামে যেসব সংগঠন রয়েছে এরা সকলেই বিদেশ থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে। এ সাহায্যের অর্থের বিনিময়ে এসবের প্রতিটির রয়েছে সন্ত্রাসী তৎপরতাও। যে তৎপরতাকে তারা রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থের বলে চিহ্নিত করে থাকে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এখন রীতিমতো ত্যক্তবিরক্ত। মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখতে সক্ষম হওয়ার পর তারা রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। অথচ, ইতোমধ্যে দু’দফায় তা ব্যর্থও হয়ে গেছে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে। কেন এ অনীহা-তাদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ পাঁচদফা দাবি উত্থাপন করেছে এর একটিও বাংলাদেশের জন্য নয়। এসব দাবি মানা না মানা সবই মিয়ানমারের ওপর বর্তায়। সঙ্গত কারণে বিভিন্ন মহলের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হচ্ছে, তাদের নাগরিকত্ব দেয়া, জমিজমা, ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেনা অভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সবই মিয়ানমার সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তারা নিজদেশে ফিরে গিয়ে তাদের এসব দাবি আদায়ের পক্ষে প্রয়োজনীয় যা করার করতে পারে। কিন্তু নিজ দেশে ফিরে না গিয়ে গো ধরে এদেশে থাকার অর্থবহ কোন কারণ নেই। মূলত এরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর শ্রেণীর হওয়ায় এদেরকে এনজিও সংস্থাগুলো ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ইতোমধ্যে জিম্মি করে ফেলেছে। ৬০টিরও বেশি এনজিও গত বুধবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে তাদের তৎপরতা দেখিয়েছে। আর রোহিঙ্গা সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে প্রত্যাবাসন বিরোধী হুমকি ধমকি প্রদর্শন করছে বহু আগে থেকে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে থাকা কাউকে কাউকে তারা হত্যা ও গুমও করেছে। ফলে বিশাল জনগোষ্ঠীর রোহিঙ্গারা যারা নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী তারা মুখ খুলতে পারছে না। গত মঙ্গল ও বুধবার ইউএনএইচসিআরের যেসব সদস্য প্রত্যাবসন প্রশ্নে ক্লিয়ারেন্সপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলেছে।
×