ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের পর বিয়ের জন্য চাপ ॥ আসমাকে শ্বাসরোধে হত্যা

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৫ আগস্ট ২০১৯

ধর্ষণের পর বিয়ের জন্য চাপ ॥ আসমাকে শ্বাসরোধে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ১৯ আগস্ট কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের একটি পরিত্যক্ত বগির বাথরুম থেকে উদ্ধারকৃত আসমাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে তারই প্রেমিক মারুফ হাসান বাঁধন। ধর্ষণের পর কান্নাকাটি করায় এবং বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় প্রেমিক শ্বাসরোধে আসমাকে হত্যা করে। হত্যার সময় আসমা কান্নাকাটি করে পায়ে ধরে জীবনভিক্ষা চেয়েছিল। কিন্তু প্রেমিক নামের এই নরপিশাচ আসমাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। খুনী প্রেমিক ঢাকার আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এমন লোমহর্ষক হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়েছে। ঘাতক প্রেমিককে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক। কমলাপুর রেলস্টেশনে বলাকা কমিউটার ট্রেনের একটি পরিত্যক্ত বগির বাথরুম থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় গত ১৯ আগস্ট আসমার (১৭) লাশ উদ্ধার করে জিআরপি থানা পুলিশ। পরদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আসমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস জানান, আসমাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আসমার গলায় শ্বাসরোধ করার দাগ আছে। ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরে আসমার পরিচয় মিলে। নিহত আসমার বাড়ি পঞ্চগড় সদর জেলার শিংপাড়া এলাকার কনপাড়া গ্রামে। পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক। তিনি পেশায় দিনমজুর। নিহত আসমা রাজ্জাকের দ্বিতীয় মেয়ে। স্থানীয় খাঁনবাহাদুর মোখলেছুর রহমান আলিম মাদ্রাসা থেকে এ বছর দাখিল পাস করেছিল আসমা। পরিবারের দাবি বাঁধন নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সূত্রধরে গত ১৮ আগস্ট আসমা নিখোঁজ হয়। বাঁধনও আসমার সঙ্গে ওই মাদ্রাসায় একসময় পড়াশোনা করত। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার ইউসুফ আলী জানান, মামলার প্রধান আসামি মারুফ হোসেন বাঁধনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাকে জিআরপি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শনিবার বাঁধনকে ঢাকার কমলাপুর জিআরপি থানা হেফাজতে নেয়া হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা জিআরপি থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আকবর আলী জনকণ্ঠকে জানান, বাঁধনকে (১৯) শনিবার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বাঁধন আসমা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পরে আদালত বাঁধনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বাঁধনের বরাত দিয়ে আরও জানান, বাঁধন আসমা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। বর্ণনা মোতাবেক আসমাদের বাড়ি থেকে বাঁধনের বাড়ি প্রায় দেড় মাইল দূরে। আসমা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাঁধনের সঙ্গে তার প্রেম হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেম চলছিল। এরই মধ্যে আসমা বহুবার বাঁধনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। বরাবরই বাঁধন বিয়ে করতে রাজি থাকার কথা জানিয়ে আসমাকে আশ্বস্ত করেছে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট আসমা ও বাঁধন পরস্পর দেখা করে। পরে তারা আবেগ তাড়িত হয়ে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে করে গভীর রাতে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নামে। রাতে তারা হোটেলে খাবার খায়। থাকার জন্য বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে যোগাযোগ করে। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের রাখেনি। এরপর তারা কমলাপুর রেলস্টেশনের ট্রেনের একটি পরিত্যক্ত বগিতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। সেখানে বাধন আসমাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করার পর আসমা কান্নাকাটি করতে থাকে। কান্নাকাটি করে আসমা বাঁধনকে বিয়ে করতে চাপ দেয়। এতে ভয় পেয়ে যায় বাঁধন। এ সময় বাঁধন আসমার গলায় থাকা ওড়না টান দিয়ে নিয়ে যায়। আসমা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেও চোখের পলকে বাঁধন আসমার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দেয়। ওড়না পেঁচিয়ে আসমাকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। আসমা এ সময় তাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা করে বাঁচার জন্য কাকুতি মিনতি করে। বাঁধনের পায়ে পড়ে হাতজোড় করে ক্ষমা করে দিতে বলে। কিন্তু পাষ- নরপিশাচ বাঁধন শ্বাসরোধে আসমাকে হত্যা করে। হত্যার পর বাঁধন আবার ট্রেনে করেই পঞ্চগড় চলে যায়।
×