ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ-উল-আজহায় ১৩৫ দুর্ঘটনায় নিহত ১৮৫;###;নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের অভিমত

মোটরসাইকেল বিধ্বংসী বাহন

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৫ আগস্ট ২০১৯

মোটরসাইকেল বিধ্বংসী বাহন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের ঈদ-উল-আজহার ছুটিতে সারাদেশে ১৩৫ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৮৫ এবং আহত হয়েছেন ৩৫৫ জন। ১০ থেকে ১৮ আগস্টের মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপ সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। ঈদের পর নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি, যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ তিনটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে প্রতিটি সংগঠনের দুর্ঘটনার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের ঈদ-উল-আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা ঈদ-উল-ফিতরের তুলনায় বেশি। এবারের রোজার ঈদে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১২৭টি। এতে নিহত হন ১৮৪ এবং আহত হন ৩৩২ জন। বিভিন্ন পত্রিকা, পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ, স্বতন্ত্র অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সংবাদ সংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেলের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের ১২০টি শাখা সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমেও সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। শামীম আলম দীপ জানান, ঈদ-উল-ফিতরে সড়কপথে ঈদযাত্রা ছিল যতটা স্বস্তিদায়ক ঈদ-উল-আজহায় ভোগান্তি ছিল বেশি রকমের। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে মানুষকে ঈদযাত্রায় বেশি দুর্ভোগের কবলে পড়তে হয়েছে। লম্বা সময়জুড়ে সড়কে যানবাহনকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবে নৌপথে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াও ঈদযাত্রা ছিল অনেকটা স্বস্তির। নৌপথে বেশকিছু নতুন লঞ্চ বহরে যুক্ত হয়। এবারও ঈদের আগের দিন সদরঘাট টার্মিনালে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে আগামীতে নজর দিলে নৌপথ আরও যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠবে। রেলপথের বিষয়ে শামীম আলম দীপ বলেন, রেলপথে বেশ কয়েক জোড়া নতুন বগি সংযুক্ত হলেও রেলপথে সিডিউল বিপর্যয় টিকেট কালোবাজারির কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রিতে এবারও প্রযুক্তিগত সমস্যা ও সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে রেলের যাত্রীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, ঈদে উত্তরবঙ্গের সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে তিনটি সেতু (কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী) খুলে দেয়ায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যানজট হয়নি বললেই চলে এবং সড়ক দুর্ঘটনা এসব অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। তবে খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি বরং বেড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় ঈদ-উল-ফিতরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি থাকলেও এবার তা কমেছে বলে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলেও বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এখনও সড়কে মোটরসাইকেল বিধ্বংসী বাহন হয়ে উঠেছে চালকের খেয়ালিপনাসহ নানা কারণে। সড়কে যখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সমন্বিত উদ্যোগ চলছে তখন মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য এবং চালকদের বেপরোয়া হয়ে ওঠায় ভাবতে হবে সব মহলকে। বিশেষ করে অভিভাবকদের মোটরসাইকেল সন্তানের হাতে তুলে দেয়ার আগে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ভাবতে হবে, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলেরও ভাবতে হবে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এবার ৪০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ জন (চালক ও আরোহী)। ঈদ-উল-ফিতরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪৫ এবং নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৮। উবার ও পাঠাওয়ের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক রাইড শেয়ারিং করা বাহনগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে এমন তথ্য তুলে ধরে শামীম আলম বলেন, এ্যাপসের কলিংয়ে সাড়া না দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী বহনের প্রবণতা তাদের মাঝে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসব স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ এবং মনিটরিংয়ের আহ্বান জানাচ্ছি। নিসচা মনে করে, যদি এসব স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা না হয় তাহলে সিএনজিচালকদের মতো এরাও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এতে যাত্রীদের বিড়ম্বনাও বেড়ে যাবে। শামীম আলম দীপের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান, সংগঠনটির উপদেষ্টা ম. হামিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয়, যুগ্ম মহাসচিব বেলায়েত হোসেন খান নান্টু প্রমুখ। দুর্ঘটনার মূল কারণ ॥ বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালনা ও ওভারেটেকিং করার প্রবণতা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীন ভাবে যানবাহন চালানো, যানবাহনের সিডিউল বিপর্যয়, অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা, মহাসড়কে অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, নসিমন, করিমন ও স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন বা সার্ভিস রোড না থাকা, ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বা মনিটরিং-এর শিথিলতা, সড়কের বেহাল দশা, গাড়ি না পেয়ে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা, সড়কে নৈরাজ্য, নিয়ম না মানার প্রবণতা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে দ্রুতগতি, ট্রাফিক আইন না মানা আর একের অধিক যাত্রী নেয়া।
×